উগান্ডার একজন চলচ্চিত্র পরিচালকের কংফু মুভি’র স্বপ্ন
2023-11-16 13:50:51

২০২৩ সাল হলো যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল এক পথ’ উদ্যোগ উত্থাপনের দশম বার্ষিকী। উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে ‘এক অঞ্চল এক পথ’ নির্মাণের প্রক্রিয়ায় চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণে ‘ক্ষুদ্র তবে সুন্দর’ প্রকল্পগুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছে এবং তাদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়েছে।

আজকের অনুষ্ঠানের প্রথম অংশে একসঙ্গে উগান্ডার একজন চলচ্চিত্র পরিচালকের কংফু মুভি’র স্বপ্নের ওপর দৃষ্টি দেবো। আইসাক নাবওয়ানা পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডার একজন চলচ্চিত্র পরিচালক। তিনি কংফু চলচ্চিত্র নির্মাণে সুদক্ষ। চীনের স্যাটেলাইট টিভির সেবাদানকারী ব্যবসায়ী এবং উগান্ডা সরকারের সহযোগিতায় পরিচালিত প্রকল্পের কল্যাণে তিনি স্থানীয় টিভি চ্যানেলে প্রচারিত চীনা কংফু মুভি থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। উগান্ডায় প্রকল্পটির চালু করার ৫ বছরে নাবওয়ানার মতো অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক মানুষ আরও বেশি করে বিশ্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং নিজ নিজ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন।

উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা থেকে গাড়িতে প্রায় ২০ মিনিটের দূরত্বে ওয়াকালিউড নামের একটি ছোট্ট গ্রাম রয়েছে। সেখানকার ওয়াকালিউড ফিল্ম স্টুডিও কংফু সিনেমার শুটিংয়ের জন্য বিখ্যাত।

এ ফিল্ম স্টুডিওয়ের মালিক ও পরিচালক নাবওয়ানা ‘উপজাতি নেতা’ শিরোনামে একটি মুভি শুটিং করছেন। নিজের প্রচেষ্টার মাধ্যমে উপজাতির বৃদ্ধ প্রধানের ছেলে কীভাবে সকলের কাছে প্রশংসিত নেতা হয়ে ওঠেন, তার গল্প তুলে ধরা হয় চলচ্চিত্রটিতে। এতে অনেক মার্শাল আর্ট দৃশ্য রয়েছে।

নাবওয়ানা বলেন, চীনের কংফু চলচ্চিত্র দেখা এবং সেগুলো থেকে কংফু শেখা হলো তার বরাবরের স্বপ্ন। তবে আগে গ্রামে সুবিধা খুব সীমিত ছিলো। তিনি বলেন,

 “আমরা স্থানীয় হলে সিনেমা দেখতাম। আপনার কাছে খুব বেশি বিকল্প ছিল না। কারণ বেশিরভাগ লোক সিনেমা নয়, ফুটবল খেলা দেখতো। অবশ্য আপনি ডিভিডি কিনে বাড়িতে দেখতে পারতেন, কিন্তু অনেকের বাড়িতে টিভি সেট ছিলনা। এখন স্যাটেলাইট টিভির সেবা নেওয়ার পর আমি আমার দলের সাথে সিনেমা দেখার সুযোগ পাচ্ছি।”

নাবওয়ানা-উদ্ধৃত স্যাটেলাইট টিভি আসলে ২০১৮ সালে শুরু হওয়া ‘দশ সহস্রাধিক গ্রামে স্যাটেলাইট টিভির প্রবেশগম্যতা’ প্রকল্প। ২০১৫ সালে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার ফোরামে প্রস্তাবিত সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দু পক্ষের সহযোগিতার একটি পদক্ষেপ হিসেবে ‘দশ সহস্রাধিক গ্রামে স্যাটেলাইট টিভির প্রবেশগম্যতা’ প্রকল্পটি আফ্রিকান দেশগুলোর ১০ হাজারের বেশি গ্রামে স্যাটেলাইট ডিজিটাল টিভি সংকেত প্রদান করে।

উগান্ডার প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে চালু হওয়ার পর থেকে দুটি পর্যায় অতিক্রম করে এসেছে। দেশটির মোট ৯০০টি গ্রাম এবং ১৮ হাজার টিরও বেশি পরিবার স্যাটেলাইট টিভি অনুষ্ঠান দেখেছে এবং এতে ১০ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছে।

আজকাল নবওয়ানা এবং তার দলের সদস্যরা ‘দশ সহস্রাধিক গ্রামে স্যাটেলাইট টিভির প্রবেশগম্যতা’ প্রকল্পের মাধ্যমে আসা টিভি সংকেতের সাহায্যে যা দেখতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে তা হলো চীনের স্যাটেলাইট টিভি অপারেটরদের কংফু চ্যানেল। চ্যানেলটিতে প্রতিদিন প্রচারিত চীনা চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানগুলো নবওয়ানা ও তার অংশীদারদের সৃজনশীল অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকে। নবওয়ানা চীনা চলচ্চিত্র জগতের ব্যক্তিদের সঙ্গে সহযোগিতা চালানোর আশাও পোষণ করেন। তিনি বলেন,

 “আমার ভবিষ্যৎ চলচ্চিত্রের স্বপ্ন হলো চীনা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সাথে কাজ করা। যদি কোনও চীনা গ্রুপ বা কোম্পানি আমাদের সাথে সহযোগিতা করে তাহলে আমরা খুব খুশি হবো। আমরা প্রচুর মার্শাল আর্ট ফিল্ম তৈরি করেছি, বিশেষ করে চীনা সংস্কৃতি ও চীনা কংফু নিয়ে। সহযোগিতা করতে পারলে তা অর্থপূর্ণ হবে, কারণ আমি চীন ও উগান্ডার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের গল্প বলতে পারবো।’

নবওয়ানা’র মতো ওয়াকালিউড গ্রামে ‘দশ সহস্রাধিক গ্রামে স্যাটেলাইট টিভির প্রবেশগম্যতা’ প্রকল্পে উপকৃত হওয়া লোকজন আরও অনেক আছে। প্রাথমিক স্কুল ও হাসপাতালে স্যাটেলাইট টিভি সংযোগ নেওয়ার পর স্থানীয় শিক্ষাদান ও চিকিত্সার পরিবেশও উন্নত হয়েছে। সেন্ট ক্লায়ার প্রাথমিক স্কুলে চীনের কার্টুন চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। স্কুলের শিক্ষক ওকেলো গডফ্রে বলেন,

 “শিক্ষার্থীরা বিদেশের ভিডিও ও অনুষ্ঠান উপভোগের মাধ্যমে উপকৃত হবে এবং তারা বিদেশের জীবন সম্পর্কে জানতে পারবে।”

একজন শিক্ষার্থী জানায়, চীনা চলচ্চিত্র ও কার্টুন তাকে চীনা ভাষায় আগ্রহী করে তুলেছে। তিনি বলেন,

 

“হোমওয়ার্ক শেষ করার পর আমরা এখানে সিনেমা ও কার্টুন দেখতে পারি। আমি সেগুলো খুব পছন্দ করি। এমন একটি প্রকল্প আনার জন্য আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ। এখন যদি কেউ আমাকে সাহায্য করেন, আমি চীনা ভাষা শিখতে চাই।”

উগান্ডায় ‘দশ সহস্রাধিক গ্রামে স্যাটেলাইট টিভির প্রবেশগম্যতা’ প্রকল্প বাস্তবায়নের পাঁচ বছরেরও বেশি সময়ে প্রকল্পটি কেবল স্থানীয় গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক উন্নয়নকে বেগবান করেনি, বরং বিশ্বকে আরও ভালভাবে বোঝা এবং দৃষ্টিসীমা প্রসারিত করার ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের জন্য একটি মাধ্যম হয়েছে। এ প্রকল্পের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মুকুরু ফিলিপ মনে করেন, প্রকল্পটি উগান্ডার জনগণের জন্য বিশাল পরিবর্তন বয়ে এনেছে। তিনি বলেন,

 “এটি চীনা সংস্কৃতি এবং চীনারা কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে উগান্ডাবাসীদের বোঝাপড়া আরও গভীর করতে সহায়তা করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক লোক উগান্ডা ও চীনের সহযোগিতার ব্যাপারে আরও আস্থাশীল হয়েছে।”