কুলিয়াং ফ্রেন্ডস, সংস্থাটি আমেরিকান পরিবার এবং তাদের বংশধরদের নিয়ে গঠিত। যারা একসময় পূর্ব চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের কুলিয়াং-এ বাস করত, তারা সক্রিয়ভাবে কুলিয়াং-এর ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রচার করে চলেছে, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বা বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদানে উৎসাহ দিচ্ছে। আজকের অনুষ্ঠানে এই সংস্থার সদস্যদের মনমুগ্ধকর গল্প জানাবো।
ফুজিয়ান উপভাষায় "কুলিয়াং" হল স্থানীয় কুলিং এলাকার নাম। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর কাছে একটি আন্তরিক চিঠিতে, কুলিয়াং ফ্রেন্ডস-এর সদস্যরা তাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ব্যক্ত করেন এবং কুলিং এলাকার সাথে তাদের গভীর সম্পর্কের গল্প শেয়ার করেন।
কুলিয়াং ফ্রেন্ডস এর প্রতিষ্ঠাতা এলিন ম্যাকলনিস ৩০ বছর চীনে কাটিয়েছেন। ম্যাকলনিস বলেন, “আমার একটি চীনা নাম মু ইয়ানলিং, আমি যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছি, চীনে ৩০ বছর বাস করেছি। আমার পরিবারের সাথে কুলিয়াংয়ের একটি দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক আছে।
এলিন ম্যাক্লনিসের শ্বশুর, ডোনাল্ড ম্যাকিনিস, ১৯৪০ সালে একজন তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়েরর ছাত্র হিসাবে ১৯৪০ সালে ফুচৌতে আসেন এবং স্থানীয় ইংহুয়া মিডল স্কুলে পড়াতেন। তিনি চীনের সঙ্গে গভীর ভালোবাসা গড়ে তুলেছিলেন। পরে তিনি চীনা বিমান বাহিনীর আমেরিকান স্বেচ্ছাসেবক গ্রুপ- ফ্লাইং টাইগার্স-এ যোগ দেন, যা চীনা জনগণকে জাপানি আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করেছিল। যুদ্ধের পরে, তিনি দু’বার শিক্ষক হিসাবে চীনে ফিরে আসেন, একবার ফুচিয়ান খ্রিস্টান বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং আবার উই বিশ্ববিদ্যালয়ে। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৮৪ বছর।
এলিন ম্যাকলনিস বলেন,
"আমার শ্বশুরের চীনের প্রতি গভীর স্নেহ ছিল এবং তিনি ৮৪ বছর বয়সে উই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়াতে ফিরে আসেন, যা সহজ নয়। কিন্তু তিনি বলেছিলেন যে, তিনি ফিরে আসতে চান। তার আনন্দ ছিল অপরিসীম। তার মৃত্যুতে, তিনি তার ছাইয়ের একটি অংশ ফুজিয়ানে ফিরিয়ে আনার এবং তার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা মিনজিয়াং নদীতে ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।”
এলিন ম্যাকলনিসের স্বামী পিটার ম্যাকিনিস ১৯৪৮ সালে ফুচৌতে জন্মগ্রহণ করেন।
এলিন ম্যাকলনিস বলেন,
"এই বাস্কেটে একটি শিশু আছে, শিশুটি ছিল আমার স্বামী। যখন সে প্রথম কুলিয়াং-এ এসেছিলেন, তখন একজন কুলিয়াং মা তাকে পাহাড়ের উপরে নিয়ে আসেন। কারণ তারা জানত যে এই কুলিয়াং মা তাকে সবচেয়ে ভালো দেখাশোনা করবেন। এটা আমার স্বামীর পাহাড়ে ভ্রমণের স্মৃতি নয়, তা আমাদের অসাধারণ কুলিয়াং বন্ধুদের প্রতি স্মৃতি। তারা এখানে বিদেশি বন্ধুদের দেখাশোনা করত এবং তাদের সাথে পরিবারের মতো আচরণ করত”।
২০২৩ সালের জুন মাসে, কুলিয়াং ফ্রেন্ডস সদস্যরা কুলিয়াং-এ জড়ো হয়েছিল, যেখানে তারা তাদের স্মৃতি এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিল। সদস্যরা এখানে তাদের স্মরণীয় সময়গুলো স্মরণ করেন।
কুলিয়াং ফ্রেন্ডস এর সদস্য পু গুয়াংচু বলেছেন ,
"আমার বাবা চীনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং আমিও চীনে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার ১২ বছর বয়স পর্যন্ত আমি চীনে থাকতাম। প্রতি গ্রীষ্মে আবহাওয়া যখন খুব গরম, আমরা তখন কুলিয়াংয়ে যাই। আমাদের বাড়ির চারপাশে পাইন গাছ এবং আপনি গান গাওয়ার মত পাইনে বাতাসের শব্দ শুনতে পাবেন। আমরা অবাধে পাহাড়ের উপর দিয়ে সুইমিং পুলে যেতে পারতাম।"
২০২৩ সালের ২৮ জুন, ফুজিয়ান প্রদেশের ফুচৌ শহরে "বন্ড উইথ কুলিয়াং: ২০২৩ চীন-মার্কিন বেসরকারি মৈত্রী ফোরাম" শিরোনামের একটি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ফোরামে একটি অভিনন্দনপত্র পাঠিয়ে বলেন যে, তিনি কুলিয়াং ফ্রেন্ডস এর সদস্যদের কাছ থেকে চিঠি পেয়ে খুব খুশি হয়েছেন এবং চিঠি থেকে কুলিয়াং এর সাথে তাদের সংযোগ সম্পর্কে আরও চিত্তাকর্ষক গল্প জানতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, তাদের মধ্যে মি. লেন বিলিং আছেন, বয়স ১০৩ বছর, তিনি ছবি তোলার মাধ্যমে কুলিয়াং-এ সুন্দর সময় রেকর্ড করেছেন, ড. ব্লিস, যিনি শেষ কথায় লিখেছেন "আমি চীনাদের ভালোবাসি", এবং মিস্টার ডোনাল্ড ম্যাকলনিস, যিনি তার ছাই মিনজিয়াং নদীতে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
তাদের গল্প আবারও দেখিয়েছে যে, চীনা ও আমেরিকান জনগণ ব্যবস্থা, সংস্কৃতি ও ভাষার পার্থক্যকে অতিক্রম করতে পারে এবং গভীর বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারে।
এলিন ম্যাকলনিস বলেন,
"আমি মনে করি প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যা বলেছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হল যে, দুটি দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব একটি ভাল সম্পর্কের চাবিকাঠি। আমি সত্যিই এটি বিশ্বাস করি যে, আমাদের বন্ধুত্ব হল আমাদের ভাল সম্পর্কের ভিত্তি।"
২০২৩ সালের ৩ জুলাই, ১০৩ বছর বয়সী লেন ভিডিও লিংকের মাধ্যমে শৈশবে তার বাড়ি কুলিয়াং-এ "ক্লাউড ভিজিট" করেছিলেন। তিনি এখনও মনে রেখেছেন ১৯২০ এবং ১৯৩০ সালের সময় কুলিয়াং কেমন ছিল এবং ভিডিওটি দেখার সময় বারবার "পিং'আন"--একটি চীনা শব্দ যার অর্থ নিরাপদ বলেন।
কুলিয়াং ফ্রেন্ডসের সদস্যরা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে লেখা চিঠিতে বলেছেন, কুলিয়াং-এর ইতিহাস আমাদের বলে যে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির লোকেরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, তারা আশা করে যে, তাদের প্রচেষ্টা সেতু নির্মাণে অব্যাহত থাকবে। দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে বন্ধুত্ব এবং কুলিয়াং চেতনা ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
সি চিন পিং তার জবাবি চিঠিতে আশা প্রকাশ করেন যে, কুলিয়াং বন্ধুদের সদস্যরা কুলিয়াং গল্প লিখতে থাকবে এবং বিশেষ বন্ধন এগিয়ে নিয়ে যাবে, যাতে দু’দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব হাজার বছরের মতো স্থায়ী এবং মজবুত থাকে।