সি-বাইডেন শীর্ষ বৈঠক: চীন-মার্কিন সম্পর্ক ও বিশ্বের অভিন্ন কল্যাণের দিকনির্দেশক
2023-11-19 19:29:10

যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যকার ১৫ নভেম্বরের শীর্ষ সম্মেলনকে ইতিবাচক ও সফল বলে অভিহিত করেছেন চীনের কর্মকর্তা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক ও চীন বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।

একটি অকপট এবং গভীর মতবিনিময়ের মাধ্যমে, দুই রাষ্ট্রপ্রধান চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের দিকনির্দেশনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত এবং জটিল ইস্যুতে সমঝোতায় পৌঁছান। কোনো কোন বিশেষজ্ঞ একে বিশ্বে বছরের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক কার্যক্রম বলেও অভিহিত করেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ১৪ থেকে ১৭ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। সেখানে তিনি এপেকের ৩০তম বৈঠকে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। শীর্ষ বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে। বৈঠকে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উন্নয়ন এবং গোটা বিশ্বের অভিন্ন কল্যাণের জন্য প্রেসিডেন্ট সি’র দূরদর্শী, দায়িত্বশীল রাষ্ট্রনায়কসুলভ ভূমিকা সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে এবং প্রশংসা পেয়েছে।

প্রেসিডেন্ট সি’র এবার সানফ্রান্সিসকো যাত্রা নতুন সময়ে চীন-মার্কিন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এ বিষয়ে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, দুই প্রেসিডেন্টের বৈঠক ৪ ঘন্টা স্থায়ী হয় এবং আন্তরিকভাবে ও একে অপরকে সম্মান করার ভিত্তিতে তারা চীন-মার্কিন সম্পর্কের কৌশলগত ইস্যু এবং বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়ন-জড়িত নানা বিষয়ে গভীরভাবে মতবিনিময় করেছেন।

বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি বলেছেন, এবারের সানফ্রান্সিসকো বৈঠকের মাধ্যমে দু’পক্ষের নতুন আশা তৈরি হওয়া উচিত্। সঠিক চিন্তাভাবনা গড়ে তোলা উচিত্, সঠিকভাবে মতভেদ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত্, পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতা এগিয়ে নিতে কাজ করা উচিত্, বড় রাষ্ট্র হিসেবে যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করা উচিত্ এবং যৌথভাবে সাংস্কৃতিক বিনিময় বেগবান করা উচিত্। তা ছাড়া, তাইওয়ান এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও আর্থ-বাণিজ্যের ইস্যুতে চীনের দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরেন তিনি।

তাদের যৌথ প্রচেষ্টায় বৈঠকে ২০টির ও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলে জানান ওয়াং ই।

এবারের সানফ্রান্সিসকো বৈঠককে চীন-মার্কিন সম্পর্কের বড় ঘটনা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কেরও একটি বড় ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করে ওয়াং ই আরও বলেন, বৈঠকটি চীন-মার্কিন সম্পর্কের সুষ্ঠু, স্থিতিশীল ও টেকসই উন্নয়নের দিকে চালিত করতে সহায়ক হবে।

আন্তর্জাতিক বিষয়ে বিশেজ্ঞরাও সি-বাইডেন শীর্ষ বৈঠককে ইতিবাচক ও সফল বলে বর্ণনা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খুন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রবার্ট লরেন্স খুন সি-বাইডেন শীর্ষ বৈঠককে চলতি বছর বিশ্বমঞ্চে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, দুই রাষ্ট্রপ্রধান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা বিশ্বশান্তি ও সমৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে।

অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির চীন-বিশেষজ্ঞ এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক কলিন ম্যাকেরাস এক বছরের মধ্যে দু’নেতার প্রথম মুখোমুখি আলোচনায় আশাবাদের জন্য সুনির্দিষ্ট কারণগুলো ব্যাখ্যা করেছেন।

ম্যাকেরাস বলেন প্রথমত,, এই জাতীয় শীর্ষ বৈঠক সচরাচর এক ভালো বিষয়। দ্বিতীয়ত, দু’নেতার বৈঠকের পরিবেশটি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক ছিল। তৃতীয়ত, বিষয়বস্তুও ছিল বেশ ইতিবাচক। এবং চতুর্থ, সামরিক, শিক্ষা, যোগাযোগ, জলবায়ু, পরিবেশ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে বৈঠকে কিছু সমঝোতা হয়েছে এবং বাস্তব পদক্ষেপ এসেছে।

অধ্যাপক কলিন মনে করেন বৈঠকটি সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে এবং এটি আগামী মাসগুলোতে আরও অগ্রগতির আশা তৈরি করেছে।

পাকিস্তানের অবজারভার ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক সৌদ ফয়সাল মালিক বলেছেন, উভয় নেতাই সংঘাত প্রতিরোধ, অভিন্ন ভিত্তি চিহ্নিতকরণ এবং নিয়মিত আলোচনা পুনরায় শুরু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন।

যদিও বৈঠকটি মার্কিন-চীন সম্পর্কের সম্পূর্ণ পুনঃস্থাপনের দিকে পরিচালিত করতে পারে না, তারপরও মালিক বলেছেন যে, দুই প্রেসিডেন্ট "সহযোগিতা, বোঝাপড়া এবং পারস্পরিক অর্জন দ্বারা চিহ্নিত ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপনের" সুযোগটি ব্যবহার করেছেন।

মালিক জোর দিয়ে বলেন, এই উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক বিশ্বের জন্য একটি অভিন্ন আশাবাদ তৈরি করেছে।

স্পেনের আইই ইউনিভার্সিটির আইই চায়না সেন্টারের চেয়ারম্যান হোসে ফেলিক্স ভালদিভিসো মনে করেন, সি-বাইডেন সামনাসামনি বৈঠক সমগ্র বিশ্বের জন্য সুসংবাদ, কারণ তিনি বিশ্বাস করেন যে "চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি মসৃণ সম্পর্ক মানে গোটা বিশ্বের জন্য একটি মসৃণ সম্পর্ক।"

 

ফ্রেন্ডস অফ সোশ্যালিস্ট চায়না’র সহ-সম্পাদক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক লন্ডন-ভিত্তিক সিনিয়র বিশ্লেষক কিথ বেনেট বলেছেন, সি একজন শান্তিপ্রিয় এবং একজন দায়িত্বশীল রাষ্ট্রনায়ক এবং দূরদর্শী নেতা হিসেবে সান ফ্রান্সিসকোতে গেছেন শুধুমাত্র তার দেশের জন্য নয়, বরং গোটা বিশ্বের অভিন্ন কল্যাণের জন্য।

মাহমুদ হাশিম

ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।