ছোট থেকে বড় করা - এ গ্রামের সমৃদ্ধি অর্জনের পথ
2023-11-10 14:35:49

অক্টোবরের শেষ দিকে আপনি যদি চীনের হু পেই প্রদেশের নান চাং উপজেলার তোং কোং গ্রামে আসেন, তাহলে এ গ্রামের কৃষিকেন্দ্রে সবুজ, হলুদ ও লাল রঙের ঝুলন্ত তরমুজের বাগান দেখতে পাবেন। ৫০ বছর বয়সী ওয়াং ছুন লি ব্যাগ নিয়ে ফল তুলতে ব্যস্ত। কয়েক মিনিটের মধ্যে তার তোলা তরমুজে স্তুপে পরিণত হয়।

এখন ঝুলন্ত তরমুজ তোলার মৌসুম। এ কৃষিকেন্দ্রে প্রতিদিন আড়াই হাজার কেজি ফল তোলা হয়। স্থানীয় ঝুলন্ত তরমুজ খাতের দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে। ওয়াং ছুন লিং তার পরিবারের সব জমি ঝুলন্ত তরমুজ চাষের জন্য কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন। গ্রামে তার মতো কৃষিকেন্দ্রে শ্রম দিচ্ছেন ৫০-৬০জন। বাড়ির কাছে একদিন শ্রম দিয়ে ১০০ ইউয়ান উপার্জন করতে পারছেন তারা।

গত সেপ্টেম্বর থেকে ফাং ছিং ঝুলন্ত তরমজু তোলা, প্রক্রিয়াকরণ ও বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। ফাং ছিং’র আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি হলেন কমিউনিস্ট পার্টির তোং কোং উপজেলার ঝুলন্ত তরমুজ শিল্প শাখার সম্পাদক।

তিনি বলেন, “ঝুলন্ত তরমুজ চাষ শুরুর পর প্রথম ৩ বছরে এ পর্যন্ত শিল্পের আকার, ব্র্যান্ড ও শিল্প চেইন সম্পূর্ণভাবে গঠিত হতে পেরেছিল না। উন্নয়নের সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছিল। স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ও কৃষকেরা এমন একটি শক্তিশালী সংস্থার মাধ্যমে সেসব সম্পদ সংযুক্ত করার প্রত্যাশা করে। তাই গঠিত হয় শিল্প চেইনের সিপিসি কমিটি। উপজেলার গভর্নরকে কমিটির সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পৃথক পৃথক ঝুলন্ত তরমজু সমবায় ও প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করে পণ্যের সংযোজন মূল্য বাড়ানোর জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে।”

শিল্প চেইনের সিপিসি কমিটি বিভিন্ন সদস্য এ শিল্প উন্নয়নের জন্য নানা ধারণা প্রদান করেন। এটি যেনো মাথার মতো কাজ করছে। কমিটি সময়মতো বিভিন্ন সম্পদ প্রয়োগ করে। কৃষি প্রযুক্তিবিদ, চাষী, প্রকৌশলী, নেতৃস্থায়ী শিল্পপতি ও স্বেচ্ছাসেবক এ কমিটির দৃঢ় সমর্থক হিসেবে কাজ করেন। তাঁরা শিল্প উন্নয়নের সমস্যা সমাধানে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছেন।

ফলে আগে ছোট্ট ঝুলন্ত তরমজু শিল্প বর্তমানে তোং কোং উপজেলার লু পিং গ্রাম ও তু চিয়া পিং গ্রামসহ ১৯টি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে এবং বার্ষিক উত্পাদনের পরিমাণ ১ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে। এতে ৭৮৪জন কৃষক সুবিধা লাভ করেছেন। দেখতে ছোট ও চোখে না পড়া এ ঝুলন্ত তরমুজ বর্তমানে গ্রামবাসীদের সমৃদ্ধ হওয়ার সোনার তরমুজে পরিণত হয়েছে।

নান ছাং জেলা পাহাড়ি কৃষি জেলা। কৃষকদের নিজের মতো চাষ করা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্ষমতা দুর্বল হওয়াসহ নানা সমস্যার কারণে স্থানীয় কৃষি উন্নয়ন সীমিত ছিল। গত বছর থেকে এ জেলা ভেষজ মাশরুম, ঝুলন্ত তরমুজ, জৈব চালসহ নানা সুবিধাজনক শিল্পকে কেন্দ্র করে শিল্প চেইন উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষকদের উপার্জন বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

সিপিসি কমিটি বিভিন্ন বিষয়ে পালাক্রমিক আলোচনা ব্যবস্থা, সম্পাদকের নিয়মিত সম্মেলনসহ নানা ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রকল্প নির্মাণ, শ্রম নিয়োগ, অর্থ ব্যবহারসহ নানা সমস্যা সমাধান করে শিল্প উন্নয়নে সহায়তা দেয়।

বর্তমানে নান চাং জেলায় ভেষজ মাশরুম শিল্পে রয়েছে ৯৩২টি উত্পাদনকারী, প্রক্রিয়াকরণকারী ও ক্রেতা। মাশরুম গবেষণা ও উন্নয়ন, উত্পাদন ও প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে সম্পূর্ণ শিল্প চেইন গঠিত হয়েছে।এতে ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০২৩ সালে এ শিল্পের উত্পাদনের পরিমাণ ৪২০ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

নান চাং জেলার ভেষজ মাশরুম শিল্পের নেতৃস্থায়ী প্রতিষ্ঠান - নান চাং জেলার ইয়ু নোং মাশরুম শিল্প কোম্পানির কারখানায় প্রবেশ করলে দেখা যায় কর্মীদের উপচে পড়া ভীড় এবং শোনা যায় যন্ত্রপাতির গর্জন। গত বছরে এ কোম্পানির উত্পাদনের পরিমাণ ছিল ১৩ কোটি ইউয়ান। চলতি বছরে উত্পাদন লাইন নতুন করে বাড়ার পর আরও বেশি ধরনের পণ্য তৈরি হয়েছে, যার ফলে উত্পাদনের পরিমাণ ২০ কোটি ইউয়ান ছাড়াবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

এ কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক ওয়াং চু লিয়াং মনে করেন, কোম্পানির উত্পাদনের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার মূল কারণ হলো দল বেঁধে যৌথভাবে উন্নয়ন করা। চলতি বছরে এ কোম্পানি ৫০ লাখ ইউয়ান অর্থ সংগ্রহ করেছে এবং শিল্প চেইন বাড়িয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনশক্তি নিয়োগ করে নতুন পণ্য উন্নয়ন করা এবং উন্নত অঞ্চলে কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়েছে। 

ওয়াং চু লিয়াং বলেন, কোম্পানির উত্পাদনের পদ্ধতি ও উত্পাদনের সরঞ্জান আপগ্রেট করা হয়েছে। প্রাথমিক প্রক্রিয়াকরণ থেকে গভীর প্রক্রিয়াকরণের রূপ দেওয়া হয়েছে। মাশরুম জ্যাম, শুকনো মাশরুম, শুকনো সবজি, ফলসহ নানা পণ্য বাজারজাত করা হচ্ছে। কোম্পানির দ্রুত উন্নয়নের ফলে মাশরুম চাষীদের উপার্জন নিশ্চিত করার পাশাপাশি আশপাশের গ্রামবাসীদের জন্য আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।”

(রুবি/রহমান)