যেভাবে আপেলের চাষ হচ্ছে ইনার মঙ্গোলিয়ায় | শেকড়ের গল্প | পর্ব ৪২
2023-11-01 18:21:00


এবারের পর্বে রয়েছে

১. যেভাবে আপেল চাষ হচ্ছে ইনার মঙ্গোলিয়ায়

২. ক্ষারযুক্ত মাটিতে ফল চাষ করে সাবলম্বী চীনের কৃষকরা

 

বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।

কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।

 

যেভাবে আপেলের চাষ হচ্ছে ইনার মঙ্গোলিয়ায়

ইনার মঙ্গোলিয়ায় বেশ বড় পরিসরে আপেলের চাষ করা হয়।  সম্প্রতি সেখানে ঘুরে এসেছে সিএমজি বাংলা টিম। আমরা ঘুরে এসেছে । সেখানে সমবায় সমিতির মাধ্যমে গ্রামবাসীদের জমি এক করে আপেল চাষ করা হয়। সেখানকার আপেলগুলো বেশ রসালো আর দারুণ স্বাদের।

 

                                           

এটি ইনার মঙ্গোলিয়ার পিং আন গ্রাম। এই গ্রামে কয়েক হেক্টর জায়গা জুড়ে চাষ করা হচ্ছে আপেল।

ছোট বড় মাঝারি নানা ধরনের আপেল চাষ করা হয় এখানে। যে আপেলগুলো রোদ বেশি পায় সেগুলোর রং লাল হয়, আর যেগুলো রোদ কম পায় সেগুলোর রং কিছুটা সবুজাভ হয়ে থাকে।

 

পিং আন গ্রামের সমবায় সমিতির প্রধান

"আমি এখানকার আপেল সমবায় সমিতির প্রধান। ২০১৮ সাল থেকে গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় আমি এখানে সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করি। আমাদের এখানে নানা ধরনের আপেল চাষাবাদ করা যায়।  আপেল চাষ করার জন্য এখানকার আবহাওয়া খুবই উপযুক্ত। এখানকার বাতাস প্রায় সময় শুষ্ক থাকে। আসলে বাতাসে আদ্রতা বেশি থাকলে পোকামাকড় বেশি হয়। সেদিক  থেকে আমরা সৌভাগ্যবান। কোনো রকম ঔষধ ও কেমিক্যাল ছাড়া আমরা মানসম্মত আপেল উৎপাদন করা করতে পারি।"

যে আপেল গুলো ঝরে ঝরে পড়ে যায় সেগুলো তোলা হয় না। এগুলো মাটির মধ্যে পুঁতে দিয়ে সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

এখানে প্রত্যেকটা কাছে ২৫ কেজি পর্যন্ত আপেল চাষ করা যায়। এর চেয়ে বেশি আপেল ধরলে স্বাদে ভিন্নতা আসে। এখানাকার মাটিগুলো কিছু বালি প্রকৃতির আর এ মাটিতেই আপেলের চাষ ভালো হয়।

এখানকার আপেলগুলোতে কোন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। এজন্য একদম সতেজ আপেলের স্বাদ নিতে পারেন ক্রেতারা।

প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি

সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান

 

ক্ষারযুক্ত মাটিতে ফল চাষ করে সাবলম্বী চীনের কৃষকরা

চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ শানসির সুন্দর একটি গ্রাম চিয়াওপো। গ্রামটি ইয়েলো নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত বন্যার পানি চিয়াওপোর ১ হাজার হেক্টর উর্বর কৃষি জমিকে লবণাক্ত-ক্ষারযুক্ত মাটিতে পরিণত করে রেখেছিল। যদিও গত ২৩ বছরে এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।

দেশটির অন্যতম দারিদ্র্যপীড়িত এ অঞ্চলটি বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শীতকালীন জুজুমি ফলের  উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জুজুমি ফল চাষ এবং বিক্রির মাধ্যমে স্থানীয়রা নিজের আয় ও জীবনযাত্রার মান বাড়িয়েছে। পাশাপাশি অনেক তরুণ এ ফলের চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯৯৫ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত গ্রামের গড় মাথাপিছু আয় ছিল বছরে মাত্র ৪৮০ ইউয়ান।

তবে ১৯৯৮ সালে ৪৩ বছর বয়সে সুয়ে আনছুয়ান চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চিয়াওপো গ্রাম শাখার প্রধান নির্বাচিত হন। এরপরে তিনি গ্রামের অর্থনীতিকে বদলে দেয়ার চেষ্টা করেন। গবেষণা ও জরিপ পরিচালনা করে পরীক্ষামূলকভাবে ক্ষার-সহনশীল জুজুমি ফল রোপণ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

২০০১ সালে তিনি ১ লাখ ৮০ হাজার জুজুমি গাছের চারা কেনার জন্য ২ লাখ ইউয়ানের একটি তহবিল গঠন করেন। এসব চারা পরীক্ষামূলকভাবে চাষের জন্য গ্রামবাসীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করেছিলেন। যদিও প্রাথমিকভাবে স্থানীয়দের কেউই প্রস্তাবটি গ্রহণ করেনি। তাই গ্রামের ২৩ জন সিপিসি সদস্য প্রত্যেকে শূন্য দশমিক ৬৭  হেক্টর জমিতে চুচুবের চারা রোপণের দায়িত্ব নেন। এর জন্য তিনি ১৩ দশমিক ৩ হেক্টরেরও বেশি জমি অধিগ্রহণ করেন এবং অনেক যত্ন নেওয়ার পর অধিকাংশ চারা ওই বিরূপ পরিবেশে বেড়ে ওঠে।

সুয়ে বলেন, মাটিতে ক্ষারত্বের মাত্রা কমানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি খুঁজে বের করা হচ্ছে। চারাগুলো যাতে ভূগর্ভস্থ ‘ব্রিনিশ ওয়াটার’ এর পরিবর্তে ‘মিষ্টি পানি’ শোষণ করতে পারে এর জন্য ৩ কিলোমিটার দূরের একটি উত্স থেকে তরল সরবরাহের জন্য দিনে ১০টি ট্রাইসাইকেল ব্যবহার করা হয়েছে।

রোপণের চার বছর পর জুজুমি গাছে ফল আসে এবং এর স্বাদও অনেক ভালো। পরের বছরগুলো মূল গাছগুলোতে কলম করে বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করেন সুয়ে আনছুয়ান। এ ছাড়া ঘন ঘন ঝড়ের কারণে ফল পচে যাওয়া ঠেকাতে এবং পাকা ফল সংরক্ষণের জন্য গ্রিনহাউজ তৈরি করেন।

পরবর্তীতে গ্রামবাসীরা এ ফল চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। মানসম্মত ফলন এবং বিক্রয় ধরে রাখার জন্য সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জুজুমি ফল চাষ করেন তারা।

এদিকে চিয়াওপো গ্রামে এ ফলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পর্যটন প্রকল্পও গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে- ফল সংগ্রহের বাগান, সাংস্কৃতিক করিডোর, দর্শনীয় মিনিট্রেন, সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী পার্ক এবং শিশুদের জন্য বিনোদন পার্ক।

প্রতিবেদন: আনোয়ার শুভ

সম্পাদনা: এইচআরএস অভি

 

 

 

এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচআরএস অভি।

এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল 

সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী