সোনালী শরত্কালে চীনের সান সি প্রদেশের থাই ইউয়ান অঞ্চলের হুয়াথা গ্রামের ধানক্ষেত পার্কে ২৬৬ হেক্টর জমিতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। সোনালী ধানের ঢেউয়ে হারভেস্টার মেশিন ব্যস্ত ফসল তুলতে।
ধানক্ষেত পার্কে হাঁটলে বোঝা যায়, ধানক্ষেত ঘিরে ছোট্ট ট্রেন, ধানের শীষ দিয়ে তৈরি কার্টুনের মুর্তি, বিষ্ময়কর ধানশীষ কাসলসহ ধানসংশ্লিষ্ট উপাদান দিয়ে তৈরি দর্শনীয় সবকিছু পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। পর্যটকরা যাত্রা থামিয়ে নানা স্থানে ছবি তোলে। হুয়া তা গ্রামের ৭৪ বছর বয়সী অধিবাসী ইয়াং মাও ছুং আবেগী কণ্ঠে বলেন, “এখানে আবার ধান চাষ করা হবে, তা ছিল কল্পনার বাইরে। আরও বিষ্ময়কর যে, আগে কেউ আসেননি এমন ছোট্ট গ্রাম বর্তমানে একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।”
ক্যাপশন: ২১ অক্টোবর কিন্ডারগার্ডেনের শিক্ষক ও বাচ্চারা ধানক্ষেত পার্কে ভ্রমণ করছে
হুয়া থা গ্রাম চিন ইউয়ান অঞ্চলের চিন ছি উপজেলায় অবস্থিত। অতীতকালে এখানে ধান চাষ করা হতো। তবে গত এক দশক আগে অনেক গ্রামবাসী অন্য স্থানে চলে যান শ্রম দিতে। ধান চাষ করতে অনেক সময় ও অর্থ লাগে বলে গ্রামবাসীরা এক সময় ধান চাষ বাদ দেয়। আমাদের সাংবাদিককে গ্রামবাসীরা জানায়, এ স্থান একসময় ভুট্টা ক্ষেত ও খাগড়ার পুকুর ছিল।”
২০১৯ সালে হুয়া থা গ্রামে সমষ্টিগতভাবে ধান চাষ শুরু হয়। দু’বছর পর, একটি প্রতিষ্ঠান জমি লিজ নেওয়ার মাধ্যমে ধান চাষ শুরু করে। সে প্রতিষ্ঠানটি ভালো প্রজাতির ধানবীজ আনে এবং স্বয়ংক্রিয় চারা উত্পাদন ব্যবস্থা স্থাপনের মাধ্যমে চিন ছি ব্র্যান্ডের চালের প্রক্রিয়াকরণ সম্প্রসারণ করে এবং ধানক্ষেত পার্ক প্রতিষ্ঠা শুরু করে।
ক্যাপশন: ২০ অক্টোবর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা কর্মীদের সাহায্যে ধান তুলছে
গত ২০২১ সাল চালু হওয়ার পর, এ পার্ক ‘ধানের প্রতি ভালোবাসা এবং কৃষির পুনরুজ্জীবন’ চেতনাকে ধারণ করে ‘ধানক্ষেতে আছে স্বপ্ন এবং গ্রামে আছে প্রাণশক্তি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়, যেখানে আধুনিক কৃষি ও অবসর ভ্রমণকে সমন্বয় করা হয়। এর ফলে অধিক সংখ্যক পর্যটক এখানে ভ্রমণ করতে আসে।
অক্টোবর ধানক্ষেত পার্কের জন্য ব্যস্ততম মৌসুম। এ সময় পাকা ধান তোলা হয়। এছাড়া অনেক শিশু এসময় শরত্কালের ফলনের অভিজ্ঞতা নিতে এখানে আসে। কর্মীদের তত্ত্বাবধানে স্কুলের ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীরা ধানক্ষেতে ধান তোলে, ধানের শীষ তোলে ও গোছায়। এখানকার কর্মী লি ইউয়ে মিং বলেন, “প্রতিদিন আমি প্রাথমিক স্কুলের ছয় সাতশ’ শিক্ষার্থীকে শরত্কালীন ফলনের অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করি।”
ক্যাপশন: ২০ অক্টোবর ধানক্ষেত পার্কে তোলা ছবি - ছোট্ট ট্রেন
নানা জাতের চালের মধ্যে ৩৬ ধরনের চাল বাছাই করে এখানে প্রদর্শিন হয়। পুরো একটি দেয়ালজুড়ে থি-ডি স্ক্রিনে দেখা যায়, একটি বীজ থেকে চাল কীভাবে মানুষের প্লেটের খাবারে পরিণত হয়। জানা যায় চিন ছি চালের গল্প। পার্কে অবস্থিত চিন ছি চালের দোকানে সেদ্ধ চালের কেকের সুগন্ধ পাওয়া যায়।
পর্যটক চাং সিউ মিন চালের কেক তৈরি করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একটি চালের ইতিহাস সম্পর্কে জানা থেকে শুরু করে ধান তোলা, চালের কেকের স্বাদ নেওয়া পর্যন্ত অভিজ্ঞতা নিয়েছি। এ ধানক্ষেত পার্কে যেভাবে খেলেছি, সেটি আমার ও আমার বাচ্চার জন্য খুব বিষ্ময়কর অভিজ্ঞতা হয়েছে।”
ধানক্ষেত পার্কের প্রচারবিষয়ক পরিচালক হ্য লিন জানান, সম্প্রতি প্রতিদিন হাজারের বেশি পর্যটন পার্কে আসছে। পাশ্ববর্তী চিন ছি পার্ক, চিন ইয়াং হু পার্ক এবং থিয়ান লুং পাহাড়সহ নানা পর্যটন সম্পদ কাজে লাগিয়ে হুয়া থা গ্রামবাসীরা নিজেদের মতো হোমস্টে হোটেল স্থাপন করেছে। কিছু কিছু বয়স্ক গ্রামবাসী পার্কের কাজ নিয়েছেন। বাড়ির কাছেই একটি স্থায়ী বেতনের চাকরি করতে পারছেন তারা।
হ্য লিন আরও জানান, ধানক্ষেত পার্কের কারণে বিষ্ময়কর পরিবর্তন ঘটেছে এলাকার। ভবিষ্যতে ‘এক চাল’ শীর্ষক শিল্প চেইন সুবিন্যস্ত করা হবে এবং অব্যাহতভাবে কৃষি, সংস্কৃতি ও পর্যটনের সংমিশ্রণী পণ্য উন্নয়ন করা হবে, যাতে হুয়া থা গ্রাম এবং আশেপাশের গ্রামের আরও বেশি মানুষ ‘এক চাল’র বয়ে আনা কল্যাণ ভোগ করতে পারেন।”
রুবি/রহমান