যেভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে চীনের ফলের বাজার | শেকড়ের গল্প | পর্ব ৪৩
এবারের পর্বে রয়েছে
১. যেভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে ফলের বাজার
২. ভালো মানে মধু উৎপাদন করে ব্রাজিল
৩. পরিযায়ী পাখির নিরাপত্তায় বিশেষ নজর দিয়েছে চীন
বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।
কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।
যেভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে চীনের ফলের বাজার
ফলের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ কাজ করে চীনাদের। দেশটির মার্কেটগুলোতে এখন রসালো ফলের আধিপত্য। মিষ্টি স্বাদ ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হওয়ায় এসব ফলের চাহিদা বেড়েছে। সুপার মার্কেটগুলোতে ভিড় করছেন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আস ক্রেতারা। ফল মার্কেটের বিক্রেতারা বলছেন গেল কয়েক বছরের তুলনায় এবার বেশ ভালো বেচাকেনা হচ্ছে।
মৌসুমী ফলের রাজ্য গড়েছেন দোকানিরা। মিষ্টি স্বাদের রসালো ফলের চাহিদা বাড়ায় পূর্ব এবং মধ্য চীনের পাইকারি বিক্রেতা এবং সুপার মার্কেটগুলোতে ফল বিক্রি বেড়েছে কয়েক গুণ।
পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশের ফেংসিন কাউন্টির এই ফলের বাজারটি জমে উঠেছে। দূর দূরান্ত থেকে ফল কিনতে ছুটে আসেন।
হ লিনহুয়া, পাইকারি বিক্রেতা
"কিউই, অরেঞ্জ ও পার্সিমনসহ সব ধরনের রসালো ফল খাওয়ার এখন আসল সময়। এসব ফলের এখন ব্যাপক চাহিদা। বর্তমানে প্রতিদিন আমাদের বিক্রির পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কিলোগ্রাম।"
মধ্য চীনের হনান প্রদেশের সিয়াংছেং কাউন্টির এই সুপারমার্কেটটি হরেক রকম ফলের জন্য বিখ্যাত। সতেজ ফল কিনতে প্রায় সময় ভিড় করেন ভোক্তারা।
স্থানীয় সুপার মার্কেটের ম্যানেজার সান ওয়েঞ্চিয়ে বলেন, সরবরাহ ব্যবস্থা ভালো থাকায় বাগান থেকে কম সময়ের মধ্যে ফলগুলো সুপার মার্কেটে আনা হয়।
হেক্টরের পর হেক্টর জায়গাজুড়ে ফলের আবাদ করা হয় চীনে। আর আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে আগের চেয়ে ফলনও বেড়েছে
প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি
সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান
ভালো মানে মধু উৎপাদন করে ব্রাজিল
বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় বিস্ময়কর এক পানীয় মধু। । বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মধুর উৎপাদন হলেও ব্রাজিলের মধুর রয়েছে বিশেষ চাহিদা। এর মানসম্মত উপাদান ও পুষ্টিগুনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয় এই মধু।
দক্ষিণ ব্রাজিলের রাজ্যে সাও পাওলো । এই রাজ্যের একজন মধু চাষি মৌরিসিও রদ্রিগেস। তিনি তার মৌমাছির প্রতি খুব যত্নবান। বংশ পরম্পরায় তৃতীয় প্রজন্মের মধু চাষি তিনি। ৬৩ বছর বয়সী রদ্রিগেসের মধু উৎপাদনের এই ব্যাবসা কয়েক বছর আগে মারাত্মক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
মৌরিসিও রদ্রিগেস, মৌমাছি চাষি
"কয়েক বছর আগে এই অঞ্চলে আখের উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে আমাদের একটি বড় সমস্যা ছিল। তা প্লেন কীটনাশক স্প্রে করা হয়। কিন্তু এর ফলে আমার অনেক মৌমাছি মারা যায়।"
বিশ্বের বৃহত্তম আখ উৎপাদনকারী দেশ ব্রাজিল।তাই স্থানীয় জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মৌমাছির উপর অনেক নির্ভর করতে হয় তাদের।
একদিকে কীটনাশক দিলে মৌমাছির ক্ষতি অপরদিকে কীটনাশক না দিলে আখের উদাপাদনে ক্ষতি।
এই উভয় সংকট সমাধানে এগিয়ে আসে চীনের বৃহত্তম কৃষি কোম্পানি কফকো পরাগায়ন প্রকল্প থেকে শুরু করে স্থানীয় মৌমাছির বংশ বিস্তার রক্ষার গুরুত্ব দেয়া হয়।
ত্রিপোদি তার পরিসংখ্যানে তুলে ধরেন যে, মৌমাছিরা তাদের খাবারের সন্ধানে ১.৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।
মৌমাছির বাসার চারপাশে একটি ব্যাসার্ধ তৈরি করে স্যাটেলাইট ম্যাপিং ব্যবহার করে কোম্পানিটি।
এই ডেটা পাইলটদের সাথে শেয়ার করা হয়, তারা কীটনাশক প্রয়োগ করার আগে তাদের বিমানের কম্পিউটার সিস্টেমে পুরো তথ্য ইনপুট দেয়। যাতে নিশ্চিত করা হয় যে, বিমানটি বাফার জোনে প্রবেশ করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কীটনাশক স্প্রে বন্ধ হয়ে যায়।
টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কফকো ব্রাজিলে ২০১৪ সাল থেকে কৃষি উনয়নের জন্য দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে।
৫০০ এর বেশি মৌমাছির রাজ্য কে অন্তর্ভুক্ত করে ফসল সংরক্ষণের জন্য একটি মডেল হিসাবে তৈরি করেছে কফকো এর এই প্রকল্প । রড্রিগস এখন তার খামারে মধু উৎপাদন করছেন আগের থেকেও বেশি। এই প্রকল্প যেমন রক্ষা করেছে তার মৌমাছিকে তেমনি ভারসাম্য বজায় রেখেছে কৃষি পরিবেশের।
প্রতিবেদন: এইচএম সৌরভ
সম্পাদনা: এইচআরএস অভি
পরিযায়ী পাখির নিরাপত্তায় বিশেষ নজর দিয়েছে চীন
প্রকৃতি সুরক্ষায় সব সময় অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে চীন। বিশেষ করে পরিযায়ী পাখীদের নিরাপত্তায় আলাদা করে গুরত্ব দেয় দেশটি। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশের একটি ছোট বন থানার অফিসাররা গেল ৪০ বছর ধরেই এই দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয় আইলা পর্বতে উড়ে আসা পাখিদের রক্ষায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তারা।
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশের আইলা বন। এখানে প্রতিবছরই বিভিন্ন দেশ ও প্রদেশ থেকে আগত পরিযায়ী পাখির আশ্রয়স্থল হয়ে উঠে বনটি।
আগত পরিযায়ী পাখিদের নিরাপত্তা দিতে এই বনে কড়া নিরাপত্তা দেন একদল পুলিশ কর্মকর্তা। গেল ৪০ বছর ধরে এই কাজে দায়িত্ব পালন করছেন তারা।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে প্রদেশের নানহুয়া কাউন্টির কাছের পুলিশ স্টেশনের কর্মকর্তারা এই বন টহল দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছেন। আর খুঁজছেন পাখি শিকারের নানা কারণ। s
আইলাও বন সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য ও পাখিদের অন্যতম আশ্রয়স্থলের জন্য সুপরিচিত। এক সময় এই অঞ্চলের বাসিন্দারা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করতো। সে সময় খাবার ও আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে পাখি শিকার করতো তারা।
কিন্তু সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধির পথে এগুচ্ছে এই অঞ্চল। কিন্তু কেউ কেউ এখনো শিকার করেন পাখি। তাই এসব পরিযায়ী পাখির নিরাপত্তায় দিন রাত কাজ করছে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা। রোদ ,বৃষ্টি উপেক্ষা করে সর্বদা দায়িত্ব পালন করে যান তাদের।
কয়েক বছর পরই পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য নির্মাণ করা হয় আশ্রয়স্থল। ২০১০ সালে পাহাড়ে গড়ে তোলা আশ্রয়স্থল নির্মাণে অনেকটা সহজ হয় তাদের দায়িত্বপালনের কাজ। কিন্তু চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় ভয়ংকর বিভিন্ন প্রাণীর মুখোমুখি হওয়া। এমনকি হঠাত করে মৃত গাছে পড়ে যাওয়াও ছিল তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
গেল কয়েক বছরে ধরে পুলিশ বন্যপ্রাণী-সম্পর্কিত কম মামলা পরিচালনা করেছেন। পাশাপাশি বাড়ছে বন্যপ্রাণীর সংখ্যাও।
প্রতিবেদন: আফরিন মিম
সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম
এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচআরএস অভি।
এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।
শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।
পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী