একটি তথ্যচিত্র বানিয়ে চীনকে উপহার দিতে চান কলম্বিয়ার ভ্লগার
2023-11-02 18:43:19

কলম্বিয়ার ভ্লগার ফার্দান্দো মুনোজ বার্নাল (Fernando Muñoz Bernal) প্রায় ২০ বছর ধরে চীনে অবস্থান করছেন। বর্তমানে তিনি তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে নিজের গাড়িতে সারা চীন ভ্রমণ করছেন। এ ভ্রমণে কী কী অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা সেই গল্প শুনবো।

গত বছরের শুরুতে, কলম্বিয়ার ভ্লগার বার্নাল ও তার স্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে চীন ভ্রমণ শুরু করেন। তিনি একটি প্ল্যাটফর্মে তার সে ভিডিওর অংশবিশেষ নেটিজেনদের সঙ্গে শেয়ার করেন। গত এক বছরে এ দম্পতি চীনের অধিকাংশ স্থানে পা রেখেছেন। আমাদের সাংবাদিককে যখন তার সাক্ষাত্কার দেন, তখন বার্নাল সবে সি’আনে পৌঁছেছেন।

তিনি বলেন, “আমি এ ভ্রমণে শুটিং করা সব উপাদান নিয়ে আগামী গ্রীষ্মে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করবো। আগামী বছর চীনের জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে সেটা শেয়ার করবো চীনকে দেওয়া উপহার হিসেবে।”

কলম্বিয়ার সান্তিয়াগো ডি ক্যালি শহর থেকে এসেছেন বার্নাল। তিনি স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা পড়েছেন। ২০০০ সালের শেষ দিকে তিনি চীনে আসেন। সে সময় তিনি ভেবেছিলেন চীনে দু’তিন বছর থাকবেন। তবে সে ভাবনার বাইরে গিয়ে তিনি টানা বিশ বছর চীনে অবস্থান করছেন।

বার্নাল বলেন, “আমি একসময় থাইল্যান্ডে গিয়েছিলাম। সে দেশটাও ভালো। তবে বেতন অনেক কম। চীনে অনেক চাকরির অফার পাওয়া যায়, যার মানে চীনে ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। তাই আমি বেশ কয়েকটি স্কুলে শিক্ষাদানের জন্য আবেদন করি। অবশেষে একটি চাকরিতে যোগ দিই। বাস্তবতা হলো, প্রথম দিকে চীন সম্পর্কে আমার কোনও ধারণাই ছিল না।”

চীন থেকে কলম্বিয়া অনেক দূরে। সে সময় চীন সম্পর্কে কলম্বিয়ার জনগণের জানাশোনা ছিল সীমিত। ফার্নাল জানান, চীনে আসার পর প্রথম দিকে যখন পরিবারের সঙ্গে ফোনে তার কথা হতো, তখন আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকতো তার চীনের জীবন। ধীরে ধীরে তার চীনের জীবন ও ক্যারিয়ার ভালোর দিকে যেতে থাকে এবং একই সঙ্গে তাকে নিয়ে তার পরিবারের সবার দুশ্চিন্তাও কমে।

তিনি বলেন, “সময়ের গতিতে এখানে আমার অগ্রগতি ও উন্নয়ন দেখে কলম্বিয়ায় আমার আত্মীয়স্বজনের চিন্তা দূর হয়। এরপর আমাদের ফোনালাপের প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে ‘মায়ের শারীরিক অবস্থা কেমন’, ‘কে কে কেমন আছেন’ ইত্যাদি।”

তবে চীনে যত সময় কাটছে, বার্নাল তত বেশি মনে করছেন, চীন সম্পর্কে বিশ্বের জানাশোনা পর্যাপ্ত নয়। এটিই বার্নালের ভিডিও ভ্লগার হতে যাওয়ার কারণ। তিনি চান নিজের ভিডিওর মাধ্যমে আরও সার্বিকভাবে ও বলিষ্ঠতার সঙ্গে চীনকে পরিচয় করিয়ে দিতে।

এবার চীনজুড়ে ভ্রমণে বার্নাল চীনের তৈরি একটি বিদ্যুৎচালিত গাড়ি ব্যবহার করেছেন। গাড়ির পিছনে ছিল ‘আরভি’ বা ‘বিনোদনমূলক গাড়ি’ চিহ্ন। এটা অসম্ভব শোনাতে পারে। কারণ এমনিতে বিদ্যুৎচালিত গাড়ি বেশি দূরে যেতে পারে না, তাহলে গাড়ির চেয়ে আরও বড় আরভি নিয়ে ভ্রমণ করা কীভাবে সম্ভব হলো? তবে বার্নাল চমৎকার পরিকল্পনা নিয়ে নামেন। তিনি প্রথমে পূর্ব উপকূলীয় প্রদেশ ভ্রমণে যান। কারণ সে সব অঞ্চলে রয়েছে চার্জিং অবকাঠামো। তারপর তিনি মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

কুয়াং তোং থেকে রওয়ানা দিয়ে চে চিয়াং, শান তোং হয়ে তারপর অন্তর্মঙ্গোলিয়া, কান সু, ইয়ুন নানসহ নানা স্থান ভ্রমণ করেছেন বার্নাল। চীনের সম্পূর্ণ চার্জিং অবকাঠামোর কারণে তার যাত্রা খুব ভালো হয়েছে। নিজের গাড়ি চালিয়ে ভ্রমণ করার মাধ্যমে তিনি চীনের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি পূর্ণ ধারণা নিতে পেরেছেন।

তিনি বলেন, “চীনের হাই এক্সপ্রেসওয়ে খুবই ভালো, যার কোনো খুঁত নেই। নিজের গাড়ি চালিয়ে ভ্রমণের মাধ্যমে চীনের অবকাঠামোর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছি। আমার দেশে এ অবকাঠামো থাকলে ভালো হতো। তাতে কলম্বিয়ার চেহারা বদলে যেতো।”

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও কলম্বিয়ার আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্কের দ্রুত উন্নতি হয়েছে। কলম্বিয়ার কফি ও চকলেট চীনের বাজারে অনেক জনপ্রিয় হয়েছে। দেশটির গরুর মাংস চীনে রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে। বার্নাল বলেন, কলম্বিয়ায় কৃষিপণ্য অনেক বেশি। তিনি আশা করেন, দু’দেশ অবকাঠামো খাতে আরও সহযোগিতা চালাবে, যাতে কলম্বিয়ার কৃষিপণ্য চীনে রপ্তানির ভালো সুযোগ তৈরি হয়।