চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘চলতি বাণিজ্য’
2023-11-17 19:35:53

চলতি বাণিজ্যের ৪৪তম পর্বে থাকছে:

১. জনগণের কল্যাণে চীন-মার্কিন সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার আশাবাদ

২. ‘চীন-মার্কিন ইতিবাচক সম্পর্ক বিশ্বের জন্য লাভজনক’

৩. চীনে ব্যবসায় আকৃষ্ট হচ্ছে জাপানি কোম্পানিগুলো

জনগণের কল্যাণে চীন-মার্কিন সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার আশাবাদ

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া এবং দুই দেশের অর্থনীতি ও বিশ্ব মানবতার জন্য এক সাথে কাজ করার ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হলো চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের দীর্ঘ-আকাঙ্ক্ষিত বৈঠক। যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে সম্প্রতি এ বৈঠক হয়। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে এই সামিটে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন–অ্যাপেকের ইকোনমিক লিডার্স মিটিংয়ে যোগ দেন প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং।

যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা উডসাইডে অবস্থিত বাগানবাড়ি ও জাদুঘর ফিলোলি গার্ডেন। ২০ শতকের সবচেয়ে সুন্দর মার্কিন গ্রামীণ এই বাগানের পথে হাঁটছেন বিশ্বের দুই শক্তিধর ও শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান সি চিনপিং ও জো বাইডেন।

কেবল হেঁটে হালকা আলাপ নয় বরং এখানেই বৈঠক করেন সি চিন পিং ও জো বাইডেন।

বৈঠকে যোগ দিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারী থেকে মুক্তি পেয়েছে, তবে মহামারীর ব্যাপক প্রভাব রয়ে গেছে। বিশ্বের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার শুরু হয়েছে, কিন্তু এর চালিকাশক্তির অভাব রয়েছে, শিল্প চেইন আর সরবরাহ চেইন ব্যাহত হয়েছে, রক্ষণশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সমস্যাগুলো খুব প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে।

      সি চিনপিং, চীনা প্রেসিডেন্ট

“চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। শত বছরের পরিবর্তনের বৃহৎ প্রেক্ষাপটে এ সম্পর্ককে বিবেচনায় নিতে হবে ও পরিকল্পনা করতে হবে। এই সম্পর্ক এমনভাবে উন্নয়ন করতে হবে যেন দু’দেশের জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে এবং মানবজাতির প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করা যায়।“

বিগত ৫০ বছরে, চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের উত্থান-পতনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, সংঘর্ষের ফল কারোর জন্যই ভালো হবে না।

 

      সি চিনপিং, চীনা প্রেসিডেন্ট

“আমি এখনও বিশ্বাস করি, বড় রাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এই যুগের সঙ্গে মানানসই নয়। এমনকি এটা চীন-যুক্তরাষ্ট্র কিংবা সারা বিশ্ব যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে সেগুলোর সমাধান করতে পারবে না। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সফলতার জন্য এ বিশ্ব যথেষ্ট বড় এবং এক দেশের সাফল্য অন্য দেশের জন্য বিপুল সম্ভাবনা।“

এর আগে সানফ্রান্সিসকোর দক্ষিণে অবস্থিত এই জাদুঘরে সকাল সকাল পৌঁছে যান প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং। এ সময় তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও স্বাগত জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। করমর্দন ও একসঙ্গে ছবিও তোলেন দুই নেতা। 

বৈঠক শেষে ফিলোলি এস্টেট থেকে বিদায় নেওয়ার সময় সি চিনপিংকে এগিয়ে দেন জো বাইডেন। এ সময় দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে প্রত্যাশা পুনর্ব্যক্ত করেন জো বাইডেন ও সি চিনপিং।

এর আগে প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংকে বহনকারী এয়ার চায়নার একটি বিমান পৌঁছায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখানে সি চিনপিংকে স্বাগত জানান ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম, মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেনসহ দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

এ সময় সি চিনপিংকে বহনকারী গাড়িবহরকে ঘিরে সাজসাজ রব দেখা যায় সানফ্রান্সিসকোর রাস্তায়। দুই পাশে দাঁড়িয়ে স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ। গেল ৩৮ বছরের মধ্যে সানফ্রান্সিসকোতে সি চিনপিংয়ের এটাই প্রথম সফর।

আপস…

গেল বছরের নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে মুখোমুখি বৈঠকের পর এই প্রথমবারের মতো আবারও বৈঠকে বসলেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে এ সামিট অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক ব্যুরোর স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির জেনারেল অফিসের পরিচালক ছে ছি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই তার সঙ্গে ছিলেন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে এই সামিটে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন–অ্যাপেকের ইকোনমিক লিডার্স মিটিংয়ে যোগ দেন প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং।

