ইউয়ান ই গ্রামের সরু গলি ধরে হাঁটলে আপনি মাঝেমাঝে দেখতে পাবেন রাস্তার পাশে দাঁড়ানো রয়েছে ট্রাক। গ্রামবাসীরা সাবধানে প্যাকেট করে মুলসহ বক্স ট্রি গাড়িতে ওঠাচ্ছেন। হাসিমুখে কয়েকজন গ্রামবাসীরা জানান, ব্যবসায়ীরা ওইসব গাছ ক্রয় করেছেন। গাছগুলো অন্য স্থানে নিয়ে লাগানো হবে। বছরের শেষ দিকে এ ব্যবসা আরও ভালো হয়েছে।
চীনা ভাষায় ইউয়ান ই মানে বাগান। এতে বোঝা যায়, ইউয়ান ই গ্রাম কিসের জন্য জনপ্রিয়। এ গ্রাম শাংহাই শহরের ছোং মিং অঞ্চলের কাং ইয়ান উপজেলার উত্তরপূর্বে অবস্থিত। পুরো গ্রামে রয়েছে ৮৩৫টি কৃষিপরিবার। তাদের মধ্যে ৭০০টি পরিবার বক্স ট্রি চাষের সঙ্গে যুক্ত। এখানে বক্স ট্রি চাষের আওতাধীন জমির আয়তন ৬৭ হেক্টর ছাড়িয়ে গেছে। দশ বছর বয়সী বক্স ট্রির সংখ্যা দশ হাজারেরও বেশি। এখানে ২০০ বছর বয়সী গাছও রয়েছে। ইউয়ান ই গ্রাম শাংহাইয়ের প্রথম দলীয় গ্রাম পুনরুজ্জীবনের নিদর্শন গ্রাম এবং কৃষি ও গ্রাম মন্ত্রণালয়-স্বীকৃত ‘এক গ্রাম এক বৈচিত্র্য’ এর নিদর্শন গ্রাম।
হ্য সিং বাগানের সাবেক প্রধান শি হ্য শেং বলেন, “সর্বপ্রথম আমরা বায়ু প্রতিরোধ ও বাঁধ শক্ত করার জন্য বক্স ট্রি লাগিয়েছিলাম। পরে বক্স ট্রি লাগানোর প্রযুক্তি নিয়ে অনেক গবেষণা করি। বসন্তকালে গাছ স্থানান্তরের ঐতিহ্য ভেঙ্গে এখন বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ ও শীতকালে অর্থাৎ বছরের যেকোনও সময় এ গাছ লাগানো যায়।”
প্রথম দিকে লাগানো বক্স ট্রি ইচ্ছেমতো বড় হতো। ২০০০ সাল থেকে বক্স ট্রি আকার পরিবর্তন করা শুরু হয়। ডাল কাটার মাধ্যমে সুন্দর আকৃতিতে গড়ার পর বক্স ট্রির মূল্য অনেক বেড়ে যায়। বয়স্ক ও সুন্দর আকৃতির বক্স ট্রির দাম কয়েক লাখ এমন কি মিলিয়ন ইউয়ান পর্যন্ত উঠতে পারে। বৈচিত্র্যময় বক্স ট্রি সারা চীনের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীদেরকে আকৃষ্ট করে। প্রতি বছর বক্স ট্রি থেকে আয় হয় ৪ কোটিও ইউয়ানেরও বেশি। পরিবারপ্রতি কৃষকদের গড় উপার্জন ৪০ হাজার ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়।
গত দুই বছরে ইউয়ান ই গ্রাম বনসাই বক্স ট্রি নিয়ে ব্যাপক কাজ করেছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিসি’র এ গ্রাম কমিটির উপসম্পাদক শি শুয়াই বলেন, বনসাই বক্স ট্রি গৃহসজ্জার উপযোগী। দামও গ্রহণযোগ্য। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বনসাই বক্স ট্রির বিক্রি বেড়েছে, যার ফলে গ্রামবাসীদের উপার্জনও বৃদ্ধি পেয়েছে।”
২০২২ সালে কাং ইয়ান উপজেলায় ফুল ও চারা শিল্পের উত্পাদনের পরিমাণ ২০ কোটি ইউয়ানে ছাড়িয়ে যায়। এ অর্জন শাংহাইয়ের মেট্রোপলিটনের উপকণ্ঠের একটি উপজেলার জন্য সহজ ছিল না।
হ্য হুয়া আন্তর্জাতিক চন্দ্রমল্লিকা উদ্যানে প্রবেশ করলে এ ফুলের সুগন্ধ নাকে আসে। গোলাপী, হলুদ, সাদা ও বেগুনিসহ নানা রঙের ছোট চন্দ্রমল্লিকার প্রাণবন্তভাবে বেড়ে ওঠার দৃশ্য দেখা যায়। এখানে আগে ছিল কাং ইয়ান উপজেলার শাকসবজি কোম্পানি। ছোং মিং অঞ্চলে চীনের দশম ফুল মেলা আয়োজনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাং ইয়ান উপজেলা পিছিয়ে পড়া শিল্প বাদ দিয়েছে এবং অনেক জমিতে সবজির পরিবর্তে চন্দ্রমল্লিকা চাষ শুরু করেছে। সার্বক্ষণিক আলো ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং সমন্বিত জলসেচ ও সার প্রয়োগসহ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এখানে চন্দ্রমল্লিকা উত্পাদনের পরিমাণ সাধারণ পদ্ধতির চেয়ে চার-পাঁচ গুণ হয়েছে। এ উদ্যান প্রতি বছর জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ১ কোটিও বেশি ফুলের চারা রপ্তানি করে।
ঘন্টায় ২ লাখ ফুলের বীজ রোপণ করা হচ্ছে কাং ইয়ান উপজেলায়। প্রশ্ন হলো কার হাত এত দ্রুত কাজ করতে পারে? এর উত্তর যন্ত্রপাতির হাত। কাং ইয়ান উপজেলার হ্য সিং গ্রামের স্মার্ট ফুল উদ্যোনে আমাদের সাংবাদিক দেখতে পান, চারা পূরণ যন্ত্র রোপন করা চারার অবস্থা জানতে পারে এবং যান্ত্রিক হাতের মাধ্যমে খালি জায়গায় চারা লাগাতে এবং দূর্বল চারা তুলে নিয়ে আবার সেখানে চারা লাগাতে পারে। এ ফুল-উদ্যানে উচ্চ মানের স্বয়ংক্রিয় উত্পাদনের লাইনে রোপণ, কুঁড়ি জন্মানো, চারা লালন, স্থানান্তর ও ডেলিভারিসহ নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘শাংহাইয়ে কৃষির উচ্চমানের উন্নয়ন কার্যক্রম প্রস্তাব’ প্রকাশিত হয়। এতে কাং ইয়ান উপজেলাকে শহরটির ১৩টি উচ্চমানের কৃষির দৃষ্টান্তমূলক অঞ্চলের একটি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মূল লক্ষ্য ফুলের বীজ নিয়ে গবেষণা ও এর উন্নয়ন করা এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তি উত্পাদনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। ‘শাংহাইয়ে ফুল বন্দর’ প্রতিষ্ঠা করে ফুল শিল্পের নতুন উচ্চভূমি তৈরি করা হবে।
(রুবি/রহমান)