‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৪৫
2023-11-21 16:53:22

‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৪৫

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে    

১। ঘুরে আসুন চীনের পরিবেশবান্ধব শহর থেকে

২। পর্যটক আকৃষ্ট করছে চীনের কুইচৌ প্রদেশ

৩। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ মেলায় ভিড় করছে দর্শনার্থীরা

৪। পর্যটক টানছে চীনের বাঁশ রাস্তা

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।    

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৪৫তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।     

১। ঘুরে আসুন চীনের পরিবেশবান্ধব শহর থেকে

বিস্তৃত জায়গাজুড়ে সবুজের হাতছানি। গাছ-গাছালির মাঝে হাসছে বিস্তৃত জলরাশি। চারদিকে সবুজে সবুজময়। পরিবেশবান্ধব এই শহরের নাম থিয়ানচিন ইকো সিটি।

১১ মিলিয়ন বর্গমিটারের এই শহরে বাস করে লক্ষাধিক স্থায়ী বাসিন্দা। চীন ও সিঙ্গাপুরের যৌথ উদ্যোগে করা হয়েছে এই পরিবেশবান্ধব শহর। তবে প্রচলিত শহরের মতো নয় এর পরিবেশ। বরং মানুষ ও প্রকৃতির মেলবন্ধনে তৈরি করা এই ইকো সিটি। আবার বসবাসের জন্য আছে সকল আধুনিক সুযোগ সুবিধা।

 

 

 

শিশুদের খেলার জন্য আছে বিশাল মাঠ। স্পিড বোটে ঘুরে বেড়ানো যায় লেকে, যখন খুশি। বিভিন্ন রকম পশু পাখির বিচরণের জন্য আছে আলাদা জায়গা। ফলে শিশুদের জন্য এক আকর্ষণীয় জায়গা এটি।

 

 

সকাল-বিকালে মনের আনন্দে হেঁটে বেড়ানোর জন্য আছে ওয়াকওয়ে। পাশাপাশি একটু বসে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য আছে বিভিন্ন জায়গায় বসার আয়োজন।

উপকূলবর্তী শহর হওয়ায় এখানকার মাটি ও পানিতে ছিলো লবণাক্ততার আধিক্য। সেই লবণাক্ততা ও দূর্গন্ধ-ময়লা মাটি ও পানি পরিশোধন করে ফিরিয়ে আনা হয়েছে পরিবেশের ভারসাম্য।

 

 

 

 

পরিবেশ সুরক্ষা, সম্পদ সংরক্ষণ ও একটি সুন্দর সমাজ গঠনের লক্ষ্য নিয়ে শুরু করা হয় এই নগরী গড়ে তোলার কাজ। ২০০৮ সালে উদ্বোধন করা হয় এই প্রকল্পের।

 

 

আধুনিকতার ছোঁয়ায় গাছ কেটে স্থাপনা তৈরির নজির শুরু হয়েছে বেশ আগে থেকে। অথচ সবুজ থাকলেই টিকবে বিশ্ব। বনায়ন উজাড় করে যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় নতুন নতুন ভবন নির্মাণ হচ্ছে সেখানে এই সবুজময় শহর দিচ্ছে পরিবেশবান্ধব শহরের বার্তা।

 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- সাজিদ রাজু

 

২। পর্যটক আকৃষ্ট করছে চীনের কুইচৌ প্রদেশ

চীনের কুইচোও প্রদেশ। ছিননান পুই ও মিয়াও স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচার। এখানে বিভিন্ন  জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বাস। এখানে পাই খু ইয়াও নামে ইয়াও জাতির মানুষের একটি সম্প্রদায় বাস করে। ইয়াও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের গ্রামে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি দেখতে আসেন অনেক পর্যটক। ইয়াও জাতির লোকেরা তাদের সংস্কৃতি দেখতে আসা পর্যটকদের সাদর অভ্যর্থনা জানান। এখানে ইয়াও এথনিক রীতিতে কাপড় রং করা হচ্ছে এমব্রয়ডারি করা হচ্ছে। 

ইয়াওশান প্রাচীন গ্রামের পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার ওয়াং হোংপো বলেন, এই রাস্তাটা একটা বিভাজন রেখার মতো। আপনি যত ভিতরে যাবেন দেখবেন যে নৃগোষ্ঠীর মানুষদের ৮০ভাগ ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো ভালোভাবেই  সংরক্ষিত আছে। এখানে আমরা স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা ধরে রাখার জন্য  উৎসাহ দেই । লোকজ ঐতিহ্যের কারখানাগুলোর সামগ্রী কেনাবেচায় আমরা সহায়তা করি। এগুলো তাদের সংস্কৃতি রক্ষার পাশাপাশি আয়ও বাড়াচ্ছে।

প্রাচীন গ্রাম ইয়াওশান। চার প্রজন্ম ধরে ইয়াও জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এখানে বাস করছেন। ইউনেসকো এই গ্রামের এথনিক সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই গ্রামের বাড়িঘরে ঐতিহ্যবাহী নির্মাণ শৈলী এবং ইয়াও জাতির কাপড় রং করার কৌশল নিজস্ব বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। এগুলো দেখতে আসেন পর্যটকরা। গ্রামের বাসিন্দারা পর্যটকদের সাদরে অভ্যর্থনা জানান। স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে এখানে পর্যটকদের জন্য নানা রকম সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন খালি জমিতে গেস্ট হাউজ গড়ে তোলা। বাসিন্দারা হোম স্টে গড়েছেন। এসবের মাধ্যমে, এথনিক সংস্কৃতি যেমন রক্ষা পাচ্ছে তেমনি গ্রামবাসীদের আয়ও বাড়ছে।

২০০৬ সালে কাপড় রং করার কৌশল চীনের জাতীয় অবৈষয়য়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

সানতু শুই স্বায়ত্তশাসিত কাউন্টির একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হলো এমব্রয়ডারি কারুশিল্প। এর নাম মাওয়েই সিউ। ঘোড়ার চুল দিয়ে এই এমব্রয়ডারি করা হয়। এই কারুশিল্প এবং শুই ভাষার ক্যালিগ্রাফি জাতীয় অবৈষয়িক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার একটি অভিজ্ঞতা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এখানে এথনিক সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন আগ্রহীরা।

সানতু শুই কাউন্টির অভিজ্ঞতা কেন্দ্রের সহযোগী গবেষক পান ইয়াও বলেন, “এই প্লাটফর্ম সেট আপ করার পর আমরা এখন বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছি। যেমন ঘোড়ার-চুল এমব্রয়ডারি থেকে হস্তশিল্পজাত পণ্য তৈরি করে তা বিক্রির ব্যস্থা করা। এরফলে কারুশিল্পীদের আয় বাড়বে এবং এই শিল্পের সংরক্ষণ ও প্রচার হবে”।

এথনিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও বিকাশের মাধ্যমে এর জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। পর্যটকরাও আসছেন এগুলোর আকর্ষণে। ফলে পুরো এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফিরিন মিম

টুকরো খবর

·       আন্তর্জাতিক ভ্রমণ মেলায় ভিড় করছে দর্শনার্থীরা

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল চীন আন্তর্জাতিক ভ্রমণ মেলা। এবারের মেলায় প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “নিহাও চীন” যার বাংলা অর্থ হ্যালো চায়না।

তিনব্যাপী এ মেলা যৌথভাবে আয়োজন করে চীনের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল প্রশাসন এবং ইউনানের প্রাদেশিক সরকার।

আয়োজকরা জানান, প্রায় ৯০হাজার বর্গ মিটার জায়গাজুড়ে চলে এবারের প্রদর্শনী।    এছাড়া ছিল ছয়টি বিশেষ প্রদর্শনী এলাকা, যা পর্যটন প্রচার সংস্থা, সংশ্লিষ্ট উদ্যোগ এবং ৭০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ৮০০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ট্রাভেল এজেন্টদের আকৃষ্ট করে৷ 

 

·       পর্যটক টানছে চীনের বাঁশ রাস্তা

 

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে চীনের শানসি প্রদেশের সিয়ানের একটি বাঁশের রাস্তা।

 

 

১০০ মিটার এই দীর্ঘ এই রাস্তাটির দু’ধারে হাজারো বাঁশ গাছ। আর দুধারের বাঁশগুলো এমনভাবে মিলিত হয়েছে ,দেখতে অনেকটা কুঁড়েঘরের মতো লাগে।

 

দীর্ঘ বাঁশের এই রাস্তাটি শহরের একটি আবাসিক সম্প্রদায়ের নিজেদের তৈরি করা রাস্তা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর প্রতিদিনই এখানে ভিড় করছে নানা বয়সী পর্যটক।

 

হিমেল বাতাসে কিছু সময় অতিবাহিত করার পাশাপাশি বাঁশের সাথে ছবি তুলছেন অনেকেই।

 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- মাহমুদ হাশিম 

 

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী