নভেম্বর ১: ‘আমাদের উচিত বিভিন্ন পক্ষের মতামত শোনা, পারস্পরিক কল্যাণকর ধারণা নির্ধারণ করা— এটি বেইজিং সিয়াংশান ফোরামের অভিমত।’ আফগান উন্নয়ন ও শান্তি গবেষণা কেন্দ্রের মহাপরিচালক খাদিম এবারের সিয়াংশান ফোরামে এ মন্তব্য করেছেন। গত ৩১ অক্টোবর দশম বেইজিং সিয়াংশান ফোরাম বেইজিংয়ে শেষ হয়েছে। সম্মেলন চলাকালে শতাধিক দেশ, অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ১৮০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি ‘যৌথ নিরাপত্তা এবং স্থায়ী শান্তির’ মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। এবারের ফোরামে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ও বিভিন্ন পর্যায় নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
চার বছর পর প্রথমবারের মতো অফলাইনে বেইজিং সিয়াংশান ফোরাম আয়োজন করা হয়। ইউক্রেন সংকট এবং ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘর্ষের পটভূমিতে এবারের ফোরাম বেশ সজাগ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এতে সবার যৌথ নিরাপত্তা ইস্যু আলোচনা করা হয় এবং বিনিময় ও সংলাপ এগিয়ে নেওয়ার আশা-আকাঙ্ক্ষা ফুটিয়ে তোলে।
চীনের উত্থাপিত বৈশ্বিক নিরাপত্তা প্রস্তাব ইতোমধ্যেই বিশ্বের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধান প্রস্তাবে পরিণত হয়েছে। যা শতাধিক দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। বৈশ্বিক নিরাপত্তা প্রস্তাব বাস্তবায়নের এক গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেইজিং সিয়াংশান ফোরাম ‘যৌথ নিরাপত্তা এবং স্থায়ী শান্তির’ মূল প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে এই প্রস্তাবের মূল ধারণা তুলে ধরেছে। যা বিভিন্ন পক্ষের নিরাপদ উপায় খুঁজে বের করা এবং নিরাপদ সহযোগিতাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
কীভাবে ‘যৌথ নিরাপত্তার’ ধারণায় চলা যায়? এবারের বেইজিং সিয়াংশান ফোরামের আলোচনায় সবাই এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন।
নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে বড় রাষ্ট্রগুলো। এবারের ফোরামে মার্কিন নৌবাহিনীর বিশ্লেষণ বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপক ডেভিড ফিনকেলস্টেইন তাঁর সাক্ষাত্কারে বলেন যে, ‘আমি মনে করি, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক পুনরায় শুরু করা দরকার’। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সম্পর্ক বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য মুখপাত্রের কথামতো, বেইজিং সিয়াংশান ফোরাম খুবই ভাল একটি প্ল্যাটফর্ম, যাতে সবাই পারস্পরিক যোগাযোগ এবং পারস্পরিক বিনিময় করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একে অপরের কাছাকাছি হবে- এমন প্রত্যাশা করে সবাই। এটি দু’দেশের সামরিক সম্পর্কের সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
সবসময় বেইজিং সিয়াংশান ফোরামের এক স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তা হল আরও বেশি উন্নয়নশীল দেশকে ‘মাইক্রোফোন’ দেওয়া এবং তাদের ‘কথা বলার অধিকার’ দেওয়া। সাংঘর্ষিক পক্ষ যেমন- ইসরাইল ও আরব দেশগুলো, রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদেরকে আমন্ত্রিত জানিয়ে এবারের ফোরামে আলোচনা করেছেন। ‘যৌথ নিরাপত্তার’ সংলাপ ও পরামর্শের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের মতভেদ ও বিরোধ দূর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেইজিং সিয়াংশান ফোরাম এজন্য একটি ভাল সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
তা ছাড়া, নিরাপত্তা বিষয়বস্তু অব্যাহতভাবে সমৃদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা এবং জৈব নিরাপত্তাসহ বৈশ্বিক অপ্রচলিত নিরাপত্তা সমস্যায় অধিক থেকে অধিকতর গুরুত্বারোপ করা হয়। ‘যৌথ নিরাপত্তা’ বাস্তবায়ন করায় প্রচলিত এবং অপ্রচলিত খাতের নিরাপত্তা সমন্বয় করা দরকার। এবারের বেইজিং সিয়াংশান ফোরামে এআই-সহ নানা বিষয়ে নবোদিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। যা বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদী উপায় খুঁজে বের করবে।
দশম বেইজিং সিয়াংশান ফোরামের সময়টি, চীনের উত্থাপিত ‘মানবজাতির অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটির’ ধারণা গড়ে তোলার দশম বার্ষিকীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই জটিল ও কঠোর আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সবাই উপলব্ধি করতে পারে যে, নিরাপত্তা উন্নয়নের পূর্বশর্ত এবং মানবজাতি হচ্ছে অবিচ্ছেদ্য নিরাপদ একক।
(ওয়াং হাইমান/তৌহিদ/ছাই)