এই গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে আমি আমার সন্তানকে নিয়ে কুয়াংতুং বিজ্ঞান কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। ভিতরে এআই আইস হকি রোবটটি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সে দীর্ঘক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ করছিল যে, আইস হকি রোবটটি একাধিক মানুষের সাথে কীভাবে খেলছে। রোবটের চমত্কার পারফরমেন্স দেখে সে মুগ্ধ। যাইহোক, খেলা দেখার পর যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে তা হল, ছোট মানব খেলোয়াড়দের চ্যালেঞ্জিং মনোভাব। তাঁরা বারবার নতুন আক্রমণ রচনা করার চেষ্টা করে; এমনকি রোবটের "দুর্বলতা" খুঁজে বের করার জন্য বেশ কয়েকজনের একটি দল গঠন করে। তারা এতে ভালো ফলাফলও পায়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিকাশ হচ্ছে সত্যিই "রকেট"-এর গতিতে। এই বছরের শুরু থেকে চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) যে উন্মাদনা শুরু করেছে, তা আগে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী উপন্যাসে থাকতো। এআই-এর বিকাশ এখন মানুষকে ভাবাচ্ছে। ভবিষ্যতের জন্য কেউ কেউ উদ্বিগ্নও বটে।
আমার সাক্ষাত্কার অনুষ্ঠানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে অনেক বিশেষজ্ঞ ও গবেষক এসেছেন। আমি দেখেছি যে, তাদের সাধারণ মনোভাব এমন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশকে ঠেকানো কঠিন; প্রযুক্তির বিকাশে কোনো সঠিক বা ভুল বলে কিছু নেই, মূল বিষয় হল আমরা কীভাবে এটি প্রয়োগ করি, তা। অতএব, এটিকে এক বাক্যে ফুটিয়ে তোলা যায়: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি নিয়ে ভয় পাবার কিছু নেই, তবে কীভাবে এটি পরিচালনা করা যায় তা ভালোভাবে বিবেচনা করতে হবে।
এসব চিন্তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যুক্তরাজ্যের ব্লেচলে পার্কে অনুষ্ঠিত প্রথম বৈশ্বিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিরাপত্তা শীর্ষসম্মেলনে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ২৫টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিরা যৌথভাবে আন্তর্জাতিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত "ব্লেচলি ঘোষণা" স্বাক্ষর করে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নিয়ন্ত্রণে তারা সম্মত হয়।
প্রকৃতপক্ষে, এই শীর্ষ সম্মেলনের আগে, চীন বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থাপনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির নিরাপত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, নিয়ন্ত্রণযোগ্যতা এবং ন্যায্যতা উন্নত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চীন কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত তৃতীয় "বেল্ট অ্যান্ড রোড" আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষ ফোরামের সময় "বৈশ্বিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থাপনা উদ্যোগ" প্রস্তাব করে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিকাশ ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমস্যার গঠনমূলক সমাধান প্রদান করে। পাশাপাশি, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনা ও নিয়মবিধি প্রণয়নের একটি পরিকল্পনাও পেশ করেছে।
উদ্যোগটি জোর দেয় যে, অন্যান্য দেশকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পণ্য এবং পরিষেবা প্রদান করার সময়, তাদের অন্যান্য দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা উচিত, অন্যান্য দেশের আইন কঠোরভাবে মেনে চলা উচিত এবং অন্যান্য দেশের আইনি এখতিয়ার স্বীকার করা উচিত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশকে "মানুষের কল্যাণ"-এ ব্যবহার করতে হবে। দেশগুলোর, বিশেষ করে বড় শক্তির দেশগুলোর, সামরিক ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে সচেতনভাবে দায়িত্বশীল মনোভাব গ্রহণ করা উচিত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করার সময় পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও উপকারিতার নীতি মেনে চলতে হবে। বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সরবরাহ-চেইনকে দূষিতভাবে অবরুদ্ধ করা এবং প্রযুক্তিগত একচেটিয়া ব্যবহার ও উন্নয়নে বাধা সৃষ্টির জন্য একতরফা জবরদস্তিমূলক পদক্ষেপের বিরোধিতা করা উচিত।
সম্প্রতি, জাতিসংঘ একটি "কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত উচ্চ-স্তরের উপদেষ্টা সংস্থা" প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে এবং দুই চীনা গবেষককে এই সংস্থার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণার ক্ষেত্রে চীন ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশ্ব মেধাসত্ব সংস্থার (ডব্লিউআইপিও) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মেধাসত্ব সংখ্যার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০২২ সালে, চীনা এআই মেধাসত্ব আবেদনের সংখ্যা ছিল ২৯৮৫৩, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দ্বিগুণ এবং গত বছরের মোট বিশ্বব্যাপী এআই মেধাসত্ব আবেদনের ৪০% এরও বেশি।
২০২৩ সালের বিশ্ব ইন্টারনেট সম্মেলনের উজেন সামিট, ৮ থেকে ১০ নভেম্বর চীনের হাংচৌ শহরের উজেনে অনুষ্ঠিত হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডিজিটাল সবুজ উন্নয়ন হবে এর গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। চলতি বছর হবে উজেন শীর্ষ সম্মেলনের দশম বছর। গত দশ বছরে, উজেন সামিট বিশ্বের ইন্টারনেটের উন্নয়নে চীনা জ্ঞান এবং চীনা চিন্তাভাবনা প্রদান করেছে। এবারের শীর্ষ সম্মেলনের থিম হল: "একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, সর্বজনীন, এবং স্থিতিস্থাপক ডিজিটাল বিশ্ব গড়ে তোলা—সাইবারস্পেসে একটি অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করা।" একটি উন্মুক্ত, ন্যায্য ও কার্যকর পরিচালনব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে সমস্ত মানবজাতির কল্যাণের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রচার করা চীনের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য চীন সক্রিয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। (ইয়াং/আলিম/ছাই)