দেহঘড়ি পর্ব-০৪৪
2023-11-12 19:03:37

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং টিসিএম ভেষজের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা ‘ভেষজের গুণ’।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

কনজাংটিভাইটিসের ভাল চিকিৎসা টিসিএম

কনজাংটিভাইটিস হলো একটি চোখের সংক্রমণ যা ‘পিঙ্কআই’ নামেও পরিচিত। বাংলায় এ রোগকে ‘চোখ ওঠা’বলা হয়। কনজাংটিভাইটিস চোখের কনজাংটিভা ঝিল্লির সংক্রামক প্রদাহ। এ রোগ হলে চোখ লাল হয়, ফুলে ওঠে ও চুলকায়। কয়েক ধরনের কনজাংটিভাইটিস খুব সংক্রামক। এটি ব্যাকটেরিয়া যেমন হেমোফিলাস ইজিপটিকাস বা ভাইরাসের সংক্রমণে কিংবা অ্যালার্জি, রাসায়নিক বা শারীরিক কারণের হয়। অপরিচ্ছন্ন হাত দিয়ে চোখে ঘষাঘষি করলে এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

 উপসর্গ

কনজাংটিভাইটিস হলে চোখ লাল হয় ও ফুলে উঠে; জ্বালাপোড়া হয়, চোখের ভেতর অস্বস্তি শুরু হয় এবং সামান্য ব্যথা হয়; রোদে বা আলোতে তাকাতে কষ্ট হয়; চোখ দিয়ে পানি ঝরে; ঘুম থেকে উঠার পর চোখের পাতা দুটো লেগে থাকে; চোখ থেকে আঠালো স্রাব বের হতে থাকে এবং হলুদ রঙের পুঁজ সৃষ্টি হয়। তবে সব উপসর্গ কোনও একজন রোগীর ক্ষেত্রে একসাথে দেখা নাও যেতে পারে। সাধারণত ৭-৮ দিনের মধ্যে উপসর্গগুলো কমে আসে। প্রাথমিক অবস্হায় এ রোগের চিকিৎসা নিলে খুব সহজেই সেরে যায়; তবে চিকিৎসাগ্রহণে দেরি হয়ে কখনও কখনও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

যেভাবে ছড়ায়

ভাইরাসের কারণে কনজাংটিভাইটিস হলে চোখের পানিতে ভাইরাস ভেসে বেড়ায়। যখনই আমরা এই পানি মুছতে যাই, তখনই এটি আমাদের হাতে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সেই হাত দিয়েই আমরা যা কিছুই ছুঁই না কেন, সেখানে ভাইরাস চলে যায়। যেমন কারোর সঙ্গে করমর্দন, টিভি, এয়ারকন্ডিশনার রিমোট, ব্যবহৃত তোয়ালে, বিছানার চাদর, বালিশের কভার, এমনকি মুঠোফোন ইত্যাদিতে চলে আসতে পারে এ ভাইরাস। এজন্য আক্রান্ত ব্যক্তিকে এই সময়ে বাসায় থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়। তার ব্যবহৃত জিনিসপত্রও কিছুটা আলাদা রাখা ভালো।

কনজাংটিভাইটিসের ব্যাপারে টিসিএম দৃষ্টিভঙ্গি

প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থায় কনজাংটিভাইটিসের বিশেষ কোনও চিকিৎসা নেই। চিকিৎসকরা সাধারণত প্রদাহ কমানোর ওপর দৃষ্টি দেন। তবে ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাব্যবস্থা বা টিসিএমে মনে করা হয়, কনজাংটিভাইটিসের জন্য জন্য দায়ী হলো বায়ু ও তাপ, যা আসলে প্রদাহের মূল কারণ। যদি এই প্যাথোজেনিক কারণগুলো শরীর থেকে দূর করা না হয় এবং শরীরে এটা বাড়তে থাকে, তাহলে একটি তীব্র কনজাংটিভাইটিসে পরিণত হতে পারে। সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় গ্রহণ, ভাজা বা মশলাদার খাবার খাওয়া, চোখের অত্যধিক ব্যবহার, তীব্র বাতাসের সংস্পর্শে আসা, অল্প আলো, অপর্যাপ্ত ঘুম এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ।

কনজাংটিভাইটিসের টিসিএম চিকিৎসা

কনজাংটিভাইটিসের টিসিএম চিকিৎসার মূল লক্ষ্য থাকে প্রদাহ কমানো এবং চুলকানি বন্ধ করার জন্য শরীর থেকে বায়ু ও তাপজনিত প্যাথোজেনগুলো বের করে দেওয়া। এর জন্য আক্রান্ত এলাকা মেরিডিয়ানগুলোতে রক্ত ও মূল শক্তি বা ‘ছি’র প্রবাহ উন্নীত করতে হয়। কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হলে উষ্ণ পানি ও সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে নিয়মিতভাবে। কনজাংটিভাইটিস-সৃষ্ট চুলকানি ও অস্বস্তি কমাতে সাময়িকভাবে অপটিক্যাল স্যালাইন দ্রবণ ব্যবহার করা যায় তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সতর্কতা

কনজাংটিভাইটিস হলে কতগুলো সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। যেমন ধুলাবালি, আগুন, আলো ও রোদে কম যাওয়া; ময়লা-আবর্জনাযুক্ত স্যাতসেঁতে জায়গায় না যাওয়া; পুকুর বা নদী-নালায় গোসল না করা; চোখে কালো চশমা ব্যবহার করা এবং টেলিভিশন না দেখা; সম্ভব হলে ১০ থেকে ১৫ দিন বিশ্রাম নেওয়া; এবং সংক্রমিত রোগীদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা।

 

#চিকিৎসার_খোঁজ

প্রথম শ্রেণির ক্লিনিক বেইলি অ্যান্ড জ্যাকসন মেডিকেল সেন্টার

বেইজিংয়ের বেইলি অ্যান্ড জ্যাকসন মেডিকেল সেন্টার বেসরকারি বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রথম শ্রেণির সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্লিনিক। চিকিৎসেবা খাতের অন্যতম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আইখাং গ্রুপের একটি শীর্ষ ব্র্যান্ড হিসাবে এ ক্লিনিক ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, জেনারেল মেডিসিন, মহিলা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা, ডেন্টাল সেবা, বিশেষজ্ঞ পরিষেবা, টিকা, শল্যচিকিৎসা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করে। এ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান বিশ্বের সর্বাধুনিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সুবিধা নিয়ে এসেছে।

 ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের চিকিৎসক দল চীনা ও বিদেশি রোগীদের জন্য ‘ওয়ান-স্টপ’ ‘সমন্বিত’ ‘উচ্চ মানের ও উচ্চ-দক্ষতা’ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে, যাতে রোগীরা উচ্চ-মানের স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে পারে।

চীন ২০০১ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগদান করার ২ বছর পর ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বেইলি অ্যান্ড জ্যাকসন মেডিকেল সেন্টার। শুরুতে এটি ছিল বিদেশি বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি আইখাং গ্রুপের মালিকানায় আসে।

বেইজিংয়ের ছাওইয়াং জেলায় অবস্থিত ক্লিনিকটি ‘সেরা হাসপাতাল ও ক্লিনিক’ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে এবং উচ্চমানের চিকিৎসাসেবার জন্য কূটনীতিকদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়েছে। এর পাশেই রয়েছে প্রথম দূতাবাস এলাকা, বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্র এবং ফরচুন ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টার। হাসপাতালের পরিষেবা এলাকা প্রায় ১০ হাজার বর্গ মিটার। বেইলি অ্যান্ড জ্যাকসন মেডিকেল সেন্টার ২০০৩ সালে বেইজিংয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও হংকংয়ে এর শাখা রয়েছে ১৯৫৮ সাল থেকে।

বেইজিংয়ের বেইলি অ্যান্ড জ্যাকসন মেডিকেল সেন্টারে রোগীদের সমন্বিত চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। চীনা ও বিদেশি উভয় শ্রেণির রোগীদের সর্বোত্তম সেবা দেওয়ার জন্য ম্যান্ডারিন ভাষার পাশাপাশি এখানে রয়েছে ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মী দল।

বিভিন্ন রোগে ডাক্তারি পরামর্শের পাশাপাশি এখানে রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী নানা রোগের ব্যবস্থাপনার সুবিধা। যেমন উচ্চ রক্তচাপ, হাইপারলিপিডেমিয়া, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার ও সেরিব্রোভাসকুলার রোগ এবং স্নায়বিক রোগ।

আরও যেসব রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে হাড় ও অস্থিসন্ধির রোগ, হরমোন ও এন্ডোক্রাইন ব্যাধি, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ, জননাঙ্গের রোগ, চোখ, কান, নাক ও গলার রোগ, শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ত্বকের রোগ, সংক্রমণ, মানসিক ব্যাধি, সাধারণ দন্তচিকিৎসা, কসমেটিক দন্ত চিকিৎসা, ওরাল সার্জারি, অর্থোডন্টিক্স ও শিশুরোগ।    

 

#ভেষজের গুণ

নানা গুণে সমৃদ্ধ মৌরি

মৌরি খনিজ উপাদনসমৃদ্ধ একটি ভেষজ। বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ওষুধে যেমন এটি ব্যবহৃত হয়, তেমনি ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ধরনের রান্নায়। এছাড়া মৌরি কাঁচা চিবিয়ে কিংবা চায়ের মতো গরম পানিতে খাওয়া যায়। এ ভেষজের রয়েছে নানা স্বাস্থ্যগত উপকারিতা। চলুন তাহলে জেনে নিই সেগুলো:

 রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: বহুবর্ষজীবী এই ভেষজে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ মাত্রাকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

ওজন কমায়: মৌরিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা অনেকক্ষণ ধরে পেটভর্তি রাখতে সহায়তা করে এবং খিদে পাওয়া বিলম্বিত করে। এর ফলে শরীরে ক্যালোরি গ্রহণ কমে এবং ওজনও কমে।

ব্যথা উপশম করে: ব্যথানাশক হিসাবে মৌরি ভীষণ কার্যকর। যারা হাঁটু ও কোমরের জয়েন্টগুলোর ব্যথা সারতে চায়, তাদের জন্য দাওয়াই হিসেবে মৌরির জুড়ি নেই।

হজমশক্তি বাড়ায়: পরিপাকতন্ত্র স্বাভাবিক রাখার মাধ্যমে মৌরি হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। কোনও ব্যক্তির পরিপাকতন্ত্র যখন ঠিক থাকে, তখন সহজে খাবার হজম হয় এবং শরীরের মেদ ঝরে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।

হৃদযন্ত্র ভালো রাখে: হৃদযন্ত্র ভালো রাখার ক্ষেত্রে মৌরির গুরুত্ব অপরিসীম। এ ভেষজ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখে। মৌরি শাকও হার্টের পক্ষে খুব ভালো।

প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বাড়ায়: অনেক ক্ষেত্রে নবজাতকরা মায়েদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত বুকের দুধ পায় না। এমন মায়েদের জন্য একটি উত্তম দাওয়াই মৌরি।

 

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।