এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। আবীরের জন্মের দ্বিতীয় আঁতুড়ঘর চীন
২। জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে সেতু
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৪৩তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। সাক্ষাৎকার পর্ব- আবীরের জন্মের দ্বিতীয় আঁতুড়ঘর চীন
ঘুরে বেড়াইয়ের এবারের পর্বে কথা হয়েছে চীনে বসবাসরত বাংলাদেশি মোহাম্মদ মাহবুব গফুর আবীর। বাংলাদেশের সিলেটে জেলায় তার জন্মস্থান। তিনি চীনে পাড়ি জমান ২০১৭ সালে। বর্তমানে আবীর চীনের ইয়ুননান প্রদেশের খুনমিং মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন করছেন।
· ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগতম। কেমন আছেন আপনি?
আবীর- ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠানে স্বাগত জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
· আপনি তো বেশ কয়েক বছর ধরে চীনে আছেন। পড়ালেখা করছেন ইয়ুননান প্রদেশের কুনমিং মেডিকেল কলেজে। আমরা জানতে পড়ালেখা করার পাশাপাশি এই দীর্ঘ সময়ে আপনি চীনের কোথায় কোথায় ঘুরেছেন ?
আবীর- চার-পাঁচ বছরে চায়নাতে যতদিন ছিলাম, খুব বেশি ঘুরা হয়নি আমার। সেটা পড়ালেখার চাপে কিংবা ইউনিভার্সিটির নিয়মের কারণে হোক খুব বেশি সুযোগ হয়নি। তবে ইউনিভার্সিটি থেকে আমাদের নিয়ে যাওয়া হতো, যেটি মেডিকেল ক্যাম্প নামে পরিচিত। ২০১৮ সালের দিকে আমি ডালি শহরে গিয়েছিলাম, যেটি খুবই সুন্দর একটি শহর। ২০২৩ সালে গিয়েছিলাম লংনিং গ্রামে। এটি ছিল অনেক সুন্দর একটি গ্রাম ছিল।
· এই জায়গাগুলোতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? কোন বিষয়গুলো আপনার বেশি ভালো লেগেছে?
আবীর- শহরের মধ্যে ছোট একটি গ্রাম ছিল যেখানে গিয়ে আমরা চাষাবাদ দেখেছি। চীনে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি নির্ভর চাষাবাদ দেখে অবাক হয়েছি। আরও বেশি অবাক হয়েছি গ্রামের হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম দেখে। যেটা আমাদের বাংলাদেশের বড় বড় হাসপাতালে দেখা যায় সেটা চীনের গ্রামের হাসপাতালে গিয়ে দেখেছি। এখানকার ডাক্তাররা অনেক প্রসিদ্ধ জ্ঞান নিয়ে সেখানে কাজ করছেন। এছাড়া সেখানকার খাবার, তাদের সংস্কৃতিও আমার খুব ভালো লেগেছে। এছাড়া আমরা সব সময় বলি ডিজিটাল ভিলেজে কথা বলি। সেই ডিজিটাল ভিলেজ আমি এই গ্রামে গিয়ে দেখেছি। শহরের মতো আধুনিক এখানকার মানুষের জীবন। সেখানে গিয়ে মনেই হয়নি আমরা গ্রামে আছি।
· চীন একটি ভিন্ন সংস্কৃতি, তাদের খাবার ভিন্ন, ভাষাও ভিন্ন কিভাবে চীনে এই দীর্ঘ সময়টায় মানিয়ে নিয়েছেন?
আবীর- আমরা বাংলাদেশিরা বাংলাদেশের খাবার, মায়ের হাতের খাবার খেয়ে অভ্যস্ত। তাই প্রথম প্রথম আমার মাইয়ে নিতে কষ্ট হতো। বিশেষ করে মশলা আর খাবারের স্বাদ। কিন্তু পরবর্তীতে চীনের খাবার আমার এতোটাই পছন্দ যে এই খাবার না খেলে ভালো লাগে না।
প্রথম যখন আসি তখন একেবারেই চীনা ভাষা পারতাম না। কিন্তু আমি যে সাবজেক্টে পড়ি সেখানে চীনা ভাষা আছে। যার ফলে চীনা ভাষাটা ধীরে ধীরে আয়ত্ত্ব করতে পেরেছি। এখনো শেখার মধ্যে আছি। আশাকরি ভবিষ্যতে আরও শিখতে পারবো।
চীন আমার দ্বিতীয় ঘর হয়ে গেছে। কোভিডের কারণে মাঝখানে আমি যতদিন ছিলাম, চীনকে খুব মিস করেছি। মনে করেছিলাম কখন চীনে আসতে পারবো। চীনের পরিবেশ অনেক বেশি ভালো এবং এখানকার মানুষ বন্ধুত্বপরায়ণ।
· যারা চীনে ঘুরতে যেতে চায় তাদের উদ্দশ্যে কী বলবেন?
আবীর- পৃথিবীর সুন্দর দেশগুলোর একটি চীন। এখানে দেখার শেষ নেই। এখানে আলাদা আলাদা সংস্কৃতি আছে। এটি একটি কমপ্লিট দেশ। যারা চীনে ঘুরতে আসতে চান তারা আসেন, চীনের মানুষ সম্পর্কে জানুজ, সম্পর্কে জানুন, বাহারী খাবারের স্বাদ গ্রহণ করুন। আমি মনে করি চীনের মানুষদের কাছ থেকে অনেক কিছু জানার আছে।
· আমাদের অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
আবীর- আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ- আফরিন মিম
২। জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে সেতু
পাহাড়-পর্বত আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশ। দুর্গম পাহাড় আর গহীন অরণ্যের সঙ্গে বৈচিত্র্যময় ভৌগোলিক পরিবেশ আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। প্রদান করে রোমাঞ্চকর সব পর্যটন অভিজ্ঞতা।
প্রদেশের আবহাওয়া শীতকালে খুব ঠাণ্ডা নয় এবং গ্রীষ্মকালে তেমন একটা গরমও নয়। ফলে সারা বছর পর্যটকদের আনাগোনা থাকে এ প্রদেশে। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে প্রদেশটির সেতুগুলো। বিশেষ করে প্রদেশের ফিংথাং সেতু, যা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু রিইনফোর্সড কংক্রিট সেতু।
ফিংথাং সেতুটি তিন টাওয়ারের কেবল-স্টেয়েড সেতু। এর উচ্চতা ৩৩২ মিটার বা ১ হাজা ৮৯ ফুট। সেতুটির দৈর্ঘ্য ২ হাজার ১৩৫ মিটার। এই সেতু এবং এর চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটক আসেন। আর এর জন্য তৈরি করা হয়েছে ‘স্কাই ব্রিজ সার্ভিস জোন’। এই পরিষেবার মাধ্যমে দর্শনার্থী ও পর্যটকরা সেতুতে প্রবেশ করে খুব কাছে থেকে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
ইতোমধ্যে এই সেতুটি প্রধান তিনটি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ব্রিজ কনফারেন্সে ‘গুস্তাফ লিন্ডেনথাল মেডেল’, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স থেকে ‘এফআইডিআইসি প্রজেক্ট অ্যাওয়ার্ড’ এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর ব্রিজ অ্যান্ড স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ‘আউটস্ট্যান্ডিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে।
কুইচৌ ব্রিজ কনস্ট্রাকশন গ্রুপ কোম্পানির তৃতীয় শাখার প্রধান প্রকৌশলী লিউ হাও বলেন, “আমরা সেতুটির ডিজাইন করার সময় কুইচৌয়ের পাহাড় এবং পানি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বিবেচনায় নিয়েছিলাম এবং আমরা সেতুটিকে আশেপাশের দৃশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করেই তৈরি করেছি। ২০১৮ সালের আগে কুইচৌতে এমন কোনো সেতু ছিল না যেখানে পর্যটকরা আসবেন কিংবা দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। আমরা উপত্যকাটি সমান করতে ২ লাখ কিউবিক মিটার ভরাট উপাদান ব্যবহার করেছি এবং বর্তমানে স্কাই ব্রিজ পরিষেবা জোন তৈরি করেছি।
স্কাই ব্রিজ সার্ভিস জোন হলো প্রদেশটির প্রথম হাইওয়ে সার্ভিস অঞ্চল, যা চীনের ন্যাশনাল থ্রিএ-স্তরের সিনিক স্পটের (দর্শনীয় স্থান) রেটিং পেয়েছে। এ ছাড়া এ জোনে কুইচৌ হাইওয়ে হেরিটেজ মিউজিয়াম, একটি ক্যাম্পসাইট, একটি গবেষণা ভবন এবং একটি ক্যাপসুল হোটেল নির্মাণ করা হচ্ছে।
পরিসংখ্যান বলছে, কুইচৌয়ে ১ দশমিক ২৫ মিলিয়ন পাহাড়ের মধ্যে ৩০ হাজারেরও বেশি সেতু তৈরি করা হয়েছে। ২০২২ সালে প্রদেশটিতে ৮ হাজার ৩৩১ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়েসহ মোট ২ লাখ ১০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু শীর্ষ ১০০টি সেতুর প্রায় অর্ধেক এবং সবচেয়ে উঁচু শীর্ষ ১০টি সেতুর মধ্যে চারটি কুইচৌ প্রদেশে অবস্থিত।
প্রতিবেদন- শুভ আনোয়ার
সম্পাদনা- আফরিন মিম
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী