এপেক নেতাদের শীর্ষসম্মেলনে যোগ দিতে গত মঙ্গলবার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে পৌঁছান চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে ১৪ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত চীন-মার্কিন নেতৃবৃন্দের বৈঠকে অংশ নেন এবং এপেক নেতাদের সম্মেলনে যোগ দেন জনাব সি। পাশাপাশি নানা গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক তত্পরাতায় অংশ নেন সি চিন পিং। সাম্প্রতিক এ সফরের কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় থাকছে আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।
গত ১৭ নভেম্বর সকালে এপেক নেতাদের ৩০তম অনানুষ্ঠানিক সম্মেলন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোর মো০১স্কোন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। এতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এপেক সদস্যদের উচিত এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের সহযোগিতামূলক চেতনা ধারণ করা এবং যৌথভাবে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা।
তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর ফিলোলি গার্ডেনে ১৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেন জনাব সি। দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধান চীন-মার্কিন সম্পর্কের কৌশলগত, সামগ্রিক ও দিকনির্দেশনামূলক বিষয়, এবং বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে গভীর মতবিনিময় করেছেন।
জনাব সি চিন পিং উল্লেখ করেছেন, বর্তমান বিশ্ব এক শতাব্দীর অভূতপূর্ব পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সামনে দুটি বিকল্প আছে, একটি হল বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং বিশ্ব নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য যৌথভাবে ঐক্য ও সহযোগিতা জোরদার করা। অন্যটি হল পরষ্পরকে কোনো ছাড় না দেয়া, দুই শিবিরের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ানো এবং বিশ্বকে অশান্তি ও বিভাজনের দিকে নিয়ে যাওয়া। এ দুটি বিকল্প দুটি দিকের প্রতিনিধিত্ব করে, যা মানবজাতি ও পৃথিবীর ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে।
সি চিন পিং উল্লেখ করেন, পারস্পরিক সম্মান, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আর সহযোগিতার মাধ্যমে উভয়ের জয়লাভ নিশ্চিত করা হচ্ছে বিগত ৫০ বছরে চীন-মার্কিন সম্পর্কোন্নয়নের প্রক্রিয়ায় অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং ইতিহাসে বড় রাষ্ট্রগুলোর সংঘর্ষ থেকে শিক্ষালাভ করা। এটাই চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিন্ন চেষ্টা হওয়া উচিত। যদি দুই পক্ষই পারস্পরিক সম্মান, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সহযোগিতার মাধ্যমে উভয়ের জয় লাভের নীতি মেনে চলে, তাহলে মতভেদ অতিক্রম করতে পারবে এবং দুই বড় রাষ্ট্র একে অপরের সঙ্গে সঠিকভাবে থাকার উপায় খুঁজে বের করতে পারবে। গত বছর বালি দ্বীপে বৈঠকের সময় যুক্তরাষ্ট্র ব্যক্ত করেছে যে, চীনের ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে চায় না, ‘নতুন স্নায়ুযুদ্ধ’ সৃষ্টি করতে চায় না, চীনের বিরুদ্ধে মিত্র জোট জোরদার করতে চায় না, "তাইওয়ানের স্বাধীনতা" সমর্থন করে না এবং চীনের সঙ্গে সংঘাত করার ইচ্ছা পোষণ করে না।
একই দিন (বুধবার) সন্ধ্যায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সান ফ্রান্সিসকোতে মার্কিন বন্ধুত্বপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোর উদ্যোগে আয়োজিত একটি স্বাগত ভোজসভায় যোগ দেন।
সভায় প্রেসিডেন্ট সি বলেন, একে অপরকে সম্মান করা মানুষের একটি মৌলিক শিষ্টাচার। চীন-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে, এপেক সিইও সম্মেলন ১৫ থেকে ১৬ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হয়। চীনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উন্নয়ন পরিষদ-সিসিপিআইটি’র উদ্যোগে ডিজিটাল অর্থনীতি, যন্ত্র উৎপাদন, বায়োমেডিসিন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ বিভিন্ন খাতের ৮০টি চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ১২০জনেরও বেশি প্রতিনিধি এতে অংশ নেয়।
এ ছাড়াও ঊর্ধ্বতন আর্থিক কর্মকর্তা এবং মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকও গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয়। ২০ হাজারেরও বেশি অংশগ্রহণকারী গত সপ্তাহে নানা বৈঠকে বা সভায় যোগ দেন।
দেখা যায়, সান ফ্রান্সিসকোতে চীনা রাষ্ট্রপ্রধানের একাধিক কূটনৈতিক কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পরিচালিত হয়। দেশের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক থেকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় পরিবার পর্যন্ত, গোটা মানবজাতির মঙ্গল বাস্তবায়নে চীন বাস্তব পদক্ষেপ নিয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া একটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোরাম এপেক। বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি মেক্সিকো, ব্রাজিল, ফিলিপিন্স-সহ বিশ্বের ২১টি দেশ এর সদস্য।