নভেম্বর ২১: চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে এপেকের অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেন। এবারের এপেক তথা এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন-এর সম্মেলনের দিকে দৃষ্টি ছিল বিশ্বের ব্যবসায়ী মহলের। বিশেষ করে, চীনা প্রেসিডেন্টের ভাষণের দিকে নজর ছিল সবার। বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়ী মহলের কাছে চীন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য। কিন্তু কেন?
ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২০ সালে চীনের ৫৫টি শহর উচ্চ আয়ের শহরগুলোর মধ্যে থাকবে, যেগুলো চীনের জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ কভার করে। আর, ২০৩০ সালের মধ্যে, চীনে উচ্চ আয়ের শহরের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৯৩টিতে, যেগুলো জনসংখ্যার ৪৪ শতাংশ কভার করবে।
গত কয়েক বছরে, অনেক বিদেশী চীনা বাজারের সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে ও করছে। চীনের ব্যাপারে তারা আশাবাদী। উদাহরণস্বরূপ, ম্যাকডোনাল্ডের চীনের সিইও চাং চিয়া ইন বলেন, ‘গত ৩০ বছরে, চীনা বাজারের বিপুল সম্ভাবনা ম্যাকডোনাল্ডসকে অনন্য উন্নয়নের সুযোগ দিয়েছে।’ জনসন অ্যান্ড জনসনের গ্লোবাল সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুং ওয়েই ছুন মনে করেন, চীনের সামগ্রিক শিল্পব্যবস্থা খুবই সম্পূর্ণ এবং অর্থনীতির সম্ভাবনা বিশাল। লরেলের চীনা অংশের সিইও ফেই পো রুই বলেন, চীনের ব্যবসা-পরিবেশে তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং বাজারে আরও নতুনত্ব নিয়ে আসতে উত্সাহী হন।
পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে এবং পরিস্থিতির ক্রমশ পরিবর্তন ঘটছে। এ অবস্থায়, কেন চীন এখনও বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য অপরিহার্য স্থান? চীন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান থাকবে এক-তৃতীয়াংশ। সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ২০২৩ সালে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫.৪ শতাংশে উন্নীত করেছে। গোল্ডম্যান স্যাকস এবং ইউবিএস-এর মতো বিদেশী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও সম্প্রতি ২০২৪-এর জন্য চীনের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, চীনের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের চাকা ঘুরতে থাকবে।
বস্তুত, চীনের অর্থনীতি অত্যন্ত স্থিতিস্থাপক; এর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে; এবং কৌশলের জন্য বিস্তৃত জায়গাও রয়েছে। এর দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক মৌলিক বিষয়গুলো পরিবর্তিত হয়নি এবং পরিবর্তন হবেও না।
চীনের একটি অনন্য সুবিধা রয়েছে যা বিশ্ব কর্তৃক স্বীকৃত; আর সেটি হচ্ছে বিশাল ও সম্ভাবনাময় বাজার। চীনের জনসংখ্যা ১৪০ কোটিরও বেশি, যা বিদ্যমান উন্নত দেশগুলোর সম্মিলিত জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। একটি ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে, আগামী ১৫ বছরে চীনে মধ্যম আয়ের মানুষের সংখ্যা ৪০ কোটি থেকে ৮০ কোটিতে উন্নীত হবে। মার্কিন ব্ল্যাকরক ফান্ডের জেনারেল ম্যানেজার চাং ছি বলেন, চীনা বাজার শুধুমাত্র উন্নত ও স্থিতিশীলই নয়, বরং এর দ্রুত বৃদ্ধির সম্ভাবনাও রয়েছে। চীনা বাজার অনন্য এবং বিশ্বের দুর্লভ সম্পদ।
চলতি বছর চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ কার্যক্রম শুরুর ৪৫তম বার্ষিকী এবং এপেকের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক শুরুর ৩০তম বার্ষিকী। চীনের শীর্ষ দশটি ব্যবসায়িক অংশীদারের মধ্যে আটটি এপেকের সদস্য। এবারের এপেকের সম্মেলনে চীন বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষাব্যবস্থা উন্নত করা, বিদেশী বিনিয়োগ অ্যাক্সেসের জন্য নেতিবাচক তালিকা আরও কমিয়ে আনা, এবং বিদেশী বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত উদ্যোগগুলোর ইতিবাচক পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে। এটি আবারও দেখায় যে, “একটি বাজার-ভিত্তিক, আইন-ভিত্তিক, আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য চীনের সংকল্প পরিবর্তিত হবে না এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বৈষম্যহীন উচ্চ-মানের পরিষেবা পাবে।” বলাবাহুল্য, চীন বিদেশীদের জন্য নিজেকে আরও উন্মুক্ত করবে বলে বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আশ্বস্ত হতে পারে। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং বিশ্বাস করেন, শক্তিশালী ও বন্ধুত্বপূর্ণ চীন এতদঞ্চলে তথা বিশ্বে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে যাবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)