নভেম্বর ৬: “আমরা উচ্চমানের উন্মুক্তকরণে চীনের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা, বৈশ্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন, এবং বৈশ্বিক আর্থ-বাণিজিক সহযোগিতা বেগবানে চীনের দায়িত্ববোধ ও প্রচেষ্টা অনুভব করেছি।“ গতকাল (রোববার) ষষ্ঠ চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের অভিনন্দনবার্তা দেখে এ কথা বলেন, মার্কিন জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানির ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং চীনবিষয়ক চেয়ারম্যান সোং ওয়েই ছুন।
২০১৮ সাল থেকে চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মেলায় লেনদেনের পরিমাণ ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। মেলায় প্রদর্শিত অনেক পণ্য বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত হয়েছে এবং অংশগ্রহণকারীরা বিনিয়োগকারী হয়েছে। মেলা আন্তঃদেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিশাল উন্নয়নের সুযোগ নিয়ে এসেছে। গতকাল(রোববার) চায়না মিডিয়া গ্রুপের এক সম্পাদকীয়তে এ সব মন্তব্য করা হয়েছে।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, চলতি বছর পালিত হয় চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি প্রণয়নের ৪৫তম বার্ষিকী এবং বিআরআই উত্থাপনের দশম বার্ষিকী। এ বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ বর্ষে ষষ্ঠ আমদানি মেলা সময়মতো শুরু হয়। প্রশ্ন হচ্ছে: চীন ও বিশ্ব কিভাবে একসাথে আরো উচ্চমানের উন্নয়ন সাধন করবে?
মেলা চীনের বড় বাজারের সুবিধা কাজে লাগিয়ে আন্তঃদেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন উন্নয়নের সুযোগ দিচ্ছে। চলতি বছরের আমদানি মেলায় ৪৪২টি নতুন পণ্য, প্রযুক্তি ও সেবা নিয়ে হাজির বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন চীনা বাজারে তা বিক্রির সুযোগ পাবে, তেমনি চীনা ক্রেতারাও ভালো পণ্য কেনার সুযোগ পাবে।
মেলায় পুরানো প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন অংশ নিচ্ছে, তেমনি নতুন প্রতিষ্ঠানও অংশ নিচ্ছে। এটি চীনের উন্মুক্তকরণ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি পূরণের প্রমাণ। চীন ক্রমশ আমদানি বাড়াচ্ছে, জাতীয় ও অবাধ পরীক্ষামূলক অঞ্চলে আন্তঃদেশীয় সেবার ক্ষেত্রে নেতিবাচক তালিকা প্রণয়ণ করেছে, অবাধ বাণিজ্যিক পরীক্ষামূলক অঞ্চল স্থাপন করেছে, এবং হাইনান প্রদেশের অবাধ বাণিজ্যিক বন্দরসহ আরও উচ্চ পর্য়ায়ের উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এগুলো বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আরও উন্নয়নের সুযোগ বয়ে আনবে।
সম্প্রতি তৃতীয় বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষ ফোরাম বেইজিংয়ে সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। চীন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের’ আওতায় উচ্চমানের যৌথনির্মাণ সমর্থনের জন্য ৮-দফা উদ্যোগ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে আরও উন্মুক্তকরণের বিশ্ব অর্থনীতি গঠনে সমর্থন দেওয়া। প্রশ্ন হচ্ছে: আমদানি মেলা এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড একে অপরকে কিভাবে আলোকিত করবে?
এবারের আমদানি মেলায় দেশ-প্যাভিলিয়ন নেওয়া ৭২টি অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৬৪টি ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশ। আর প্রতিষ্ঠান-প্যাভিলিয়ন নেওয়া ৩৪০০টিও বেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫০০টি ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশ থেকে আসা।
বাংলাদেশের পাটজাতীয় হস্তশিল্পকর্ম আমদানি মেলার মাধ্যমে চীনা বাজারে এসেছে। বাংলাদেশের ডাডা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা সাইফুর বলেন, আমদানি মেলা ও চীনা বাজারের জন্য অনেক পরিবারের ভাগ্য বদলে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। এবারের আমদানি মেলায় চীন শাংহাইয়ে ‘সিল্ক রোডের ই-কমার্স’ সহযোগিতামূলক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে, যা অনেক দেশের জনগণের জন্য আশার আলো জ্বালাবে।
আগামী ৫ বছরে চীনের মালামাল বাণিজ্য ও পরিষেবা বাণিজ্যের আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ যথাক্রমে ৩২ ট্রিলিয়ন এবং ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্বের প্রথম আমদানিকেন্দ্রিক জাতীয় পর্যায়ের প্রদর্শনী হিসেবে, আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা অব্যাহতভাবে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চীনা বাজারের সুবিধা ভোগের সুযোগ দিয়ে যাবে। চীনের বড় বাজার বিশ্বের বড় বাজারে পরিণত হবে এবং পরস্পরের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। (রুবি/আলিম/লাবণ্য)