কার্বন ডাইঅক্সাইড সম্পর্কে সবাই জানে। বাতাসের স্বাভাবিক একটি অংশ এটি। তবে চীনা বিশেষজ্ঞরা কার্বন ডাইঅক্সাইডকে নতুন একটি জিনিসে পরিণত করেছেন। নতুন জিনিসটি হলো চিনি।
চিনি গুরুত্বপূর্ণ একধরনের উপাদান, যেটি দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত। কৃত্রিম চিনি খাদ্য, ওষুধ ও নির্মাণ শিল্পের জন্য উপাদান যোগান দিতে এটি।
দু বছর আগে, চীনের বিজ্ঞান একাডেমির থিয়ান চিন বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউট কার্বন ডাইঅক্সাইড দিয়ে মাড় তৈরি করতে সক্ষম হয়। তারপর এর ভিত্তিতে এ গবেষণালয় তালিয়ান রাসায়নিক পদার্থবিদ্যা ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সহযোগিতা করে কার্বন ডাইঅক্সাইডকে চিনিতে পরিণত করে।
একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে কার্বন ডাইঅক্সাইডকে বিভিন্ন প্রভাবকে দিয়ে ১৭ ঘন্টার মধ্যে গ্লুকোজসহ ৪টি বিভিন্ন ধরনের চিনি পাওয়া যায়। এটা বিদ্যমান রাসায়নিক চিনি উৎপাদন পদ্ধতির তুলনায় বেশি কার্যকর। আখসহ কৃষিপণ্য থেকে চিনি বের করতে লম্বা সময় লাগে, তবে এ পদ্ধতিতে মাত্র কয়েক ঘন্টা সময় লাগে।
এ পদ্ধতির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি নির্ভুল। চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের চিনি তৈরি করা যায়। কী ধরনের চিনি তৈরি করা হচ্ছে তা পরীক্ষার প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে মানুষ।
জার্মান বিজ্ঞান একাডেমির শিক্ষাবিদ ম্যানফ্রেড রেইটজ এ পদ্ধতির ইতিবাচক মূল্যয়ন করেছেন। তিনি মনে করেন, চীনা গবেষকদের এ আবিষ্কার নমনীয়, বহুমুখী ও কার্যকর চিনি পাওয়ার পদ্ধতি এবং সবুজ কেমিক্যালের জন্য এটা একটি নতুন সম্ভবনা দেখিয়েছে।
প্রকৃতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বিদ্যমান মনোস্যাকারাইড হচ্ছে হেক্সৌজ। এটি পুষ্টির বিপাকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। চিনি মূলত আমাদেরকে তাপ সরবরাহ করে। মানুষের শরীরের ৭০ শতাংশ শক্তি চিনি থেকে আসে।
গবেষণালয়ে সাংবাদিক লাল আঠালো ক্যান্ডি দেখতে পান। এটি খেতে সাধারণ ক্যান্ডির মতো মিষ্টি তবে হেক্সৌজ দিয়ে তৈরি। এর মিষ্টতা সুক্রোজের ৭০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছায় তবে এতে কোনও ক্যালোরি নেই। হজমের উন্নতি এবং ওজন ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এ চিনি। গ্লুকোজ ছাড়া প্রাকৃতিতে হেক্সৌজ খুব বেশি না। তবে এখন কৃত্রিম হেক্সৌজ তৈরি করতে পারে বিজ্ঞানীরা। এখন কোনও কোনও দেশে এমন হেক্সৌজ দিয়ে তৈরি খাবার বাজারে এসেছে। পানীয়, কেকসহ নানা খাবারে কৃত্রিম হেক্সৌজ ব্যবহার করা গেলে তা নতুন একটি শিল্পে পরিণত হতে পারে।
২০২২ সালে চীন ২৫৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার মূল্যের চিনি রপ্তানি করে, তা আগের বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। একটি দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে কৃত্রিম চিনি প্রযুক্তি দেশের উন্নয়নে চিনির চাহিদা সহজে পূরণ করতে পারে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে পারে।
নতুন পদ্ধতিতে পাওয়া চিনি একদিকে খাবার ও ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে অন্যদিকে শিল্পে জৈব উত্পাদনের গুরুত্বপূর্ণ এক ধরনের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চীন বিশ্বের মোট আবাদি জমির ৯ শতাংশ এবং মোট মিঠা পানির ৬ শতাংশ দিয়ে বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশের মানুষের খাদ্য সংস্থান করে। এটি অসাধারণ এক সাফল্য। আর নতুন গবেষণার সাহায্যে শিল্প উত্পাদনের মাধ্যমে আরও সহজে চিনি পাওয়া যাবে এবং জমি ও পানির উপর মানুষের নির্ভরতা কমবে। এটিও অসাধারণ এক সফলতা।
বেইজিং রাসায়নিক প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক চাং ই ফেই মনে করেন, আরও কম শক্তি ও সময় ব্যয় করে আরও নির্ভুলভাবে উচ্চ মানের চিনি তৈরি করা চিনি শিল্পের জন্য একটি নতুন পথ দেখিয়েছে।
নিম্ন-কার্বন উন্নয়ন এখন এটি সাধারণ ধারা এবং এই প্রেক্ষাপটে কার্বন ডাইঅক্সাইডের ব্যবহার আরও গুরুত্বপূর্ণ। কৃত্রিম কার্বোহাইড্রেট তৈরিও একটি কার্বন ডাইঅক্সাইড খরচ করার প্রক্রিয়া। কার্বন ডাইঅক্সাইডকে স্টার্চ ও চিনিসহ মানবজীবনের প্রয়োজনীয় জিনিসে পরিণত করা কার্বন ডাইঅক্সাইডের নির্গমন হ্রাস এবং নিম্ন-কার্বন লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। (শিশির/রহমান/রুবি)