চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা: বৈশ্বিক বাণিজ্য-বিনিময় বাড়ানোর অনন্য প্ল্যাটফর্ম
2023-11-05 19:29:42

রোববার চীনের সাংহাইতে উদ্বোধন হয়েছে ষষ্ঠ চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা-সিআইআইই। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ে অভিনন্দন বার্তা পাঠ এবং প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াংয়ের মূল বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ছয় দিনব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ এ মেলাটি। চীনের প্রধান এ আমদানি মেলার দিকে নজর থাকে সারা বিশ্বের প্রদর্শকদের।

সাংহাইতে ৫-১০ নভেম্বর পর্যন্ত চলমান এ মেলা চীনের নতুন উন্নয়নের দৃষ্টান্ত, উচ্চ-মানের উন্মুক্তকরণের জন্য একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি অভিন্ন জনকল্যাণকে প্রদর্শন করে৷

উদ্বোধনী অধিবেশনে চীনের প্রেসিডেন্টের সি চিন পিংয়ের অভিনন্দন বার্তায়ও ওঠে এসেছে এমন আশার কথা।

প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেন, বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এখনো দুর্বল, তাই বিভিন্ন দেশের উচিত ঐক্যবদ্ধভাবে যৌথ উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা। চীন সবসময় বিশ্ব উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ তৈরি করে। চীন দৃঢ়ভাবে উচ্চমানের উন্মুক্তকরণ বাস্তবায়ন করবে, অর্থনীতির বিশ্বায়নকে আরো উন্মুক্ত, সহনশীল, ভারসাম্যপূর্ণ এবং অভিন্ন কল্যাণের দিকে উন্নয়নকে জোরদার করবে। তিনি আশা করেন, সিআইআইই নতুন উন্নয়ন কাঠামোর জানালার মত ভূমিকা পালন করবে, চীনের নতুন উন্নয়ন বিশ্বের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।

প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াংয়ের উদ্বোধনী বক্তব্যেও ছিল চীনের উচ্চমানের উন্মুক্তকরণে প্রেসিডেন্ট সি’র প্রতিধ্বনী। প্রধানমন্ত্রী লি বলেন, চীনে ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যা এবং ৪০০ মিলিয়নেরও বেশি লোকের একটি মধ্যম আয়ের গোষ্ঠী রয়েছে, যা বাজারের চাহিদার ক্ষেত্রে বিশাল সম্ভাবনাকেই তুলে ধরে।

চীন সর্বদা তার বাজারের সুযোগগুলো ভাগ করে নিতে ইচ্ছুক উল্লেখ করে লি বলেন, আগামী পাঁচ বছরে চীনের পণ্য ও পরিষেবার আমদানি ১৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছবে।

নেসলে এবং লেগেোর মতো আন্তর্জাতিক জায়ান্ট থেকে শুরু করে তানজানিয়ার সামুদ্রিক শৈবালের ছোট ব্যবসায়ী পর্যন্ত- বিশ্বব্যাপী অংশগ্রহণকারীরা আমদানি মেলার মাধ্যমে পাবেন চীনের বিশাল বাজারে প্রবেশের অবারিত সুযোগ।

এ বছর ১৫৪টি দেশ, অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে অতিথিরা অংশ নিচ্ছেন মেলায়। ৩ হাজার ৪ শ’র বেশি প্রদর্শক এবং ৩ লাখ ৯৪ হাজার পেশাদার দর্শনার্থী ইভেন্টে যোগদানের জন্য নিবন্ধন করেছেন, যা প্রাক-মহামারী স্তরে সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধারের প্রতিনিধিত্ব করে।

এ বছর অংশগ্রহণকারী ৩ হাজারটি বৈশ্বিক কোম্পানির মধ্যে, ২০১৮ সাল থেকে প্রায় ২০০টি কোম্পানি প্রতিটি এক্সপোতে এসেছে এবং প্রায় ৪০০টি কোম্পানি দুই বছরেরও বেশি সময় পর এক্সপোতে ফিরে এসেছে।

উগান্ডার একজন কফি ব্যবসায়ী ফ্রান্ডান তুমুকুন্দে বলেন, সিআইআইই’র মতো প্রদর্শনীর মাধ্যমে চীন বিদেশী উদ্যোগগুলোকে তাদের বৃহৎ বাজারে প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছে।

তার কোম্পানির গবেষণা অনুসারে, চীনা বাজার প্রসারিত হচ্ছে এবং এটি উগান্ডা এবং আফ্রিকা জুড়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোগুলোকে চাঙ্গা করবে।

নিউজিল্যান্ডের ডেইরি জায়ান্ট ফন্টেরার বৃহত্তর চীনের সিইও তেহ-হান চৌ বলেন, যেহেতু চীন তার প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বাজারগুলোর মধ্যে একটি, সেজন্য তাদের কোম্পানিটি তার বুথ এলাকা এবং সিআইআইইতে স্বাক্ষরিত চুক্তির সংখ্যা উভয়ই বাড়িয়েছে।

সুইস ফুড জায়ান্ট নেসলে এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট চাং সিছিয়াং বলেন, টানা ষষ্ঠবারের মতো সিআইইতে অংশগ্রহণ করছে তার প্রতিষ্ঠান।

চীনের ক্রমবর্ধমান খেলনা বাজারের সম্ভাবনাকে উন্মোচন করার প্রত্যাশায়, বিশ্বব্যাপী খেলনা জায়ান্ট লেগো টানা ষষ্ঠবারের মতো ইভেন্টে অংশগ্রহণ করছে।

সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশন (এসবিএফ) নতুন বাজারের সুযোগের সন্ধানে সেদেশের ৫৬টি কোম্পানির ৫০০টিরও বেশি সিনিয়র ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবে।

এভাবে চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তাদের জন্য বিশাল সুযোগ করে দিচ্ছে। আগের পাঁচটি এক্সপোতে প্রায় ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্যিক লেনদেন হয়েছে ।

থাইল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই বলেন, সিআইআইই ছোট এবং কম প্রভাবশালী দেশগুলোকে একসঙ্গে বেড়ে উঠতে দেয়, চীন অন্যান্য দেশগুলির সাথে সমান আচরণ করে এবং "সহযোগিতা বৃদ্ধির গুরুত্বের উপর জোর দেয়।"

কায়রো-ভিত্তিক আরব সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডিজের একজন উপদেষ্টা আবু বকর আল-দিব, সিআইআইই’কে "বিশ্ব বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন সক্রিয় করার জন্য একটি উজ্জ্বল স্থান" বলে অভিহিত করেছেন।

আল-দিব উল্লেখ করেন যে চীনের উন্মুক্তকরণ নীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উপকারী। আন্তর্জাতিক অংশীদাররা চীনের উন্নয়ন, স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে গভীর করার দূরদর্শী উদ্যোগ থেকে উপকৃত হবেন এতে কোনো সংশয় নেই। এক্সপোটি ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিনিময় বাড়ানোর একটি দুর্দান্ত সুযোগ বলেও মন্তব্য করেন এই বিশেষজ্ঞ।

মাহমুদ হাশিম

ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।