নভেম্বর ৩: আগামী ৫ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত চীনের ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা ‘সিয়েছাও’ নামক শাংহাইয়ের জাতীয় প্রদর্শনী কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। কোভিড-১৯ মহামারীর পর এটি হবে অফলাইনে আয়োজিত চীনের প্রথম আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা।
আমদানিকে প্রধান বিষয় হিসেবে নেওয়া প্রথম জাতীয় পর্যায়ের এক্সপো এটি। চীনের উন্মুক্তকরণের দরজা ‘অধিক থেকে অধিকতর বড় হওয়ার’ সাক্ষী এই মেলা, যা চীনের উচ্চ পর্যায়ের উন্মুক্তকরণের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবে। ‘সিয়েছাও’ হচ্ছে ভালবাসা ও সুখের প্রতীক। এবারের মেলাকে বৈশ্বিক অর্থনীতির ‘সিয়েছাও’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
বৈশ্বিক বাণিজ্য উন্নয়ন ইতিহাসের এক অগ্রগামী দেশ হিসেবে ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রথম চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীন বিশ্বের কাছে আন্তরিকভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ‘চীনের আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা কেবল প্রতিবছর আয়োজন করাই হবে না; বরং এর গুণগত মান ও কার্যকারিতাও বাড়ানো হবে।’ অতীত পাঁচবার আয়োজিত আমদানি মেলায় ১৩১টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে, যেগুলোর মধ্যে ছিল নতুন পণ্য, নতুন প্রযুক্তি এবং নতুন পরিষেবা সম্পর্কিত ২ সহস্রাধিক প্রকল্প। মেলাগুলোতে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
জানা গেছে, ইতোমধ্যেই ৬০টিরও বেশি দেশ এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (হু), জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থা (ইউনিডো), আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র (আইটিসি)সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবারের মেলায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। ইতোমধ্যেই ৩ সহস্রাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বুথ প্রতিষ্ঠার কথা নিশ্চিত করেছে। মেলায় তাদের প্রদর্শনী এলাকার আয়তন হবে ৩ লাখ ৬০ বর্গমিটার।
২০২২ সালের ৪ নভেম্বরে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পঞ্চম চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন, যেখানে তিনি বলেন “পাঁচ বছর আগে আমি আমদানি মেলা আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিলাম। এর লক্ষ্য হলো উন্মুক্তকরণ আরও নিবিড় করা এবং চীনের বড় বাজারকে বিশ্বের জন্য বড় সুযোগে পরিণত করা। বর্তমানে আমদানি মেলা চীনের নতুন উন্নয়ন পরিস্থিতি গড়ে তোলার জানালায় পরিণত হয়েছে, যা উচ্চ মানের উন্মুক্তকরণকে এগিয়ে নেওয়ার প্ল্যাটফর্ম হয়েছে এবং ভাগাভাগি করা বৈশ্বিক গণ-পণ্য হয়েছে।” এ কথার মধ্য দিয়ে কেবল যে আমদানি মেলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও ফলপ্রসূতার উচ্চ স্তরের সারসংক্ষেপ করা হয়েছে, তা নয়; বরং উন্মুক্তকরণ নিবিড় করা এবং পারস্পরিক কল্যাণ বাস্তবায়নে চীনের দৃঢ়প্রতিজ্ঞাও ফুটে উঠেছে।
বর্তমানে চীন ‘দ্রুত গতিতে নতুন উন্নয়ন পরিস্থিতি গড়ে তোলা এবং উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার’ চেষ্টা করছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বহুবার জোর দিয়ে বলেছেন যে, নতুন উন্নয়ন পরিস্থিতি ‘এটি কোনভাবেই একটি বন্ধ চক্র নয়, বরং আরও উন্মুক্তকরণের দেশি-বিদেশি জোড়া চক্র।’
বিভিন্ন দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য চীনের বৃহৎ বাজারে আসার সেতু নির্মাণ করেছে আমদানি মেলা। এটি দেশের অর্থনৈতিক রূপান্তর, শিল্পের অগ্রগতি এবং ভোগের অগ্রগতিতে সাহায্য করে এবং উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং উত্থাপন করেন যে, ‘চীন তার বৃহৎ বাজারে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পক্ষের যৌথ ভাগাভাগিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে’, ‘বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পক্ষের ব্যবস্থাগত উন্মুক্তকরণের সুযোগ ভাগাভাগি করাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে’ এবং ‘বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পক্ষের আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সুযোগ ভাগাভাগি করাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে’।
বিগত ছয় বছরে একদরফাবাদ ও সংরক্ষণবাদের প্রেক্ষাপটে মহামারী-পরবর্তী আমদানি মেলার আয়োজন অধিক থেকে অধিকতর ভাল হয়েছে। বিশ্বে গত এক শতাব্দীতে অদেখা এই বড় পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির পুরুদ্ধারের চালিকাশক্তি যথেষ্ট নয়। তবে ‘পূর্বশ্রুতি’ প্রতি বছর প্রতিশ্রুতি অনুসারে আসে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শীতল তরঙ্গে উষ্ণতা যোগায় চীনের এই আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা। (ওয়াং হাইমান/রহমান)