বিশ্বের মৌলিক বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ভাগাভাগি করতে দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানীরা বেইজিংয়ে বসেছেন
2023-10-31 14:06:39

 

অক্টোবর ৩১: সম্প্রতি নোবেল পুরস্কার অর্জনকারীসহ সাতজন দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানী বেইজিংয়ে বৈঠক করেছেন। তাঁরা দর্শকদের কাছে পদার্থ বিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি তুলে ধরেছেন। এর মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক খাতে বিশ্বের নেতৃত্ব দেওয়া এক নতুন চীনের ছবি ফুটে উঠেছে।

 

২০২৩ সালের টেনসেন্ট সায়েন্স সম্মেলনে শুধু যে নোবেল পুরস্কার অর্জনকারী রয়েছেন- তা নয়, বরং চীনের বিজ্ঞান একাডেমি ও মার্কিন বৈজ্ঞানিক একাডেমিসহ শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাবিদরাও রয়েছেন। এতে পদার্থবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানের অগ্রগতির পাশাপাশি কৃষিবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিদ্যার সর্বশেষ আবিষ্কারগুলো তুলে ধরা হয়। বিগত বছরের মতো, এবারের সম্মেলন মৌলিক বিজ্ঞানের সবচেয়ে আধুনিক অগ্রগতি একত্রিত হয়েছে এবং আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে চীনের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক প্রভাবও ফুটে উঠেছে।

 

গ্রাফিন-কে ‘২১ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। ভবিষ্যতের শিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে- তার উন্নয়নে সবার উচ্চ আশা-আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। চীনের গ্রাফিন শিল্পের নেতৃস্থানীয় ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন ২০১০ সালের নোবেল পুরস্কার অর্জনকারী এবং ‘গ্রাফির জনক’ আন্দ্রে হেইম। তিনি তাঁর দলকে চীনের শেনচেনের গবেষকদের সঙ্গে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন,

‘এই উপাদান আগামী ১০ ও ২০ বছরের মধ্যে বেশ কিছু শিল্প খাতে বিপ্লব সৃষ্টি করবে। চীন সবার আগে গ্রাফিনকে শিল্পে ব্যবহৃত করেছে, চীনের উন্নয়নের গতি ভীষণ দ্রুত, ২০১০ সাল থেকে চীনের গ্রাফিন শিল্প বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে। বলা যায়, চীনের গ্রাফিন শিল্প বৈশ্বিক গ্রাফিন শিল্পের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে’।

 

মার্কিন বৈজ্ঞানিক একাডেমির শিক্ষাবিদ এবং ‘জালিকার রসায়ন’ ক্ষেত্রের অগ্রজ ওমার ইয়াকি তাদের দলের বৈজ্ঞানিক ফলাফল ভাগাভাগি করেন। তাঁদের গবেষণা অত্যন্ত বহুমুখী সুপারপোরাস ন্যানোমেটেরিয়াল-মেটাল-জৈব ফ্রেমওয়ার্ক (MOF) ব্যবহার করে মরুভূমির বাতাস থেকে পানি সংগ্রহ করে। সাক্ষাত্কারে  দূষণমুক্ত জ্বালানি ও পরিবেশ রক্ষা ক্ষেত্রে চীনের প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। তিনি বলেন,

‘বর্তমানে বিভিন্ন দেশ দূষণমুক্ত জ্বালানি ক্ষেত্রে বেশ বিনিয়োগ করে থাকে, চীনও এর ব্যতিক্রম নয়। আমি মনে করি যে,  বিশ্বের সব দেশই সঠিক পথে অগ্রসর হচ্ছে এবং যৌথভাবে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। আমি মনে করি, ফ্রেমওয়ার্ক কেমিস্ট্রির ভবিষ্যতে বিস্তৃত সম্ভাবনা রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ সুরক্ষা- সবই আমাদের সমস্যা। এতে বিভিন্ন দেশের রসায়নবিদদের সহযোগিতা দরকার, চীনের সাথে আরও সহযোগিতা করার প্রত্যাশায় রইলাম’।

 

কৃষিবিজ্ঞান শতাধিক নব্যতাপ্রবর্তনের প্রক্রিয়ায় চলেছে। এটি মানুষ ও প্রকৃতির ভারসাম্য এবং মানবজাতির সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। চীনের বৈজ্ঞানিক একাডেমির শিক্ষাবিদ এবং জাতীয় জার্মপ্লাজম কেন্দ্রের মহাপরিচালক ছিয়ান ছিয়ান চীনের ধান প্রজনন-সংক্রান্ত তিন দফার প্রযুক্তিগত সংস্কার তুলে ধরেন। এতে ‘ইউয়ান লুং পিং’ শিক্ষাবিদ দলের গবেষণাকাজ ধানের উল্লেখযোগ্য উত্পাদন বাড়িয়েছে, এটি ‘দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লবকে’ নেতৃত্ব দিয়েছে। সেই সঙ্গে, এটি চীনসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর খাদ্যশস্য সমস্যার সমাধানে বিশাল অবদান রেখেছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

‘এ বছর ‘বিশ্বের প্রথম হাইব্রিড ধানের’ সুষ্ঠু লালন-পালনের ৫০তম বার্ষিকী। বর্তমান বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশ চীনের এই হাইব্রিড ধানের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, হাইব্রিড ধান বিশ্বে জনপ্রিয় হচ্ছে। তবে, এই প্রযুক্তিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও এশিয়ার সঙ্গে আরও সঙ্গতিপূর্ণ করার পাশাপাশি স্থানীয় বিভিন্ন রোগবালাই ও উচ্চ তাপমাত্রা থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন চীনা বিজ্ঞানীরা।

(ওয়াং হাইমান/তৌহিদ/ছাই)