‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৪২
2023-10-31 19:32:00


এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে    

১। চীনের ২৬টি প্রদেশে ঘুরেছেন বাংলাদেশি ছাইয়েদুল

২। ঘুরে আসুন চীনের ছাওইয়াং পার্ক থেকে

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।  

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৪২তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।    

১।  সাক্ষাৎকার পর্ব- চীনের ২৬টি প্রদেশে ঘুরেছেন বাংলাদেশি সাইয়েদুল

    ঘুরে বেড়াই’ অনুষ্ঠানের এ পর্বে কথা হয়েছে চীন ঘুরে বেড়ানো একজন বাংলাদেশীর সাথে।তিনি চীনের চিয়াংসি ইউনিভার্সিটি অফ ফাইন্যান্স এন্ড ইকোনমিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পিএইচডি গবেষক। তাছাড়া ছিংহাই প্রভিন্সিয়াল পিপলস অ্যাসোসিয়েশন ফর ফ্রেন্ডশিপ উইথ ফরেন কান্ট্রিস এর ওভারসিজ ডিরেক্টর, বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এর চীনা রিপ্রেজেন্টেটিভ, লেই ফাং ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার অ্যাসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট, অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ-চায়না অ্যালামনাই এর প্রচার সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং চীনে অবস্থানরত একজন বাংলাদেশি সাংবাদিক। স্বাগত জানাচ্ছি মোহাম্মদ ছাইয়েদুল ইসলামকে।

 

·      .ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগতম। কেমন আছেন আপনি? –

ছাইয়েদুল - আমি ভালো আছি। আমাকে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

মোহাম্মদ ছাইয়েদুল ইসলাম

·       আপনি তো পাঁচ বছর ধরে চীনে আছেন পড়ালেখা করেছেন সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে।পড়ালেখার পাশাপাশি , এই কয়েক বছরে নিশ্চয়ই কোথাও ঘুরেছেন। আমরা জানতে চাই  আপনার কোথায় কোথায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছে?

ছাইয়েদুল - আমি চীন সরকারের স্কলারশিপ পেয়ে ২০১৮ সালে চীনে পড়তে আসি। আমি দীর্ঘ পাঁচ বছরে আমি চীনের অনেক জায়গায় ঘুরেছি। আসলে ভ্রমণ করাটা আমার নেশা। আমি চীনের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ২৬টি প্রদেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, মিউনিসিপালটিতে ঘুরেছি। তার মধ্যে, বেইজিং,শাংহাই, কুয়াংচৌ,শেনচেন, কুয়াংতোং,চেচিয়াং ,চিয়াংসি ও চিয়াংসু, কানসু, নিংসিয়া হুই  ও হ্যুপেই প্রদেশ অন্যতম। 

·      এই জায়গাগুলোতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? ভ্রমণের সময় কোন বিষয়টা আপনাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে?

ছাইয়েদুল -   চীন অনেক বড় একটি দেশ।আসলে চীন ধারণার চেয়েও বেশি সুন্দর। এখানকার একেক অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য একেক রকম। চীনে একটি কথা প্রচলিত আছে, কেউ যদি তার জীবনের সময়টুকু ব্যয় করে চীনের সৌন্দর্য দেখার জন্য তারপরেও শেষ করতে পারবে না। চীনের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত।তারা গ্রাম থেকে শহর যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত করেছে,যা পর্যটকদের জন্য খুবই সহায়ক।

টমেটো বাগানে মোহাম্মদ ছাইয়েদুল ইসলাম

আমাকে চীন ঘুরার সময়ে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে এখানকার জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি। চীনে ৫৬টি জাতিগোষ্ঠী রয়েছে এবং একেক জাতিগোষ্ঠীর একেকরকম বৈশিষ্ট্য। তারমধ্যে অন্যতম হলো,তং পিপল,হুই পিপল,মিয়াও পিপল ,ইয়াও পিপল। তাদের সংস্কৃতি আমাকে খুব আকৃষ্ট করেছে। এখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে কোন প্রতিযোগিতা নেই,কোন বাঁধা নেই।


চীনা নাগরিকের সাথে মোহাম্মদ ছাইয়েদুল ইসলাম

 

·      আপনি তো চীনা ভাষা পারেন? কিভাবে শিখলেন। ভাষা শিক্ষার জার্নিটা সমপর্কে যদি বলতেন।

ছাইয়েদুল – দীর্ঘদিন চীনে থাকার ও পাড়ালেখার সুবাদে বেসিক চীনা ভাষাটা পারি। আমার মাস্টার্স ও পিএইচডি পোগ্রামে কোন চীনা ভাষার কোর্স ছিল না, আমি ইংরেজীতে পড়েছি। তাই চীনা ভাষা যা শেখা হয়েছে তা চীনাদের সাথে কথা বলতে বলতে এবং শুনতে শুনতে।

একজন চীনা শিশুর সাথে মোহাম্মদ ছাইয়েদুল ইসলাম

 

·      বাংলাদেশের অনেকেই আছে যারা চীনে ঘুরতে যেতে চায়,  তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কী বলবেন?

ছাইয়েদুল - ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আমার বলা, একবার হলেও চীনে ঘুরতে আসা উচিত। চীনের ভাষা, সংস্কৃতি,ইতিহাস ও বাহারী সুস্বাদু খাবার ও দর্শনীয় স্থান দেখতে এখানে আসতে পারেন। চীনারা বন্ধুত্বপরায়ণ ও অতিথিপরায়ণ। তারা খুব সহজেই বিদেশীদের স্বাগত জানায়। 

·      আমাদের অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।

ছাইয়েদুল - আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

 

সাক্ষাৎকার গ্রহণ- আফরিন মিম

 

২। ঘুরে আসুন চীনের ছাওইয়াং পার্ক থেকে

বেইজিংয়ে এখন মনোরম হেমন্তকাল চলছে। এ সময় বেড়ানোর জন্য সবচেয়ে ভালো। পার্কে গেলে দেখা যায় গাছের পাতাগুলো সব লাল হয়ে গেছে। লাল, হলুদ, কমলা রঙে রঙিন এইসব গাছের পাতায় সূর্যের আলো পড়ে ঝলমল করে।

বেইজিং শহরে পার্কের অভাব নেই। ছোট বড় অনেক পার্ক রয়েছে এখানে। এর মধ্যে অন্যতম বড় পার্ক হচ্ছে ছাওইয়াং পার্ক। দূতাবাস পাড়ার খুব কাছেই এর অবস্থান। ছাওইয়াং জেলায় সাবেক রাজপুত্রের প্রাসাদের কাছেই রয়েছে এই পার্ক।

১৯৮৪ সালে এই পার্ক নির্মাণ শুরু হয়। এর দৈর্ঘ্য ২.৮ কিলোমিটার এবং চওড়ায় ১.৫ কিলোমিটার। ২৮৮.৭ হেকটর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই পার্ক।  এখানে জলাশয়ের পরিমাণ ৬৮.২ হেকটর। পার্কের অধিকাংশ জায়গায় সবুজের সমারোহ। এখানে রয়েছে ফুলের বাগান।

এখানে বড় একটি অংশে অনেক মজার মজার রাইড রয়েছে। শিশুদের জন্য যেমন মজার সব রাইড আছে তেমনি বড়দেরও জন্যও।

বিশাল বিশাল সব রোলার কোস্টার রয়েছে। আরও আছে বড় হুইল। মেরিগো রাউন্ড, ট্রেন ইত্যাদি রাইডও রয়েছে। পার্কে সুইমিং পুল আছে কয়েকটি। আরও আছে প্যাডেল বোটে চড়ে ঘোরার ব্যবস্থা। বাইসাইকেল চড়ার ব্যবস্থাও আছে।

এই পার্কের প্রাকৃতিক দৃশ্য অত্যন্ত সুন্দর। বেশ কয়েকটি ঝর্ণা আছে। আছে কারুকার্য করা সেতু। অনেকে ওয়েডিং ফটো তুলতে এখানে আসেন। বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যও আছে এখানে।

 

এই পার্কে প্রায়ই নানা রকম এক্সপো, মেলা, প্রদর্শনী হয়। এখানে পপ ফেস্টিভ্যালও হয়। এখানে বিচ ভলিবল খেলারও ব্যবস্থা রয়েছে। ২০০৮ সালে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের জন্য বিচ ভলিবল স্টেডিয়াম গড়ে তোলা হয়। হাইনান থেকে বালি নিয়ে আসা হয় এই ইভেন্টের জন্য।

ছাওইয়াং পার্কে অনেকেই তাবু নিয়ে যান। সপরিবারে পিকনিক করেন। আবার এখানে গাছে দোলনা টাঙিয়ে অবসর সময় কাটানোর সুযোগ রয়েছে। পার্কের ভিতরেও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। আর ছাওইয়াং পার্কের কাছেই রয়েছে বিভিন্ন দেশের খাদ্য পরিবেশনের জন্য অনেকগুলো চমৎকার রেস্টুরেন্ট।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী