৩৬০০ দিন রাত ধরে নিরাপত্তা রক্ষা করেছেন এ পুলিশ স্টেশনের পুলিশ সদস্যরা
2023-11-10 14:38:27

চীনের হ্য পেই ও সান সি প্রদেশ-সংলগ্ন অঞ্চলে অবস্থিত টাই হাং পবর্তের অদূরে চীনের প্রথম যাত্রীবাহী রেল পথ - শিটাই রেলপথ। এটি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম চীনকে সংযুক্ত করার পরিবহন ধমনী। শিটাই রেলপথের দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি ছোট্ট স্টেশন, যার নাম উত্তর চিং সিং স্টেশন। পাহাড়ের তিনটি বাড়ি হলো স্টেশনের ৯ পুলিশ সদস্যের কাজের ও থাকার স্থান।

তু ইয়োং ফেই সে স্টেশনের একজন সাধারণ পুলিশ সদস্য। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে তিনি এখানে কাজ করতে আসেন। সে সময় থেকে দশ বছর পার হয়ে গেছে। তু ইয়োং ফেই যেন পাহাড়ি অঞ্চলের একটি গাছের মতো এ মাটিতে শেকড় গেড়েছেন।

প্রথম যখন এখানে আসেন, তখন তু ইয়োং ফেই এখানকার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারতেন না। শহর থেকে দূরে হওয়ার কারণে এখানে কোনও বিনোদনমূলক ব্যবস্থা নেই। একবারে টানা ৫-৬ দিন থাকতে হয়। বাজার করা যায় না। তাই স্টেশনের সবাই বিশ্রামের সময়ে একটি শাকসবজি বাগান গড়ে তুলেছেন। স্টেশনের সবচেয়ে তরুণ পুলিশ সদস্য হিসেবে তু ইয়োং ফেই রান্না করা ও পরিস্কার করা থেকে শুরু করে গাড়ি ও বাড়ি মেরামতসহ ছোট-বড় সব কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দৈনন্দিন তল্লাশি, আইন প্রয়োগসহ বিভিন্ন কাজে খুব ব্যস্ত থাকেন তিনি। প্রবীণরা যখন বের হয়ে তল্লাশি চালান, তখন তাকে সঙ্গে নিয়ে যান এবং নিজেদের সন্তানের মতো তাকে সবকিছু শিখিয়ে দেন। পাহাড়ি অঞ্চলে গাড়ি চালানোর টিপস কী? পশ্চিমে কয়েক কিলোমিটারে কী স্টেশন রয়েছে? পরবর্তী স্টেশনে যাওয়ার জন্য কোনও সুবিধাজনক পথ আছে কিনা? মাস ছয়েক কাজ করার পর তু ইয়োং ফেই স্টেশনের অধীন চারিদিকের সব বিষয়ে জানতে পারেন।

দশ বছরে স্টেশনের কর্মীদের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তবে তু ইয়োং ফেই অপরিবর্তিত রয়েছেন। তার এখানে অবস্থানের সময় পরিবারের সঙ্গে থাকার সময়ের চেয়েও বেশি। তু ইয়োং ফেই বলেন, “এ রেলপথ চালু হওয়ার প্রথম দিকের কথা স্মরণ করলে আমি নেতা ও প্রবীণদের চোখে সে সময়ের পরিশ্রম ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞা উপলব্ধি করতে পারি। প্রবীণদের কাছ থেকে আমি যেটি প্রথমে শিখেছি, সেটি হলো মালিকানা বোধ।”

তু ইয়োং ফেই বলেন, লু ছুয়ান পুলিশ স্টেশন থেকে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ দিয়ে ৬০ কিলোমিটার রেলপথে তল্লাশি পরিচালনা করা সহজ নয়। সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে হয়তো ৬০ কিলোমিটার দূরত্ব মানে এক্সেপ্রেসওয়েতে আধা ঘন্টার গাড়িযাত্রার ব্যাপার। তবে স্টেশনের পুলিশ সদস্যের এ দূরত্ব যেতে ৫-৬ ঘন্টা লাগে এবং সাত-আটটি নদী ও পাহাড় অতিক্রম করতে হয়। কিছু কিছু স্থানে গাড়িও যায় না বলে পায়ে হেঁটে যেতে হয়। তু ইয়োং ফেই বলেন, “অনেক পথ আমরা হাঁটতে হাঁটতে আবিস্কার করেছি। অনেক পথ ম্যাপে পাওয়া যায় না। আমরা একটার পর একটা তৈরি করেছি।”

এ রেলওয়ে তল্লাশি কাজের অন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো রেলওয়ে বরাবর গ্রামগুলোতে আইন প্রয়োগ করা। তু ইয়োং ফেইয়ের গ্রামে জীবন-যাত্রার অভিজ্ঞতা নেই। তবে একের পর এক গ্রামের প্রতি পরিবারে আইন প্রয়োগ প্রক্রিয়ায় তিনি সে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তিনি উপলব্ধি করেছেন যে, পাহাড়ি অঞ্চলে গ্রামগুলো একটি থেকে আরেকটি দূরে এবং সেখানকার আবহাওয়া খুবই শুষ্ক, যেকারণে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা বেশি। তাই বিভিন্ন গ্রাম নিজেদের মতো ‘অগ্নি প্রতিরোধ দল’ এবং ‘নিরাপত্তা কমিটি’ গড়ে তুলেছে। তারা রেলওয়ে রক্ষীদের মতো তল্লাশি চালান। তিনি আরও লক্ষ্য করেছেন যে, এ পুলিশ স্টেশনের অধীন এলাকার বেশির ভাগে নাগরিক বয়স্ক। সেসব প্রবীণদের কারণে গ্রামের কমিটি খুব পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য। সেসব পরিস্থিতি অনুযায়ী তু ইয়োং ফেই ‘অগ্নি প্রতিরোধ দল’, ‘নিরাপত্তা কমিটি’সহ নানা বিভাগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। এভাবে প্রতিটি গ্রামে তার নিরাপত্তা রক্ষী স্কুল রয়েছে এবং প্রতি স্কুলে রয়েছে নিরাপত্তা প্রচারমূলক স্টেশন। গত কয়েক বছরে তু ইয়োং ফেইয়ের পুলিশ স্টেশন অগণিত মূল্যবান তথ্যসূত্র পেয়েছে। তাতে সামষ্টিকভাবে অপরাধ প্রতিরোধ ও আইন প্রয়োগ সুসম্পন্ন হয়েছে।

বিগত দশ বছরে তু ইয়োং ফেই তার সবচেয়ে সুন্দর তরুণ সময় এখানে উৎসর্গ করেছেন। তিনি বলেন, আগামী ১০ বছরও তিনি আগের মতো এ জায়গাটি রক্ষার জন্য থেকে যাবেন।

(রুবি/রহমান)