 

ভিনদেশে চীন:

‘চীন-মার্কিন ইতিবাচক সম্পর্ক বিশ্বের জন্য লাভজনক’

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীন ও যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের মধ্যকার সহযোগিতা জোরদার করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। সারা বিশ্ব এই দুই বৃহৎ অর্থনীতির দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও এক সঙ্গে কাজ করার বোঝাপড়া দেখতে চায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, চীন-মার্কিন ইতিবাচক সম্পর্ক কেবল এই দুই দেশ নয় বরং বরং সারা বিশ্বের জন্যই লাভজনক হবে।

সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা বজায় রাখা ও শান্তি-স্থিতিশীলতার জন্য চীন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুসম্পর্ক খুব জরুরি বলে মনে করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। সম্প্রতি এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন –অ্যাপেকের লিডারশিপ উইকে অংশ নিয়ে চীনা গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

       আনোয়ার ইব্রাহিম, প্রধানমন্ত্রী, মালয়েশিয়া

“প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি আমার বার্তা, দয়া করে এই বৈঠকের গুরুত্বকে অবহেলা করবেন না। সারা বিশ্ব আশার আলো জ্বালিয়ে বসে আছে যে এখানে মৌলিক কিছু হবে, পারস্পরিক সম্মান ও এক সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে একটি বোঝাপড়া হবে এবং এটি কেবল চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয় বরং সারা বিশ্বের জন্যই লাভজনক হবে।“

এ সময় তিনি বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জনের পথে যেন বাধা না হয়।

       আনোয়ার ইব্রাহিম, প্রধানমন্ত্রী, মালয়েশিয়া

“ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো এবং সংরক্ষণবাদী অপ্রয়োজনীয় চাপের ব্যাপারেও সচেতন থাকার দরকার। মনে রাখতে হবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন খুব কাছে। এসব বৈঠকে নেওয়া নানা সিদ্ধান্ত নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু নেতৃত্ব পুরোটাই একটা স্বাপ্নিক বিষয় এবং কিছু ঝুঁকিও নিয়ে নিতে হয়।“

দুই দেশের মধ্যে মৌলিক কিছু বোঝাপড়া দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, মানবিক আবেদনকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। আর সেই সম্ভাবনা যদি হারায় তাহলে এ বিশ্বই মূলত হারিয়ে যাবে।

কোম্পানি প্রোফাইল:

চীনে ব্যবসায় আকৃষ্ট হচ্ছে জাপানি কোম্পানিগুলো

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বিপুল সংখ্যক ক্রেতা ও ব্যবসায়ীক সম্ভাবনায় চীনে আকৃষ্ট হচ্ছে জাপানি কোম্পানিগুলো। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সহযোগিতামূলক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ারও সুযোগ নিচ্ছে জাপানি কোম্পানিগুলো। ফলে যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে চীনে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে জাপানি বিভিন্ন কোম্পানি।

চীনা মার্কেট ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে জাপানি কোম্পানিগুলোর জন্য। বিশেষ করে বিপুল ক্রেতা ও বিভিন্ন দেশের কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতামূলক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সুযোগ নিতে চীনের দিকে নজর ফেরাচ্ছে জাপানি কোম্পানিগুলো। ফলে যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে চীনে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে জাপানি বিভিন্ন কোম্পানি।

চীনের বিভিন্ন প্রদেশে প্রায়ই বসে নানা রকমের মেলা। এসব মেলায় উৎসাহ সহকারে অংশ নেয় জাপানি বিভিন্ন কোম্পানি।

সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক আমদানি রফতানি মেলায় অংশ নেয় অন্তত সাড়ে ৩শ’ জাপানি ফার্ম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের কোম্পানিগুলোর ১০ শতাংশই জাপানি।

বার্ষিক এই মেলায় অংশ নেওয়া বিপুল সংখ্যক বিদেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে জাপানি কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ তাই চোখে পড়ে বেশ। বিশেষ করে লাইফস্টাইল, স্বাস্থ্য, স্মার্ট কৃষি, স্বয়ংকৃত গাড়ি শিল্প এবং অন্যান্য নানা খাতের জাপানি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো চীনাদের নজর কেড়েছে।

প্রদর্শনীতে দৃষ্টি আকর্ষণ করা এমনই একটি জাপানি কোম্পানি প্যানাসনিক। এবারের প্রদর্শনীতে ১ হাজার বর্গ মিটার জায়গা নিয়ে অংশ নিয়েছে প্যানাসনিক। 

প্যানাসনিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইউকি কুসুমি জানান, ব্যবসাখাতে চীনের গতির সঙ্গে মিল রেখে চলার চেষ্টা করছেন তারা। একইসঙ্গে চীনের বাজার ধরতে নানা পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন তিনি।