আকাশ ছুঁতে চাই ৪৩
2023-11-09 14:40:30

এই পর্বে যা থাকছে

 

১. নারীদের ব্যান্ড দল

২. বছরের সেরা নারী কোচ

৩. মরুভূমিকে সবুজ করতে চেয়েছেন ডেলগ

 

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

নারীদের ব্যান্ড দল

শুধু নারী সদস্যদের নিয়ে গড়ে ওঠা ব্যান্ডদলগুলো আজকাল চীনে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ ধরনের ব্যান্ডদল গড়ে তুলতে হলে অনেক প্রতিবন্ধকতা পার হতে হয়। চলুন জেনে নেই এমন একটি ব্যান্ডদল বিষয়ে।

ব্যান্ড সংগীতের কনসার্ট চলছে দর্শকরা বেশিরভাগই তরুণতরুণী। মঞ্চে চলছে শুধু মাত্র নারীদের পরিবেশনা। কারণ এটি অল ফিমেল ব্যান্ড। এমন দৃশ্য চীনে বিরল নয়।

চীনে নারীদের ব্যান্ডদল আজকাল বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আগে সাধারণত একটি ব্যান্ড দলে পুরুষ সদস্যদের পাশে নারীরা অংশ নিতেন। কিন্তু এখন বেশ কিছু ব্যান্ড দল গড়ে উঠেছে যেগুলোর সব সদস্যই নারী। এমনি একটি নারী ব্যান্ড দল হচ্ছে পোকার। অল ফিমেল দল পোকারের বেশ কয়েকটি গান তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনেক নারীরা বন্ধুবান্ধব মিলে কনসার্টে যাচ্ছেন অল ফিমেল ব্যান্ড দলের পরিবেশনা দেখতে।

সম্প্রতি পোকার থিয়ানচিনে তিনঘন্টার একটি একক শো করে যা দারুণভাবে দর্শক মাতায়। পোকারের একজন সদস্য চাও। ২২ বছর বয়সী চাও জানান, তিনি সবসময় গান ও নাচ ভালোবাসতেন। তিনি ব্যান্ড দলে যোগ দিয়ে জনপ্রিয় শিল্পী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার অভিভাবকরা এটা চাননি। তারা চেয়েছিলেন মেয়ে একটা নিশ্চিত ক্যারিয়ার বেছে নিক। অন্য দশজনের মতো চাকরি করুক। কারণ ব্যান্ড দলে ক্যারিয়ার গড়ার বেশ কিছু ঝুঁকি আছে। যদি জনপ্রিয়তা না পাওয়া যায় তাহলে তো অর্থ উপার্জন কঠিন হয়ে পড়বে। কিন্তু চাও ঝুঁকিটা নিতে প্রস্তুত হন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করার পর তিনি শুরু করেন নাচ গানের প্র্যাকটিস।

 তিনি তার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে মিলে নাচ গান প্র্যাকটিস করেন। কারণ তাদের নাচের দক্ষতা থাকলেও গানের ক্ষেত্রে বেশ দুর্বলতা ছিল।

 আরেকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়েছে। সেটা হলো যোগাযোগের ক্ষমতা বাড়ানো। মঞ্চে গান পরিবেশনের সময় দর্শক-শ্রোতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে হয়। যেমন হয়তো মঞ্চ থেকে লাফ দিয়ে দর্শকদের মাঝখানে গিয়ে পড়তে হয়।

একজন নারীর পক্ষে এসব ক্ষেত্রে সংকোচ কাটিয়ে ওঠা বেশ কঠিন। চাও ও তার বন্ধুরা এটার চর্চা করেন।

এটা অবশ্য শুধু পোকারের বেলায় নয়। সামাজিক কয়েকটি গবেষণায় জানা গেছে অল ফিমেল ব্যান্ডের ক্ষেত্রে সংকোচ কাটিয়ে উঠে দর্শক মাতানো বেশ কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জটা মেয়েদের নানাভাবে অতিক্রম করতে হচ্ছে।

 

পোকারের সদস্যরা বেশিরভাগই কলেজ শিক্ষার্থী অথবা কর্মজীবী। তারা ২০২০ সালে ব্যান্ড গঠন করেন। তার পরপরই তাদের মোকাবেলা করতে হয় কোভিড পরিস্থিতি। প্রথম দিকে অনেকগুলো শো বাতিল হয় স্বাস্থ্য ঝুঁকির জন্য। তবে তাদের দলের পরিবেশনা ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখন চাও এর বাবা মা আর এ বিষয়ে বাধা দেন না। কারণ তারা নিশ্চিন্ত হয়েছেন যে শোবিজে তার ক্যারিয়ার একটা গতি পেয়েছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

বছরের সেরা নারী কোচ

  চীনের নারীরা ক্রীড়াক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও সম্মানও পাচ্ছেন তারা। এমনি একজন নারী শুই ছিংসিয়া। এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন সম্প্রতি তাকে বছরের সেরা নারী কোচের সম্মান দিয়েছে।

শুই ছিংসিয়া, চীনের নারী ফুটবল দলের কোচ। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন সম্প্রতি শুই ছিংসিয়াকে উইমেন’স কোচ অব দ্য ইয়ার অভিধায় ভূষিত করেছেন। সম্প্রতি কাতারের দোহায় এই সম্মাননার আয়োজন করা হয়। মা ইয়ুয়ান আনের পর তিনি চীনের দ্বিতীয় নারী যিনি এই সম্মাননা অর্জন করলেন। মা ইয়ুয়ান আন ১৯৯৬ সালে এই সম্মাননা পেয়েছিলেন।

৫৬ বছর বয়সী শুই নিজেও দুর্দান্ত ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। এশিয়ান কাপ জয়ী নারী ফুটবলটিমের সদস্য খেলোয়াড় ছিলেন তিনি।

 গত বছর তিনি কোচ হিসেবে এশিয়ান কাপ জয়ের পথে নিয়ে চান চীনা নারী ফুটবল দলকে। ২০০৬ সালের পর গত বছরই চীনা নারী ফুটবল টিম এশিয়ান কাপ জয় করে। শুই এর এই সাফল্য চীনের নারীদের আরও অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

 

 

 

 

মরুভূমিকে সবুজ করতে চেয়েছেন ডেলগ

মরুভূমিকে সবুজ করে তোলা। কথাটি শুনতে সহজ হলেও বাস্তবে প্রায় অসম্ভব একটি বিষয়। কারণ বিরুদ্ধ প্রকৃতিকে মোকাবেলা করে এগোতে হয়। এই কঠিন কাজটি করছেন একজন নারী। ইনার মঙ্গোলিয়া অঞ্চলে একজন নারী মরুভূমিকে সবুজ করে তোলার অন্যতম সৈনিক হিসেবে কাজ করছেন প্রবীণ বয়সেও।

 

চীনের উত্তরে অবস্থিত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ইনার মঙ্গোলিয়া। এখানে রয়েছে ভয়াল মরুভূমি। এই মরুভূমি ধীরে ধীরে গ্রাস করতে চায় আরও বেশি এলাকা। কিন্তু এই মরুকরণকে রুখে দিচ্ছে সবুজের প্রাচীর। কয়েক দশক ধরে ইনার মঙ্গোলিয়ায় চলছে সবুজ মহাপ্রাচীর গড়ে তোলার কাজ।

 

মরুভূমিতে লাগানো হচ্ছে গাছ। এরফলে বালির ঝড় এসে আর ঢেকে দিতে পারছে না শহরকে। এই সবুজ মহাপ্রাচীর  যারা গড়ে তুলছেন, গাছ লাগাচ্ছেন, অক্লান্ত পরিশ্রম করে পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করে চলেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন অনেক নারী। এমনি একজন প্রবীণ নারী ডেলগ।

 সিল্ক রোডের হেইছং শহরের কাছে তার বসবাস। এখানে আলক্সা লিগের এজিনা ব্যানারে  দুর্গম মরুঅঞ্চলে তিনি গাছ লাগিয়েছেন কয়েক দশক ধরে। তবে শুধু বৃক্ষরোপণ করলেই চলে না। বিরুদ্ধ প্রকৃতি মোকাবেলা করে তাকে বাঁচিয়ে রাখার কাজ হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন। সেচ ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে পাল্টে দিতে হয় পরিবেশ। লড়াই চালাতে হয় শুষ্কতার বিরুদ্ধে।

ডেলগ প্রথমে তার স্বামী সু হ্য এর সঙ্গে বৃক্ষরোপণে অংশ নেন। তারা দুজন ২০০৪ সাল থেকে আলক্সা ব্যানারে মরুকরণ রোধ করতে বৃক্ষরোপণ শুরু করেন। এখানে হালোক্সিলন গাছের বন তৈরির কাজ করতে থাকেন দুজন।  এই গাছে পানি তুলনামূলকভাবে কম লাগে এবং গাছটির প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার ক্ষমতা অন্য গাছের চেয়ে বেশি।

দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রমে সাড়ে তিন হাজার মু বা ২৩৩.৩৩ হেকটর জমিতে বন তৈরি করেন এই দম্পতি। তাদের গড়ে তোলা এই অরণ্যকে মরুকরণের বিরুদ্ধে একটি ঢাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই অরণ্যের ফলে হেইছং রেলিক সাইটে বালির ঝড় প্রতিরোধ হয়েছে।

২০০৪ সালে মরুভূমির মধ্যে তারা একটি বাংলোবাড়িও নির্মাণ করেন।

 ২০২১ সালে সু হ্যর মৃত্যু হয়। প্রিয় জীবনসঙ্গীর আরাধ্য কাজকে বয়ে নিয়ে চলেন ডেলগ। এখন সু এবং ডেলগের পুত্র এই কাজ করছেন। মা ও ছেলের প্রয়াসে মরুভূমিতে গড়ে উঠছে বৃক্ষের সবুজ প্রাচীর।

প্রবীণ নারী ডেলগ এখনও প্রতিদিন তার বাইকে চড়ে গাছগুলো পরিদর্শন করেন। যে গাছগুলো তিনি ও তার জীবনসঙ্গী নিজের হাতে রোপণ করেছিলেন সেগুলোর গায়ে হাত বুলান। যেন ওগুলো তাদের সন্তান। এভাবেই নিজের হাতের ছোঁয়ায় মরুভূমিকে সবুজ করার কাজ করে চলেছেন এই পরিশ্রমী নারী।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

 

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

 

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

কণ্ঠ:  শান্তা মারিয়া,  শুভ আনোয়ার, রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল