আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আকাশ...
বন্ধুরা, চীনে এখন ফসল তোলার সময়। অনেক ধরনের শস্য সংগ্রহে ব্যস্ত চীনের কৃষকরা। এ সময় বাংলাদেশের গণমাধ্যমের একদল সাংবাদিক চীনের ইনার মঙ্গোলিয়া সফরে আসেন। তারা চীনে অনেক গ্রামবাসীদের সাক্ষাতকার নেন। আমরা আজ তাঁদের সাক্ষাতকারের মাধ্যমে তাদের সাথে একযোগে ইনার মঙ্গোলিয়ার গ্রামাঞ্চল ঘুরে দেখব, কেমন?
সাক্ষাতকার:
প্রথমে আপনার পরিচয় দিন।
আমি আমাদের সি আন গ্রামের নারী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান। আমি এ সমবায় সমিতির প্রধান। এ সমবায় সমিতির নাম- ‘চিন ছাও’ খড়ের হস্তশিল্প সমবায় সমিতি।
আপনি খড়ের হস্তশিল্প তৈরির এ প্রযুক্তি শেখার পর এ সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছেন? নাকি প্রথমে সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করে তারপর খড়ের হস্তশিল্প তৈরির প্রযুক্তি শিখেছেন?
আমি প্রথমে সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছি। ২০১৬ সালে এ সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন আমরা বনভূমিতে অর্গানিক বা জৈব পদ্ধতিতে মুরগী লালনপালন করতাম। পাহাড়ে লালনপালন করার মুরগীর ডিম ভাল দাম বিক্রি করার জন্য, আমরা কিছু হাতে তৈরি খড়ের ঝুড়ি বানাই। ডিমগুলোকে খড়ের ঝুড়িতে রেখে বিক্রি করি। ২০১৮ সালে আমি গ্রামের নারী ফেডারেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করি। তখন আমি আবিষ্কার করি যে, আমার দায়িত্ব আরো বেড়ে গেছে। এজন্য আমাকে আমাদের গ্রামের নারীদের নিয়ে আরো বেশি কাজ করতে হয়। এরপর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে এ প্রযুক্তি শেখানো হয়। ধীরে ধীরে আমাদের সমবায় সমিতির সদস্যসংখ্যা বাড়তে থাকে।
অর্থাৎ, ২০১৮ সালে আপনাদের সমবায় সমিতির কাঠামোতে স্থানীয় নারীরা খড়ের হস্তশিল্প তৈরি করতে শুর করেন। দেখা যায়, এ কাজে কিছু পণ্য ও কিছু মানুষ পাওয়া গেছে, তাইতো?
জ্বি। ২০১৮ সালে আমি ও আমাদের গামের নারীরা এবং কিছু বয়স্ক মানুষ একযোগে খড়ের হস্তশিল্প উত্পাদন শুরু করলাম। আমাদের পণ্য কেনার অর্ডারও ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে।
তাহলে প্রথমে আপনারা কিভাবে খড় দিয়ে বানানোর পদ্ধতি শিখেছেন? অর্থাত্ কিভাবে ভুট্টার খড় দিয়ে সামগ্রী বানানোর বুদ্ধি পেয়েছেন?
আসলে প্রথমে আমরা খড়ের হস্তশিল্প তৈরি করতে ভুট্টার খড় ব্যবহার করেনি। শুরুতে আমরা বাজরা’র খড় ব্যবহার করেছিলাম। আমার বাবা আমাকে এটা শিখিয়েছেন। কিন্তু বাজরা’র খড় অনেক শক্ত। এসব হাতে ব্যবহার করার সময় হাত ক্ষতবিক্ষত হয়। তাই আমি ভাবলাম, আমি সবাইকে নিয়ে আয় বাড়াতে চাই, এটাই আমার লক্ষ্য, কাউকে কষ্ট দেয়া আমার লক্ষ্য না। এজন্য ইন্টারনেটে কাঁচামাল খুঁজতে শুরু করি। অবশেষে ভুট্টার খড় ব্যবহার করার বুদ্ধি পাই। আমাদের এ অঞ্চলে ভুট্টা হচ্ছে অন্যতম প্রধান ফসল। সবখানেই এই খড় পাওয়া যায়। আমি প্রথমে ভুট্টার খড় নিয়ে নিজ চর্চা করলাম। চর্চা করতে করতে প্রযুক্তি আয়ত্ত করলাম। এরপর সবাইকে শিখাতে শুরু করলাম।
থমে আপনারা কিভাবে পণ্য কেনার অর্ডার পেলেন? বর্তমানে বিক্রির পরিমাণ কেমন? আপনাদের উত্পাদনের পরিমাণ কি রকম?
প্রথমে আমরা খড় দিয়ে বোনা ঝুড়ি তৈরির প্রযুক্তি শিখলাম এবং তা তৈরি করলাম। এরপর মুরগির ডিম এর ভেতরে রেখে বিক্রি করার চেষ্টা করলাম। তখন আমরা কিছু ছবি তুললাম এবং উইচ্যাটে পোস্ট করলাম । অনেকে ছবি দেখার পর জানতে চাইলো- এটা কি? আমি উত্তর দিলাম, এটা হল ‘খড় দিয়ে বোনা ডিমের ঝুড়ি’। এখন সবার স্মৃতিবেদনা রয়েছে, তাঁরা এ ডিম দেখে বুঝতে পেরেছেন যে, এটা হলো একেবারে আমাদের গ্রামের জৈবিক ডিম। তা ছাড়া, খড় দিয়ে বোনা ঝুড়িও সম্পূর্ণ হাতে তৈরি। ডিম ও ঝুড়ি- উভয়ই একেবারে প্রাকৃতিক পণ্য! এভাবেই আমাদের বিক্রি ক্রমশ বাড়তে থাকে। এরপর আমি সবাইকে নিয়ে খড় দিয়ে ঝুড়ি তৈরি করা শুরু করি। যার ভেতরে পরিবারের উত্পদন করা ডিম রেখে বিক্রি করতে শুরু করি।
তাহলে প্রথমে আপনারা ডিম ও ঝুড়ি একযোগে বিক্রি করেছেন? নাকি শুধু ঝুড়ি বিক্রি করলেন?
ডিম ও ঝুড়ি একসঙ্গে বিক্রি করেছিলাম।
তাহলে এখন কি অবস্থা?
এখন ঝুড়ি বিক্রির অবস্থা তুলনামূলক ভাল ।
তাহলে এখন ডিম ও ঝুড়ি একত্রে বিক্রি করা দরকার নেই, তাইতো?
হ্যাঁ। আমরা এখন শুধু এ ধরনের ঝুড়ি তৈরি করছি না; বরং, হস্তশিল্পসহ নানা পণ্যও আমরা তৈরি করছি। গ্রাহকরা এতে অনেক ধরণের জিনিস রাখতে পারবেন, শুধু ডিম-ই নয়।
এখন আপনাদের সমবায় সমিতির সদস্য কতজন? বিগত বছরগুলোতে কতজন মানুষ আপনাদের সমবায় সমিতিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং প্রযুক্তি শেখার পর তাদের জীবন উন্নত হয়েছে?
বর্তমানে আমাদের সমবায় সমিতির সদস্য ৪৬জন। তাঁরা যে কোনো সময় কাজ করতে পারেন। এ ছাড়া কেউ কেউ খণ্ডকালীণ কাজ করেন। আমরা এ অঞ্চলের সব যায়গায় গিয়ে প্রশিক্ষণ দেই। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের মধ্যে যারা ভাল করতে পারেন, তাদেরকে আমরা বাছাই করি। তারা আমাদের জন্য খণ্ডকালীন কাজ করেন। তাদের অন্যান্য চাকরি আছে। যখন তারা সময় পান, তখন তারা আমাদের জন্য কাজ করতে পারেন এবং টাকা উপার্জন করেন। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমরা এ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে তিন হাজারেরও বেশি মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। যারা আমাদের সমবায় সমিতিতে অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের প্রতি বছর কমপক্ষে তিন হাজার ইউয়ান থেকে সর্বোচ্চ দশ হাজার ইউয়ান আয় বেড়েছে।
এখন আপনাদের প্রধান পণ্যগুলো কি কি?
আমি কি নিয়ে আসব?
অবশ্যই, তাহলে আমরা একসাথে দেখতে পারব।
এখন আমাদের প্রধান পণ্যগুলো স্বাস্থ্য রক্ষা এবং গৃহস্থালি পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমন এ চা-এর বালিশ। আমাদের সমবায় সমিতির নারীরা ভুট্টার খড় দিয়ে বালিশটি তৈরি করেছেন। বালিশের ভেতরে আছে ইউননান প্রদেশের উচ্চ গুণগত মানের চা। এই বালিশ ব্যবহার করলে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং ঘুমের গুণগত মান উন্নত হবে। এ ছাড়া তাতে চায়ের সুগন্ধও যুক্ত আছে।
নারীদের এই হাতব্যাগটি বিক্রির পরিমাণ বেশ ভাল। এর কাঁচামাল হলো ভুট্টার খড়। তবে, আমরা প্রথমে ভুট্টার খড় রঙিন করার পর হাতব্যাগটি তৈরি করি। এতে যেসব রঙিন উপাদান ব্যবহার করা হয়, তা বিষাক্ত নয় ও ক্ষতিকরও নয়। এজন্য তা অনেক জনপ্রিয় হয়েছে।
আর কি কি পণ্য আপনি আমাদেরকে দেখাবেন...। এ ব্যাগটিও অনেক সুন্দর, তাইনা?
জ্বি।
যেমন এ হস্তশিল্পটি ঘর সাজানোর জন্য বাসায় রাখতে পারেন। ছোট কেবিনেটের উপরে সাজিয়ে রাখা যায়। যা অনেক সুন্দর দেখায়। এসব পণ্য বিক্রির পরিমাণ বেশ ভাল।
আমাদেরও কিছু ছোট আলংকারিক হস্তশিল্প আছে। যা গাড়ির ভেতরে রাখা যায়। যেমন এই হস্তশিল্পটি লাউ আকৃতির। পাশের এ অলঙ্কারটি হচ্ছে স্ফটিকের। সাধারণত স্ফটিকের পাশাপাশি আমরা জেড পাথরও এখানে ব্যবহার করি। এ পণ্যে সুস্থতা ও ইতিবাচক শক্তি প্রতিফলিত হয়। এ ছাড়া, এতে শুভকামনাও রয়েছে। এর ভেতরে আমরা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রতিরোধক কিছু চীনা ঐতিহ্যবাহী ঔষধ রেখেছি। যা গাড়িতে রাখা যায়, বাসায়ও রাখা যায়। অথবা উপহার হিসেবে দেওয়া অনেক ভাল। কারণ সবগুলোই হচ্ছে অনন্য সামগ্রী।
নারী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে কি কি দায়িত্ব আছে? আপনার প্রধান কাজগুলো কি?
আমার প্রধান কাজ হলো আমাদের গ্রামের নারীদের জীবন আরো উন্নত করা এবং বৈচিত্র্যময় করা। আগে তারা বাসায় থাকত, বেশি কাজ ছিল না। কারণ, ক্ষেতে চাষ ও ফসল তোলাসহ সব কৃষিকাজ মেশিন দিয়ে করা হয়। এজন্য এক্ষেত্রে বেশি কাজ নেই। এখন তাদের সাংস্কৃতিক জীবন উন্নত করা, প্রতিবেশীদের মধ্যে সুসম্পর্ক ও পারিবারিক মেলবন্ধন এগিয়ে নেওয়াসহ নানা খাতে আমি কাজ করার চেষ্টা করছি।
যদি গ্রামবাসীদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হয়, নারী ফেডারেশন তাদেরকে সাহায্য করে, তাইনা?
হ্যাঁ। গ্রামে আমরা আইনগত তথ্যগুলো জানাই। কোনো পরিবারে ঝগড়া বা সমস্যা হলে, আমরা নারী ফেডারেশনের পক্ষ থেকে মধ্যস্থতা করি, আমরা এসব ভূমিকা রাখি।
এখন আসলে নারী ফেডারেশনের ভূমিকা অনেক বড়। যেমন আমি বলেছি, পরিবারের ঝগড়া বা সমস্যায় মধ্যস্থতা করা, অভিভাবকদের যত্ন নেওয়া, বয়স্কদের সম্মান করা এবং শিশুদের ভালোভাবে যত্ন নেওয়া-সহ নানা গুণাবলী জানানো ইত্যাদি। এসব আসলে সবাই বোঝে, কিন্তু তারপরও কিছুটা সহায়তা দেওয়া উচিত। এটাই আমাদের কাজ।
এ সমবায় সমিতিতে নারী ফেডারেশনেরের আর কে কে কাজ করেন?
আমার পাশাপাশি নারী ফেডারেশনের ভাইস চেয়ারম্যানও এ সমবায় সমিতিতে কাজ করেন।
তৌহিদ ভাই, তাদের সাক্ষাৎকারের শুনে কেমন লেগেছে?
তৌহিদ:...
সংগীত
চীনের প্রথম শিক্ষার্থী (যুব) গেমস সম্প্রতি চীনের কুয়াং সিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গেমসে মোট ৮০৫টি ইভেন্ট রয়েছে। গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ৫ নভেম্বর রাত ৮টায় কুয়াং সি খেলাধুলা কেন্দ্রের স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয়। গেমসে একাধিক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
চীন সবসময় তরুণতরুণীদের খেলাধুলা উন্নয়নকে অনেক গুরুত্ব দেয়। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
তৌহিদ:..
চীনের গণশরীরচর্চা সম্পর্কে আপনার ধারণা কি?
তৌহিদ:...(আকাশ/তৌহিদ)