আকাশ ছুঁতে চাই ৪৪
2023-11-16 18:40:36


                                             

১. ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি বদলে দিয়েছে জীবন

২. গোলাপের সৌরভে

৩. ছোট্ট মেয়ে নিউ নিউ

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি বদলে দিয়েছে জীবন

 

চীনের ৫৬ জাতির মানুষের রয়েছে নিজস্ব সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিকে উদ্ভাবনী উপায়ে ব্যবহার করে জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে অনেক স্থানে। অনেক এলাকাতেই নারীরা এর সুফলভোগী হচ্ছেন। এমনকি ঘটেছে চীনের কুইচোও প্রদেশের ছিননান পুই ও মিয়াও প্রিফেকচারে। চলুন শোনা যাক সেইু গল্প।

 

দক্ষিণ পশ্চিম চীনের কুইচোও প্রদেশে অনেক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। এখানকার ছিয়াননান পুই এবং মিয়াও স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারে প্রাচীন গ্রাম ইয়াওশান। এখানে পাই খু ইয়াও নামে ইয়াও জাতির মানুষের একটি সম্প্রদায় বাস করে।

 এই গ্রামের বাড়িঘরে ঐতিহ্যবাহী নির্মাণ শৈলী এবং ইয়াও জাতির কাপড় রং করার কৌশল নিজস্ব বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। মূলত নারীদেরই আয়ত্তেব রয়েছে কাপড় রং করার এই বিশেষ কৌশল। ২০০৬ সালে কাপড় রং করার কৌশল চীনের জাতীয় অবৈষয়য়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

 

ওয়াং চিনইং একজন নারী। তিনি পাই খু ইয়াওদের কাপড় রং করার বিশেষ কৌশলের একজন ইনহেরিটর। তিনি বলেন, ‘জীবন অনেক উন্নত হয়েছে। আগে আমাদের সবকিছু নিজেদেরই করতে হতো। নিজেদের কাপড় নিজেরাই বানাতাম। এখন আমরা কাপড় তৈরির জন্য বেতন পাই। ফলে খামার ও অন্যান্য কাজে সময় ব্যয় করতে হয় না। এখন আমরা পুরো মনোযোগ দিয়ে কাপড় তৈরি করি। ’

ওয়াং আগে নিজের পরিবারের পরার কাপড় তৈরি করতেন। তাকে ক্ষেত খামারের কাজও করতে হতো। এখন চাকরি পাওয়ায় তিনি মনোযোগ দিয়ে কাপড় তৈরি করেন। বেতন পাওয়ায় তার পরিবারের আয় বেড়েছে।

কুইচোওর সানতু শুই স্বায়ত্তশাসিত কাউন্টির একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হলো এমব্রয়ডারি কারুশিল্প। এর নাম মাওয়েই সিউ। ঘোড়ার চুল দিয়ে এই এমব্রয়ডারি করা হয়। এই কারুশিল্প এবং শুই ভাষার ক্যালিগ্রাফি জাতীয় অবৈষয়িক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার একটি অভিজ্ঞতা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এখানে এথনিক সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন আগ্রহীরা।


পান ইয়াও এই অভিজ্ঞতা কেন্দ্রের  সহযোগী গবেষক। তিনি বলেন,

‘ এই প্লাটফর্ম সেট আপ করার পর আমরা এখন বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছি। যেমন ঘোড়ার-চুল এমব্রয়ডারি থেকে হস্তশিল্পজাত পণ্য তৈরি করে তা বিক্রির ব্যস্থা করা। এরফলে কারুশিল্পীদের আয় বাড়বে এবং এই শিল্পের সংরক্ষণ ও প্রচার হবে। ’

এই এমব্রয়ডারি ব্যবহার করে নারীরা তৈরি করছেন ব্যাগ, চাদর, পোশাক, টুপি ইত্যাদি। এগুলো বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছেন তারা।

এথনিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও বিকাশের মাধ্যমে এর জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। পর্যটকরাও আসছেন এগুলোর আকর্ষণে। ফলে পুরো এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

গোলাপের সৌরভে

 

চীনে এখন গ্রামীণ পুনর্জীবনের ধারা চলছে। এই ধারায় স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে উঠছে বিভিন্ন কৃষি খামার ও শিল্প। এসব কৃষি খামারে কাজ করে নিজেদের আয় বৃদ্ধি করছেন স্থানীয় গ্রামবাসী নারীরা। চীনের কানসু প্রদেশে এমনি একটি গোলাপ খামারে কাজ করে কিভাবে একজন নারী তার ভাগ্য বদলেছেন । চলুন শোনা যাক সেই গল্প।

 

গান শুনতে শুনতে কাগজের বাক্সে গোলাপ ফুল ভরছেন সু শুছিন। ৩২ বছর বয়সী নারী সু শুছিন চাকরি করেন একটি গোলাপ ফুল উৎপাদনকারী কোম্পানিতে। গোলাপ ফুল তার জন্য নিয়ে এসেছে সৌভাগ্যের সুবাতাস। চীনের কানসু প্রদেশের লিনসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারের ফুহান টাউনশিপে গড়ে উঠেছে গোলাপ ফুলের বড় খামার। গ্রিন হাউজে এখানে চাষ করা হচ্ছে গোলাপ ফুল। এখানে রীতিমতো রোজ গিগাফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। ফুহান টাউনশিপে বাস করেন চল্লিশ হাজারের মতো বাসিন্দা। পাঁচশর চেয়ে বেশি বাসিন্দার কর্মসংস্থান হয়েছে গোলাপের গ্রিনহাউজে।

সু শুছিন এখানকারই নারী। তার কর্মসংস্থান হয়েছে এখানে। সু প্রতিদিন চার হাজারের বেশি তাজা ফুল প্যাকেটে ভরেন। তিনি কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে কাজ করেন। তিনি জানান এই চাকরির ফলে তার জীবনে এসেছে স্বাচ্ছন্দ্য। তার রোজগার বেড়েছে।

 

 পরিবারের জীবনমানও বাড়াতে  পেরেছেন এখানে উপার্জিত অর্থ দিয়ে।

সু এর মতে, এলাকার অনেক নারীর জীবনেই এখন সুবাতাস বইছে গোলাপ চাষের কারণে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

ছোট্ট মেয়ে নিউ নিউ

 

ছোট্ট মেয়ে নিউ নিউ। তার বাবা মা দুজনেই শ্রবণ প্রতিবন্ধী। নিউ নিউ ছয় বছর বয়সেই বাবা মায়ের কাজে সহায়তা করছে । সে তার বাবা মায়ের ফুট স্পার দোকানে অনুবাদকের কাজ করে। সে সাইন ল্যাংগুয়েজ থেকে চীনা ভাষায় গ্রাহকদের বুঝিয়ে দেয় সবকিছু। চলুন শোনা যাক নিউ নিউর গল্প।

 

মাত্র ছয় বছর বয়সেই বাবা মায়ের প্রতিষ্ঠানে সহায়তা দিচ্ছে হু ইয়ুনচিয়া। ছোট্ট এই মেয়েটি চীনের সিচুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেংতু শহরের বাসিন্দা।তার ডাক নাম নিউ নিউ।

 হু ইয়ুনচিয়ার বাবা হু ইয়ং একজন বাক ও শ্রবণ  প্রতিবন্ধী। শৈশবে তীব্র জ্বরের পর কথা বলা ও কানে শোনার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় তার। অনেক কষ্ট করে তিনি লেখাপড়া শিখেছেন। তবে প্রতিবন্ধিতার জন্য ভালো চাকরি পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। চাকরি পেলেও বেশিদিন সেখানে কাজ করা হয়ে ওঠে না। তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন।

তিনি ফুট স্পা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১৯ সালে ছেংতু শহরে একটি দোকান করেন।

নিউ নিউর মাও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তিনি তার স্বামীকে ফুট স্পা দোকানের কাজে সাহায্য করেন। সৌভাগ্যক্রমে  নিউ নিউ এর কোন প্রতিবন্ধিতা নেই। সে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলতে পারে, শুনতেও পারে। বাবা মায়ের কাছ থেকে দুই বছর বয়সে সে সাইন ল্যাংগুয়েজ শেখে।

 চার বছর বয়স থেকে বাবা মাকে সাহায্য করা শুরু করে। নিউ নিউ দোকানে আসা গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সে বাবা মায়ের বক্তব্য অনুবাদ করে গ্রাহকদের জানিয়ে দেয়।

এই দোকানে হু দুজন কর্মচারী রেখেছেন। তারাও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। নিজে প্রতিবন্ধী বলেই অন্য প্রতিবন্ধীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হু তাদের চাকরি দিয়েছেন। সকলের কাজেই সহায়তা করে নিউ নিউ। সে তার কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষা শেষ করে এখন প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হয়েছে। স্কুল ছুটি হলেই দোকানে চলে আসে নিউ নিউ।

ফুট স্পার গ্রাহকরা নিউ নিউকে খুব পছন্দ করে। ফুটফুটে মেয়েটি যখন তার সুরেলা কণ্ঠে কাউকে বলে বাবা আপনাকে এই মলমটা বাড়ি গিয়ে ব্যবহার করতে বলেছেন কিংবা আগামিকাল দোকানে একটা বিশেষ অফার শুরু হবে তখন  গ্রাহকরা খুব মজা পান।

 অবশ্য নিউ নিউর বাবা মনে করেন এখন মেয়ে বড় হচ্ছে। প্রাইমারি স্কুলে লেখাপড়ার চাপ কিন্ডারগার্টেনের চেয়ে অনেক বেশি। এখন সে দোকানে যত কম সময় দেয় ততোই ভালো। এখন তার মন দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে। 

অন্যদিকে নিউ নিউ মনে করে বড় হয়ে সে বাবা মাকে আরও অনেক বেশি সহায়তা করবে। এই ব্যবসাকে অনেক বড় করে গড়ে তুলবে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

 

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

কণ্ঠ:  শান্তা মারিয়া,  শুভ আনোয়ার, আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল