১৪-১৭ নভেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোয় এপেক সম্মেলনে অংশ নিতে যান এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন।
কোন সন্দেহ নেই যে, চীন-মার্কিন সম্পর্ক বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। দু’দেশের সম্পর্ক মানবজাতির ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত। প্রেসিডেন্ট সি একবার বলেছেন, চীন-মার্কিন ভালো সম্পর্কের ১০ হাজার কারণ আছে, আর খারাপ করার কোন কারণ নেই।
গত বছর ইন্দোনেশিয়া বালি দ্বীপের বৈঠকের পর চীন ও মার্কিন প্রেসিডেন্টদ্বয়ের আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বৈঠক দু’দেশ এমনকি বিশ্বের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
তাহলে এবারের শীর্ষবৈঠক কী কী বিষয়ের ওপর দৃষ্টি রাখে?
১. অর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা নিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক আগের চেয়ে ভাল হয়ে উঠছে।
জুন মাস থেকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বিনিময় বাড়ছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী যথাক্রমে চীন সফর করেছেন। চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ও আর্থিক কর্মগ্রুপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অক্টোবর মাসে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান এবং সেখানে কৌশল ও শিল্প, বাণিজ্য মহলের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। নতুন দফা চীন-মার্কিন অর্থ-বাণিজ্য সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। চীনের উপ প্রধানমন্ত্রী হ্য লি ফেং যুক্তরাষ্ট্রে সেদেশের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেনের সঙ্গে বৈঠকের পর দু’দেশের প্রেসিডেন্ট পর্যায়ে বৈঠকের কথা ঘোষণা করা হয়।
সদ্যসমাপ্ত ষষ্ঠ চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলায় যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে এতে অংশ নেয় এবং খাদ্য ও কৃষি প্রদর্শক কোম্পানির মধ্যে ৫০.৫ কোটি ডলার মূল্যের চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
৯ নভেম্বর থেকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইটের সংখ্যাও সপ্তাহে ৪৮ থেকে ৭০-এ উন্নীত হয়।
এসব তথ্য থেকে বোঝা যায়, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতার চাহিদা এখনও বেশি।
২. সক্রিয় বেসরকারি আদান-প্রদান
২৩ অক্টোবর ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম এক সপ্তাহের মতো চীনে সফর করেন। তিনি হংকং, বেইজিং, শাংহাই, কুয়াং তুং ও চিয়াংসুসহ নানা জায়গায় যান।
তার এ সফরকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্থানীয় যোগাযোগের "বরফ ভাঙার ট্রিপ" হিসেবে মনে করা হয়।
আর একই সময়ে মার্কিন ফ্লাইং টাইগারস পুরাতন সৈনিক হ্যারি মোয়ার চীনে তার ১০৩তম জন্মদিন উদযাপন করেছেন। এই শতবর্ষী প্রবীণ জন্মদিনে এমন প্রত্যাশা করেন: "আমি বিশ্বশান্তি কামনা করি এবং সব দেশের মানুষ যেন সম্প্রীতিতে বাস করে।"
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ভাল সম্পর্ক বজায় রাখা দু’দেশের মানুষের অভিন্ন প্রত্যাশা।
৩. যুক্তরাষ্ট্রকে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে
চীন–যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের বৈঠক বিশ্বের প্রত্যাশায় সাড়া দিয়েছে। তবে, দু’দেশের জন্য সমান ও পরস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে স্থিতিশীল সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
বালি দ্বীপের মতৈক্য বাস্তবায়ন করেনি যুক্তরাষ্ট্র। চীনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে দমনাভিযান করছে, দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যু ও তাইওয়ান সমস্যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কথা ও কাজে এক নয়।
দু’দেশের প্রেসিডেন্ট দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা করবেন এবং আমরা জানি কথার চেয়ে কাজ আরও গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু দু’দেশের সম্পর্কে কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে; সেহেতু যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের উদ্বেগ নিরসনে বাস্তব ও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে।(শিশির/তৌহিদ/রুবি)