চীনা ভাষার ভালো শিক্ষক হতে চান পাক তরুণ
2023-11-17 14:38:24

স্বপ্ন নিয়ে তারা চীনে শিক্ষাযাত্রা শুরু করেছেন। সাগর পাড়ি দিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে প্রাচীর ও প্রাণবন্ত চীনে এসেছেন তারা। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা তাদের একজনের গল্প শুনাবো।

সম্প্রতি চীনের বিদেশি গণমৈত্রী সমিতি ও হ্য নান প্রাদেশিক সরকারের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২৩ সালের ‘আমি ও চীনা ভাষার অক্ষর’ শীর্ষক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব। পাকিস্তান থেকে আসা তরুণ মুহাম্মদ আভিস এখানে সেরা সৃজনশীল পুরস্কার জিতেছেন।

আভিস ‘আন্তর্জাতিক অধ্যয়ন’ মেজর নিয়ে চীনের নান খাই বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ছোটবেলা থেকে চীন ও চীনা ভাষার প্রতি তার আগ্রহ জন্মে। তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই চীনের ইতিহাস, স্থাপনা ও চীনা ভাষার প্রতি আমার মধ্যে আগ্রহ জাগে। আমার কাজিন শাংহাইয়ে ডক্টারেট ডিগ্রি লাভের জন্য লেখাপড়া করেন। আমার আগ্রহ দেখে তিনি চীনের রীতি, সংস্কৃতি ও মুল্যবোধের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। এ কারণে আমি সিনিয়র স্কুল শেষে করে চীনে লেখাপড়া করতে আসি। আমার মেজর চীনা ভাষার আন্তর্জাতিক অধ্যয়ন।”

২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো চীনে আসেন আভিস। তিনি শাংহাই ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইউনিভার্সিটিতে ব্যাচেলর পর্যায়ে পড়তে আসেন। প্রথম দিকে তার চীনা ভাষা খুব খারাপ ছিল। স্কুল কতৃপক্ষ ও সহপাঠীদের সহায়তায় তিনি ভাব আদান-প্রদানের বাধা দূর করতে সক্ষম হন।



তিনি বলেন, “শাংহাই খুব উন্নত একটি শহর। নানা বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এখানে রয়েছে। এর আগে আমি কখনও বিদেশে যাইনি। শাংহাইয়ে আসার পর বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তাদের সংস্কৃতি আলাদা। তাদের সঙ্গে আমার আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা ছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন।”

ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করার পর আভিস নিজের দেশে ফিরে যান। তিনি পাকিস্তানের একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষার শিক্ষক হন। এ অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে আভিস বলেন, “আমার জন্য সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হলো শিক্ষার্থীরা নতুন জ্ঞান লাভ করছেন। তাদের আনন্দ দেখে আমি অভিভূত হই। শুরুর দিকে তাদের পক্ষে চীনা ভাষা শেখা একটু কঠিন ছিল। তবে দু-তিন মাস পর তারা কিছু কিছু বাক্য বলতে শুরু করেন। এ জন্য তারা খুব আনন্দিত ও নিজেদের ব্যাপারে আস্থাবান হয়ে ওঠেন। আমার জন্য এটি উচ্ছসিত হওয়ার বিষয়ও বটে।”

আড়াই বছর ধরে শিক্ষাদানের অভিজ্ঞতা থেকে আভিস বুঝতে পেরেছেন, অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক মানুষ চীনা ভাষা শিখছেন। তাই তার নিজের চীনা ভাষার মান উন্নত করা খুব জরুরি বলে মনে করেন তিনি। সেজন্য চলতি বছর তিনি আবার চীনে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মাস্টার ডিগ্রির জন্য নান খাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। আভিস বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের জন্য উচ্চ যোগ্যতা প্রয়োজন। আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা উন্নত করার জন্য নান খাই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি উচ্চশিক্ষা গ্রহণে।

আভিস জানান, চীনে আবার লেখাপড়ার সুযোগ পেয়ে তিনি খুব খুশি। প্রথমবার চীনে আসার পর যেমন নার্ভাস ছিলেন এখন তেমন নেই। তিনি বলেন, “নান খাই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার প্রথম দিকে কোনও বন্ধু ছিলনা এবং কারও সঙ্গে পরিচয়ও ছিল না। তবে আমার শিক্ষক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আমাকে উত্সাহিত করতেন। তাই আমি নিজেকে খুব জনপ্রিয় বলে মনে করি। নান খাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ আমার জন্য উপযোগী। এখানে অব্যাহতভাবে লেখাপড়া করতে পারা আমার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক।”

আভিসের আছে একজন ভালো শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন। তিনি বলেন, শিক্ষা সমৃদ্ধ হলে দেশ সমৃদ্ধ হবে। শিক্ষা শক্তিশালী হলে দেশ শক্তিশালী হবে। নিজের দেশে ফিরে গিয়ে আরও ভালো একজন চীনা ভাষার শিক্ষকে পরিণত হতে চান তিনি। 

(রুবি/রহমান)