চীনা বাজারের দরজা খুলতে চায় ব্রাজিলের বুটিক কফি প্রতিষ্ঠান
2023-11-20 16:24:58

দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিলের বারিনাস নামের একটি খামারের মালিক থিয়াগো আলভেস। তিনি বেলো হরিজন্টে আন্তর্জাতিক কফি সপ্তাহ প্রতিযোগিতায় বেশ মনোযোগ দিয়েছেন। এই প্রতিযোগিতায় ভালো ফল অর্জন  চীনের বাজারে তার পণ্যের দরজা খুলে দিতে পারে এমন প্রত্যাশা রয়েছে তার।

বারিনাস খামারের ইতিহাস দুশো বছরের। এখানে ১৯৫০ সাল থেকে কফি চাষ শুরু হয়। খামারটি শুরুর দিকে প্রচুর পরিমাণে কফিবিন উৎপাদন করতো। এখন তারা উচ্চমানের বিশেষ কফি উৎপাদনে মন দিয়েছে।

খামারে প্রতি দু’লাইন কফি গাছের মাঝখানে অন্য জাতের কম বর্ধনশীল উদ্ভিদ চাষ করা হয়। মাটি ও জল সংরক্ষণ করার পাশাপাশি উদ্ভিদের ফুল ও কফি ফুল থেকে মৌমাছির মাধ্যমে ক্রস পরাগায়নের ফলে  বিশেষ স্বাদের কফি পাওয়া যায়।

এছাড়া খামারে আঙুর, আখ, মৌমাছি চাষ ও গরু পালনের মাধ্যমে ছোট আকারে জীববৈচিত্র্যময় পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে। কফিবিন শুকানোর জায়গায় সোলার প্যানেল আছে। ফলে সৌরশক্তি দিয়েই শুকানোর কাজ চলে। বর্তমানে পুরো খামারের বিদ্যুত সরবরাহ করা হয় সৌরপ্যানেলের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুতে।  ফলে খামারটি বিদ্যুতে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। 

থিয়াগো বলেন, খামারটি নিম্ন-কার্বন উৎপাদনের পথ বেছে নিয়েছে। এটি প্রাকৃতিক এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন।। এর মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন হবে। গ্রাহকরাও আজকাল পরিবেশবান্ধব পণ্য বেশি পছন্দ করেন।

বারিনাস খামার থেকে ২শ’ কিলোমিটার দূরে বারবারা খামার। বারবারা খামারের কফি চাষ করার ইতিহাস এখনও দশ বছর হয়নি। এর মালিক জুলিয়ানা মেলো। তার টিম ব্রাজিলে বেশ কয়েকবার পুরস্কার জয় করেছে। তিনি মনে করেন টেকসই উন্নয়নের পথে চলার ফলেই খামারের উন্নতি হচ্ছে।

বারবারা খামারে সব কফি গাছের নিচে সেচ পাইপের সারি আছে। প্রয়োজন অনুসারে পানি সরবরাহ করা হয়। প্রত্যেক কফি ক্ষেত্রের জন্য পর্যবেক্ষণ যন্ত্র আছে, যার মাধ্যমে  সঠিক সময়ে পর্যবেক্ষণ করা যায়। সাধারণত বর্ষাকালে সেচের দরকার নেই। শুকনো মৌসুমে পানির চাহিদা অনুসারে সেচকাজ করা হয়।

জুলিয়ানা বলেন, আমরা প্রাকৃতিক ব্যবস্থা রক্ষা করার ওপর মনোযোগ দেই। টেকসই ব্যবস্থা, উচ্চমান এবং খাদ্য নিরাপত্তা হচ্ছে আমাদের পণ্যের তিনটি স্তম্ভ।

বারিনাস খামারের মতো বারবারা খামারেও কফি গাছের মাঝখানে অন্যান্য উদ্ভিদ চাষ করা হয়। তাছাড়া খামারটি  কাছাকাছি অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করছে।  বৈজ্ঞানিক গবেষণার কর্মীদের কাজে অংশ নিতে চুক্তিবদ্ধ করছে। কয়েক বছর ধরে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের  মাধ্যমে খামারের আয় যেমন বেড়েছে তেমনি পরিবেশও উন্নত হয়েছে।

বারবারা খামারে চীনা ভাষায় ব্রোশিয়ার লেখা আছে।  তাদের ওয়েব সাইটেও চীনা ভাষায় লেখা রয়েছে।

ব্রাজিলিয়ান ফেডারেশন অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড লাইভস্টক-এর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক সামুই মরি বুঝিয়ে বলেন যে, তার সংস্থা যথাক্রমে শাংহাই, দুবাই ও সিঙ্গাপুরে তিনটি আন্তর্জাতিক কার্যালয় স্থাপন করেছে। ব্রাজিল আশা করে, রপ্তানিকৃত পণ্যে বৈচিত্র্য থাকবে। রপ্তানির স্থানও বিভিন্ন হবে।  তিনি বলেন, চলতি বছর আমরা কফি উত্পাদনকারীসহ ১২টি কৃষি পণ্য উত্পাদনকারীদের সংগঠিত করেছি। শাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা বা সিআইআইই-এ অংশ নিয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করেছি।

ব্রাজিলের বিশেষ বা বুটিক কফির চীনা বাজারে প্রবেশ নিয়ে ফেডারেশন অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড লাইভস্টক-এর বড় প্রত্যাশা রয়েছে। মরি বলেন, চীন একটি বিরাট বাজার। পাশাপাশি এই বাজারের চাহিদাও বিপুল। সুতরাং আমরা উত্পাদনকারীদের প্রতি দাবি জানাই যে, তারা যেন  নিজেদের পণ্য প্যাকেজিং ও ব্যবস্থাপনা করার পাশাপাশি চীনা মানুষের চাহিদাকে মাথায় রেখেও পণ্য উৎপাদন করেন। এর ফলে চীনা গ্রাহকদের রুচি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

প্রেমা/শান্তা