জু শিয়াও রান: নার্সিং হোমের যুবক
2023-11-11 19:04:31

বয়স্কদের যত্ন প্রায় প্রতিটি পরিবারের ইস্যু। ৬০ বছরের বেশি বয়সী চীনার জনসংখ্যা ২৮ কোটিতে পৌঁছেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন বা এমনকি অক্ষম হয়ে পড়েছেন। প্রত্যেক বয়স্ক ব্যক্তিকে তাদের বার্ধক্য উপভোগ করতে দেওয়া শুধুমাত্র প্রবীণদের সাথে সম্পর্কিত বিষয় নয়, প্রতিটি পরিবারের সুখের সাথেও সম্পর্কিত। বাড়িতে বয়স্করা ভালো যত্নে থাকলে, তরুণরা তাদের চাকরি-বাকরির দিকে ভালো মনোযোগ দিতে পারে। একদল কর্মী আছেন যাদের দায়িত্ব হল সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে বা কমিউনিটিতে বয়স্কদের সেবা করা। তাদের কাজ অনেকের কাছে খুবই তুচ্ছ মনে হতে পারে, কিন্তু তাঁরা তাদের কাজে খুবই সিরিয়াস ও ধৈর্যশীল। বয়স্কদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করা তাদের কাজ।

পুকুরে, প্লাস্টিকের মাছ, জাল ও ছোট বালতি নিয়ে নার্সিং হোমের উঠানে চলছে মজাদার মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। লম্বা চুলের হাসিমুখের বিচারক এই নার্সিং হোমে বয়স্কদের "পিস্তা" এবং তিনি হলেন জু শিয়াও রান। তিনি ১৯৯০ দশকে জন্মগ্রহণকারী একজন সমাজকর্মী। জু শিয়াও রানের প্রধান কাজ হল বয়স্কদের সুখে রাখা।

জু শিয়াও রান বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়ন করেছেন। ২০১৮ সালে একজন পূর্ণ-সময়ের সমাজকর্মী হিসেবে নার্সিং হোমে আসার পর, তিনি বয়স্কদের আরও পরিপূর্ণ ও সুখী জীবনের স্বাদ দিতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখা জ্ঞান কাজে লাগাতে শুরু করেন। তিনি অন্য দুই বন্ধুর সাথে, বয়স্কদের বিভিন্ন শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে, হস্তশিল্প, কোরাস ও স্মার্টফোন ক্লাসের মতো বিভিন্ন বিনোদনমূলক কার্যক্রম ডিজাইন করেন।

বয়স্কদের আধ্যাত্মিক জীবনকে সমৃদ্ধ করা এবং তাদের উদ্বেগ দূর করা, সহজ মনে হলেও বাস্তবে এতো সহজ নয়। প্রথমে, তাকে বৃদ্ধদের অভিযোগ শুনতে হয়। জু শিয়াও রান বলেন, "যখন আমি কাজটি শুরু করি, তখন একেবারে অনভিজ্ঞ ছিলাম। বৃদ্ধ মানুষেরা মাঝে মাঝে খুব সংবেদনশীল হতে পারে। আমি জানতাম না যে, কোন শব্দগুলি বললে তারা মনে কষ্ট পাবেন, বা অসন্তুষ্ট হবেন। আমি তখন তাদেরকে ঠিক বুঝতাম না।"

বেশ কয়েকবার ধাক্কা খাওয়ার পর, জু শিয়াও রান বয়স্কদের সাথে তার যোগাযোগের পদ্ধতি ক্রমাগত বদলাতে শুরু করেন। তিনি বয়স্কদের অতীত ও তাদের চাহিদা বোঝার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেন। আজকাল, নার্সিং হোমের বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডগুলো বয়স্ক ব্যক্তিদের মুখে হাসি ফুটিয়ে যাচ্ছে।

চীনে প্রবীণের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ২০২২ সালের শেষ নাগাদ, চীনের জনসংখ্যায় ৬০ ও তারচেয়ে বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ২৮ কোটিতে পৌঁছায়, যা মোট জনসংখ্যার ১৯.৮%।  নার্সিং হোম ছাড়া, অধিকাংশ বয়স্ক মানুষ নিজের বাড়িতে বা কমিউনিটিতে যত্ন পাওয়ার প্রত্যাশা করেন। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বারবার কমিউনিটি হোম কেয়ার সার্ভিস নেটওয়ার্ক উন্নত করার কথা বলে আসছেন। ছুংছিংয়ে "১৫ মিনিটের" মধ্যে পৌঁছে যাওয়া বয়স্ক যত্ন পরিষেবা বৃত্ত তৈরি করা হয়েছে, যার আওতায় বয়স্কদের দোরগোড়ায় খাবার সহায়তা ও চিকিত্সা সহায়তার মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

৩৪ বছর বয়সী শিওং শিয়াও লি মূলত ক্লিনিকাল নার্সিংয়ে যুক্ত ছিলেন। চার বছর আগে, তিনি হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে শুয়াংফু কমিউনিটি নার্সিং সার্ভিস সেন্টারে আসেন। কিছু বয়স্ক লোকের জ্ঞানীয় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এবং তাদের পরিবারের জন্য তাদের যত্ন নেওয়া সম্ভব নয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে, তাদের জন্য একটি বিশেষ পরিচর্যা এলাকা এখানে স্থাপন করা হয়। শিওং শিয়াও লি’র প্রধান কাজ এইসব বৃদ্ধ মানুষের যত্ন নেওয়া।

অনেক বয়স্ক মানুষের মানসিক সমস্যাও রয়েছে। তাদের যত্ন নেওয়ার জন্য যত্ন ও দক্ষতা উভয়ই প্রয়োজন। দাদা ওয়াং, যিনি অন্ধ, যখন প্রথম নার্সিং হোমে পৌঁছান, তিনি কথা বলতে অনিচ্ছুক ছিলেন এবং তার মেজাজ খারাপ থাকতো প্রায়ই। তখন শিওং শিয়াও লি প্রথমে তাকে সঙ্গ দেন, তারপর তার সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় আবিষ্কার করেন যে, দাদা ওয়াং গান গাইতে পছন্দ করেন। শিওং শিয়াও লি প্রতিদিন দাদা ওয়াং-এর সাথে গান করেন। ফলে দাদার মেজাজ আস্তে আস্তে উন্নত হয়। তাকে দিনের পর দিন সঙ্গ দেওয়ার পর, শিওং শিয়াও লি হয়ে উঠেছেন দাদা ওয়াংয়ের সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসী ও নির্ভরযোগ্য মানুষ।

বয়স্ক পরিচর্যা সেবা দলে, অসংখ্য জু শিয়াও রান এবং শিওং শিয়াও লি-এর মতো মানুষ রয়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন পদে নীরবে কাজ করছেন। যদিও এটি কঠোর পরিশ্রমের কাজ, তাদের সকলের একটি সাধারণ ইচ্ছা রয়েছে যে, হাজার হাজার বয়স্ক লোকের বার্ধক্যের জীবন সুখী হোক। (ইয়াং/আলিম/ছাই)