চীনের হুবেই প্রদেশের চিংশান শহরে এক গ্রামীণ টেনিস প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। এই শহরকে ‘চীনের টেনিস শহর’ হিসেবে গণ্য করা হয়। আজকের অনুষ্ঠানের প্রথম অংশে আমরা একসঙ্গে হুবেই প্রদেশের চিংশান শহরে ঘুরে বেড়াবো।
২০২২ সালের শেষ দিকে চিংশান শহরে স্থায়ী জনসংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৫শরও কিছু বেশি এবং তাদের মধ্যে লক্ষাধিক লোক সারা বছর টেনিসে অংশগ্রহণ করেন। এর মানে হলো প্রতি ৫ জন চিংশানবাসীর মধ্যে ১ জন টেনিস খেলতে পছন্দ করেন। টেনিস এখানে কেন এত জনপ্রিয় হচ্ছে? আমরা পরে এ প্রশ্নের জবাব খুঁজবো ।
বিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকে চিংশান টেনিস প্রতিযোগিতা জনপ্রিয় করে তুলতে শুরু করে। টেনিস ধীরে ধীরে একটি ‘কুলীন খেলা’ হিসেবে তার পরিচয় হারিয়েছে এবং একটি শারীরিক ফিটনেস খেলা হিসেবে তার আসল প্রকৃতিতে ফিরে এসেছে। চীনের টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস-চেয়ারম্যান এবং টেনিস তারকা চেং চিয়ে বলেন, “চিংশান শহরে টেনিস খেলার পরিবেশ খুব ভালো এবং জনসাধারণের অংশগ্রহণ অনেক বেশি। এখানে টেনিস কেবল পেশাদারিত্ব ও উচ্চমানের প্রতিফলনই নয়, বরং ব্যাপক অংশগ্রহণকে প্রতিফলিত করে।”
বর্তমানে চিংশান শহরে ৩০০টিরও বেশি টেনিস কোর্ট রয়েছে এবং ৫৮টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে টেনিস কোর্স খুলেছে। কৃষকরা টেনিস কোর্টে একটি উচ্চ-উদ্দীপনাপূর্ণ উপস্থিতিও দেখাতে পারেন।
ষাট বছর বয়সী পোং চু ফাং ৫০টিরও বেশি গরু পালন করেন এবং তিনি খুব ভালো টেনিসও খেলেন।
পোং চু ফাং ৩৫ বছর ধরে টেনিস খেলছেন এবং বহুবার প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এক দশকে তার কাছে টেনিস শিখা মানুষের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, “সকালে ও বিকেলে একবার গরুকে খাওয়ানো ছাড়া আমি মূলত টেনিস নিয়েই থাকি। দিনে নিজেই খেলি এবং রাতে অন্যকে শেখাই।”
তিনি আরও বলেন, “শূন্য থেকে শুরু করি। আমি প্রথমে একটি কাঠের টেনিস র্যাকেট দিয়ে খেলতে শুরু করি। অনেকে তখন বলেন, টেনিস শুরু করা কঠিন এবং অনেকে এটিকে একটি মার্জিত খেলা হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে, আমি মনে করি, টেনিস আসলে সব বয়সের জন্য উপযুক্ত একটি খেলা। এটি শরীরকে শক্তিশালী করতে, মন চাঙ্গা করতে এবং বন্ধুদের সঙ্গে বিনিময় করতে সহায়ক।”
২০১৮ সালে চিংশান শহরে হুবেই প্রদেশের টেনিস স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানকার শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত টেনিস প্রতিযোগিতায় ২৪টি স্বর্ণপদক, ১৪টি রৌপ্যপদক ও ১৪টি ব্রোঞ্জপদক জিতেছে। খেলাধুলা ও শিক্ষা একত্রিত হয়েছে এ স্কুলে এবং এর উঁচুমানের শিক্ষাদান অন্যান্য স্থানের অনেক শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করেছে। আনহুই ও চিয়াংসিসহ অন্যান্য প্রদেশের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এখানকার মোট সংখ্যার ২০ শতাংশ।
চিংশান শহরের ওয়েনফোং গ্রামকে চীনের টেনিসের প্রথম গ্রাম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। গ্রামটি এবার হুবেই গ্রামীণ টেনিস প্রতিযোগিতা সৃষ্টিকারী গ্রামও। সারা গ্রামে মোট ৮০টিরও বেশি টেনিস কোর্ট আছে। গ্রামে কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) শাখার সম্পাদক হু চি পোং বলেন, “এবারের গ্রামীণ টেনিস প্রতিযোগিতায় অনেক বরাদ্দ দিয়েছি আমরা। প্রতিযোগিতা দেখার এবং গ্রামে ভ্রমণ করার জন্য আরও বেশি মানুষকে আকৃষ্ট করতে চাই আমরা। আমিও টানা এক বছরের প্রচেষ্টায় টেনিস শিখে ফেলেছি এবং আগামী বছরে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা করবো।”
জানা গেছে, অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হুবেই প্রদেশের গ্রামীণ টেনিস প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সারা দেশের ৬০টিরও বেশি প্রতিনিধিদল এবং ৫০০ জনেরও বেশি টেনিস অনুরাগী আকৃষ্ট হয়েছেন।
চলতি বছর একটি ‘টেনিস প্লাস সাংস্কৃতিক পর্যটন’ শিল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত সম্পদের ওপর নির্ভর করছে চিংশান। স্থানীয় পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত টেনিসভিত্তিক শহরটি লক্ষ লক্ষ পর্যটক আকৃষ্ট করেছে এবং ৬ দশমিক৭৯ বিলিয়ন ইউয়ান আয় অর্জন করেছে।