চীন ও অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের নতুন অধ্যায় উন্মুক্ত করতে একমত হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে দু’দেশের উত্তেজনাসংকুল সম্পর্ক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক উন্নয়নকে বাধা দিয়ে আসছে। তবে, ৬ নভেম্বর চীন ও অস্ট্রেলিয়ার নেতাদের বৈঠকের পর দু’দেশের সম্পর্ক আবারও সঠিক পথে ফিরে আসে বলা যায়।
সেদিন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থোনি আলবানেসের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। ‘অতীতের পদাংক অনুসরণ করে, ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া’-র কথা বলেন চীনা প্রেসিডেন্ট। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির গভীর পরিবর্তনের মধ্যে দু’দেশের উচিত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের সঠিক দিক অনুসরণ করা, অমিল পাশে রেখে মিল অন্বেষণ করা, পারস্পরিক কল্যাণকর ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা, এবং দু’দেশের সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আলবানেস বলেন, অস্ট্রেলিয়া ও চীনের রাজনৈতিক অবস্থা ভিন্ন হলেও, অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে এবং দু’দেশকে সংলাপ ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
৭ বছর পর কোনো অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রীর এটি ছিল প্রথম চীন সফর। ৫০ বছর আগে অক্টোবর মাসে, তত্কালীন অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড গাও হুইটলাম বেইজিং সফর করেন। সেটি ছিল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতীক। তখন তিনি স্বর্গমন্দিরে একটি ছবি তোলেন। ৫০ বছর পর প্রায় একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী আলবানেস স্বর্গমন্দিরে এসে একটি ছবি তোলেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের একাউন্টে পোস্ট করেন।
আলবানেসের এবারের সফরের মাধ্যমে চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের বরফ গলা শুরু করেছে বলা যায়। একসময় চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক ছিল পশ্চিমা বিশ্বের সাথে চীনের সম্পর্কের দৃষ্টান্তস্বরূপ। অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ এবং আধুনিকায়ন অস্ট্রেলিয়ার জন্য বড় সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তবে, অস্ট্রেলিয়ার গত দুটি সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কথিত ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল অনুসরণ করে হুয়াওয়ে কোম্পানির ৫জি প্রযুক্তি নিষিদ্ধ করে; সিনচিয়াং ও দক্ষিণ চীন সাগরসহ নানা ইস্যু নিয়ে বার বার চীনকে উস্কানি দেয়। এতে চীন-অস্টেলিয়া সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী অ্যান্ড্রু রব বলেন, গেল কয়েক বছরে যখন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক সমস্যা হয় তখন অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে। আবার চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে। গোটা বিষয়টি বিরক্তিকর।
গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে প্রধানমন্ত্রী আলবানেসের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন এবং তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পুনরুদ্ধারের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এবার বেইজিংয়ের বৈঠকে চীন জোর দিয়ে বলেছে যে, ছোট ছোট গ্রুপ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে না। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেবল গেল কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শিখলে চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক উন্নয়নের রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি হতে পারে।
আসলে চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে কোনো ঐতিহাসিক সংঘর্ষ বা বিতর্ক ছিল না। দু’দেশে একে অপরকে বিশ্বাস করে এবং পারস্পরিক সাফল্য অর্জন করে। চলতি বছর চীন ও অস্ট্রেলিয়া ওয়াইন ও উইন্ড টাওয়ার বিষয়ক মতভেদ নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাঠামোতে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা করে এবং মতৈক্যে পৌঁছায়। মতভেদ যথোচিতভাবে সমাধান হলে চীন ও অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কের একটি নতুন অবস্থা দেখা যেতে পারে।
এবার সফরকালে প্রধানমন্ত্রী আলবানেস শাংহাই শহরে ষষ্ঠ চীন আন্তর্জাতিক আমাদানি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ২০০টি অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি মেলায় অংশ নেয়।
দু’দেশের নেতারা একমত হন যে, ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তন ও সবুজ অর্থনীতিসহ নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রসারিত করা হবে। আশা করা যায়, যুগের প্রবণতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে, চীন ও অস্ট্রেলিয়া সহাবস্থানের মাধ্যমে পারস্পরিক সমঝোতা ও আস্থা জোরদার করতে পারবে। (শিশির/আলিম/রুবি)