মহাকাশে কৃষিকাজ কীভাবে সম্ভব? | শেকড়ের গল্প | পর্ব ৪৪
2023-11-15 19:35:58

                     


                         

এবারের পর্বে রয়েছে

১. মহাকাশে কৃষিকাজ করছে চীনের নভোচারীরা

২. গ্রিন হাউজে চাষ করে লাভ কয়েকগুণ

৩. বিআরআই পাল্টে দিচ্ছে শ্রীলংকার কৃষি চিত্র

 

বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।

কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।

 

 

মহাকাশে কৃষিকাজ করছে চীনের নভোচারীরা

মহাকাশে সবজি বাগান তৈরি করে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তৈরি করেছে চীনের নভোচারীরা। মহাকাশ স্টেশন থিয়ানকোং এ  শেনচৌ ১৬ এর নভোচারীরা সেখানে উৎপাদিত তাজা লেটুস পাতা খেয়েছেন।

মহাকাশে স্পেস স্টেশনের ভিতরে যেন সবজি চাষ করা যায় সেই গবেষণাও চলছে চায়না অ্যাস্ট্রোনট রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে। মহাকাশ স্টেশনের ভিতরে স্বল্প পরিসরে ছোট ছোট কাপে চাষ করা যায় বিভিন্ন রকম সবজি। চায়না অ্যাস্ট্রোনট রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের গবেষক ইয়াং রেনজে জানিয়েছেন তার ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতার কথা।

         ইয়াং রেনজে, গবেষক, চায়না অ্যাস্ট্রোনট রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার

“আলোর ব্যবস্থা তিন রঙের রশ্মি দিতে পারে । লাল, নীল ও সাদা। সঠিক ফ্রিকোয়েন্সি ও ঘনত্বের আলোকরশ্মি দিয়ে উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় আলোকব্যবস্থা সৃষ্টি করা যাচ্ছে। এই কাপের আকৃতির চাষ ডিভাইসগুলোর ভিতরে উদ্ভিদের শিকড় জায়গা করে নিতে পারে সুবিধাজনকভাবে। মাটি সদৃশ উপাদানকে বলা হয় সাবস্ট্রেট যা প্রথমে শুকনো থাকে। কক্ষপথে নভোচারীরা পানি দেয়ার পর এটি উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য উপযোগী হয়।“

গবেষকরা এখন গবেষণা করছেন নতুন প্রজন্মের মহাকাশভিত্তিক সবজি চাষ প্রযুক্তির উপর।

২০১৬ সালের শেনচৌ ১১ মিশন এবং ২০২২ সালের শেনচৌ ১৪ মিশনে নভোচারীরা মহাকাশ স্টেশন থিয়ানকোং এর ভিতরে  লেটুস, গম, ধান এবং অ্যারাবিডোপসিস জন্মাতে পেরেছিলেন। উদ্ভিদ জন্মানোর জন্য সাবস্ট্রেট ব্যবহার করা হয়।  এই সাবস্ট্রেট রিসাইকেল করাও সম্ভব। 

ভবিষ্যতে এই মহাকাশ সবজি খামার থেকে নভোচারীরা খাবার, অক্সিজেন এবং পানি পাবেন। পাশাপাশি এটা নভোচারীদের গবেষণার প্লাটফর্মও তৈরি করবে। উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য পরিবেশের প্রভাব, উদ্ভিদের বৃদ্ধি, গঠন ও জৈব রসায়নে কি ধরনের প্রভাব ফেলে সে বিষয়ে মূল্যবান গবেষণা করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও করা যাবে। লেটুস, টমেটোসহ অনেক ধরনের সবজিচাষ সম্ভব হচ্ছে এই গবেষণা খামারে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: এইচআরএস অভি

 

গ্রিন হাউজে চাষ করে লাভ কয়েকগুণ

অসময়ে সবজির যোগান দিতে বিশ্বের জনপ্রিয় পদ্ধতি গ্রিন হাউজ। বাইরে থেকে পোকামাকড় ঢুকতে না পারায় ফসলের গুণগত মানও ভালো থাকে। চীনের ইনার মঙ্গোলিয়ার বিভিন্ন গ্রামে গড়ে উঠেছে এমন গ্রিন হাউজ। টমেটো, শশাসহ  নানা জাতের সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে এখানে। এছাড়া রসালো আঙ্গুর ফলেরও চাষ করা হচ্ছে এসব গ্রিন হাউজে। আর এ ব্যবস্থায় চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

কৃষি ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছে গ্রিন হাউজ। এতে একদিকে যেমন ফলন বেশি পাওয়া যায় অন্যদিকে বছরের যে কোন সময় শস্য চাষ করা যায়।

সবজির পাশাপাশি এখানে চাষ করা হয় রসালো আঙ্গুর। মিষ্টি স্বাদের হওয়ায় এ ধরনের আঙ্গুরের ভালো চাহিদা রয়েছে এ অঞ্চলে।

গ্রিন হাউজে ব্যবহার করা হয় প্লাস্টিকের স্বচ্ছ আবরণ। এজন্য সহজে পোকামাকড় ঢুকতে পারে না। কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম হওয়ার কারণে কীটনাশকের ব্যবহারও খুব কম হয়।

        সিং চ্যাংছিং, স্থানীয় প্রযুক্তিবিদ

"আমার নাম সিং চ্যাংছিং। আমি সিংআনমাং অঞ্চলের পিংআন গ্রামের চানঈ খামারের একজন প্রযুক্তিবিদ। এখানে ১০০টিরও বেশি গ্রিনহাউস আছে। প্রতিটি সবজি গ্রিনহাউসের দৈর্ঘ্য ৫০ মিটার, চওড়া ৮ মিটার, আয়তন ৪০০ বর্গমিটার।"

 

       কু সিয়াউ লিং, পিংআন গ্রামের কৃষক

“আগে আমি যেসব জায়গায় কাজ করেছি, সেখান থেকে ভালো অভিজ্ঞতা নিয়েছি। এরপর গেল বছর পাঁচটি গ্রিনহাউস কিনেছি আমরা। গ্রিনহাউসে সবজি চাষ করলে আয় বেশি হয়। এখানে আমি সবজি চাষ করি আর আমার স্বামী সবজি বিক্রি করেন।“

উৎপাদিত কৃষি পণ্যগুলো বেশিরভাগ বিক্রি হয় অনলাইনে। আর এজন্য কাজ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি।

সিং চ্যাংছিং বলেন, "এখানকার কৃষিপণ্যগুলো আমরা সব অনলাইনে বিক্রি করি। অনলাইনে পণ্য বিক্রি করার জন্য নির্ধারিত ব্যক্তি আছেন। আমরা বিক্রয় নিয়ে চিন্তা করি না। এ গ্রিনহাউসগুলো দেখাশোনার জন্য ৩০ জনের মতো লোক প্রয়োজন হয়। তবে আমরা এমন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করি তাতে চার -পাঁচজন লোকই যথেষ্ঠ।" 

এসময় কু সিয়াউ লিং বলেন “এ বছর গ্রিনহাউসে শসা, টমাটো আর কাউপিয়া চাষ করেছি। বেশ ভালো উপার্জন হয় আমাদের। আশা করছি, আগামী বছর আমাদের আয় আরো বৃদ্ধি পাবে আর জীবনযাত্রা আরো সমৃদ্ধ হবে।“

এমন একটি গ্রিনহাউস নির্মান করতে ব্যয়  হয়  ৪০ হাজার ইউয়ান। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৬ লাখের কাছাকাছি।  আর নির্মাণের পর এ ধরনের গ্রিন হাউজ ব্যবহার করা যায় ৩০ থেকে ৫০ বছর।

প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি

সম্পাদনা:  শিহাবুর রহমান

 

বিআরআই পাল্টে দিচ্ছে শ্রীলংকার কৃষি চিত্র

চীনের সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ বিআরআইয়ের ফলে পালটে গেছে শ্রীলংকার কৃষি অর্থনীতির চিত্র। নারিকেল চাষে স্থানীয় কৃষকদের দারুণ সব কৌশল শেখাচ্ছেন চীনের কৃষি বিশেষজ্ঞরা। এই উদ্যোগে শ্রীলঙ্কার নারিকেল শিল্পের প্রসার ঘটেছে কয়েকগুণ।

শ্রীলঙ্কায় নারকেল চাষের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। নারিকেলের পানি বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় পানীয় হিসেবে পান করা হয়। দেশটির সরকারী পরিসংখ্যান বলছে, শ্রীলঙ্কার কৃষি উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশই নারিকেল। 

বেশ কয়েক বছর আগে খরায় এ শিল্প অনেকটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ শিল্প খাত। কিন্তু দশ বছর আগে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)- উদ্যোগের ফলে অন্যান্য দেশের মতো শ্রীলংকার চিত্রও পালটে গেছে অনেকটা। নারিকেল শিল্পে আরও সমৃদ্ধ হয়েছে দেশটি।

বিআরআই উদ্যোগের ফলে  এ শিল্পে সহযোগিতা বাড়িয়েছে চীন। চীনের দক্ষ গবেষক প্রতিনিধি দলের সহযোগিয়তায় নারকেল বাগানে।

শ্রীলঙ্কার স্থানীয় কৃষকদের দিকনির্দেশনা প্রদান এবং নতুন চাষাবাদের কৌশল শেখাতে  চীনা কৃষি বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। ফলে বেড়েছে নারিকেল উৎপাদন।পাশাপাশি সমন্বিত চাষেও এসেছে  উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

প্রতিবেদন: আফরিন মিম

সম্পাদনা:  মাহমুদ হাশিম

 

এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচআরএস অভি।

এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল 

সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী