এ মাসের দ্বিতীয় ভাগে ১৭তম প্যাসিফিক গেমস সলোমন দ্বীপপুঞ্জের রাজধানী হোনিয়ারায় শুরু হবে। ২০১৯ সালে সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে চীন এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ ফল হিসেবে চীন স্টেডিয়াম নির্মাণে সলোমন দ্বীপপুঞ্জকে সাহায্য করেছে এবং দেশটির ক্রীড়াবিদদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
এবারের প্যাসিফিক গেমসের ভেন্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় স্টেডিয়াম, জলচর কেন্দ্র, টেনিস কেন্দ্র, হকি মাঠ, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ ৭টি ভবন। এগুলোর মোট আয়তন ২৬ হাজার বর্গমিটার। জাতীয় স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ১০ হাজার দর্শক। চীনা স্টেডিয়াম নির্মাণ সহায়তা দলের নির্মাণপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রধান হুয়াং পেং ফেই বলেন, জাতীয় স্টেডিয়ামের সিলিং পালতোলা নৌকা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বানানো। এটা মৈত্রীর নৌকা। সলোমন দ্বীপপুঞ্জ একটি সমুদ্রিক দেশ। স্টেডিয়ামের সিলিংয়ের ঝিল্লি একটি পালের মতো, যা দুদেশের মৈত্রীর নৌকার ভবিষ্যত-মুখে এগিয়ে যাবার প্রতীক।
স্টেডিয়ামের সব যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামও বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর। ট্র্যাকটি বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। ফুটবল মাঠে প্রাকৃতিক বারমুডা ঘাস ব্যবহার করা হয়েছে এবং এ মাঠ এখন উচ্চ মানের ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজনে সক্ষম। মাঠের স্বয়ংক্রিয় স্প্রিংকলার সিস্টেম বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করতে পারে বলে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম হবে।
জাতীয় স্টেডিয়াম এখন হোনিয়ারার লান্ডমার্ক বিল্ডিংয়ে পরিণত হয়েছে এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোর অন্যতম হয়ে উঠেছে। জাতীয় স্টেডিয়ামের সার্ভিস বিভাগের ম্যানেজার জেনান বলেন, সুন্দর এ স্টেডিয়াম সলোমন দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম ক্রীড়া অবকাঠামো। এখানে শুধু বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর ক্রীড়া সরঞ্জাম ও স্থাপনা আছে তা নয়; ব্যায়াম, ফিটনেস, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জায়গাও আছে এখানে। আমাদের দেশের অনেক মানুষ এখানে এসে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে। আমরা কখনও ভাবিনি যে এতো অল্প সময়ে এতো সুসজ্জিত একটি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা যায়।
১৯ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের ২৪টি দেশ ও অঞ্চল থেকে আসা ৫ হাজারের বেশী ক্রীড়াবিদ ১৭তম প্যাসিফিক গেমসে অংশ নেবেন। এটি হলো এ অঞ্চলের বৃহৎ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং ১৯৭৮ স্বাধীনতা অর্জনের পর সলোমন দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম ক্রীড়া প্রতিযোগিতা।
সলোমন দ্বীপপুঞ্জকে সাহায্য করার জন্য চীন ক্রীড়াবিদ গ্রাম ও স্টেডিয়ামসহ অবকাঠামো নির্মাণ করেছে এবং পাশাপাশি সেখানকার সরকারের অনুরোধে দেশটির ক্রীড়াবিদেরকে উচ্চ মানের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের ক্রীড়াবিদরা চীনা কোচদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। অক্টোবর মাসের শেষ দিকে ৯জন চীনা কোচ সলোমন দ্বীপপুঞ্জে এসেছেন এবং তারা ৪০ দিনের প্রশিক্ষণ এবং প্রতিযোগিতা নির্দেশিকা দিবেন।
সহায়তা কোচ দলের প্রধান কুই চাং ই বলেন, ভারোত্তোলন, ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড, জুডো, টেবিল টেনিস, তায়কোয়ান্দো, সাঁতার, বক্সিংসহ ৭টি ইভেন্ট নিয়ে প্রশিক্ষণ আয়োজন করি আমরা। জুলাই মাসে, সলোমন দ্বীপপুঞ্জের ৮০জন ক্রীড়াবিদ চীনের সিছুয়ান প্রদেশে প্রশিক্ষণ নিতে আসেন এবং অক্টোবরে দেশে ফিরে যান। এবারের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী সব ক্রীড়াবিদ লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি অর্জন করেছেন বলে জানান চীনা কোচ।
বড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনে সলোমন দ্বীপপুঞ্জের স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করেছে চীন এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিনিময় দুদেশের মানুষের মধ্যে মৈত্রীর সেতুতে পরিণত হয়েছে। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড যৌথ নির্মাণ সলোমন দ্বীপপুঞ্জের মানুষের চাহিদা পূরণ করেছে এবং মানুষের মন জয় করেছে। ভবিষ্যতে দুদেশের সহযোগিতা আরও ফলপ্রসূ হবে বলে বিশ্বাস করা যায়।
(শিশির/রহমান/রুবি)