বিজ্ঞানবিশ্ব ৪২তম পর্ব
2023-10-30 19:54:16

 

চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব

৪২তম পর্বে যা থাকছে:

 

* কীট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে স্বল্প-কার্বন বিল্ডিং উপাদান তৈরি করলেন চীনা বিজ্ঞানীরা

* ২০২২ সালে নতুন ১৩২ মিনারেল ডিপোজিট আবিষ্কার করেছে চীন

* লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসায় অভাবনীয় সফলতা পেয়েছেন চীনা চিকিৎসকরা

 

 

 

কীট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে স্বল্প-কার্বন বিল্ডিং উপাদান তৈরি করলেন চীনা বিজ্ঞানীরা

চীনের বিজ্ঞানীরা সামুদ্রিক কীট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি নতুন স্বল্প-কার্বনযুক্ত ভবন-নির্মাণ উপাদান তৈরি করেছেন। এর ফলে এখন থেকে ভবন নির্মাণে শক্তি সংরক্ষণ করা যাবে অর্থাৎ শক্তির অপচয় হবে না এবং কার্বণ নিঃসরণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

একটি বিশেষ ধরনের সামুদ্রিক কীট যাকে বলা হয় ‘স্যান্ডক্যাসল।’ এই কীট বিশেষ এক পদ্ধতিতে নিজেদের বাড়ি তৈরি করে। তাদের বাড়ি কলোনিয়াল স্যান্ডক্যাসল’ নামে পরিচিত। বাড়ি তৈরির সময় তাদের শরীর থেকে নিঃসৃত এক ধরনের আঠালো পদার্থ ব্যবহার করে বালুরকণাগুলোকে একত্র করে।

এই কীট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রকৃতি-নির্ভর আঠালো পদার্থ ব্যবহার করে নতুন একটি ভবন-নির্মাণ উপাদান তৈরি করেন চীনা বিজ্ঞানীরা। নতুন উদ্ভাবিত এ নির্মাণ উপাদানটি স্বল্প তাপমাত্রা এবং বায়ুমণ্ডলীয় চাপেও উৎপাদন করা যায়।

চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের (সিএএস) টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট অব ফিজিক্স অ্যান্ড কেমিস্ট্রির (টিআইপিসি) গবেষকরা পদার্থবিজ্ঞান সংক্রান্ত ‘ম্যাটার’ জার্নালে এ সংক্রান্ত গবেষণাকর্মটি প্রকাশ করেন।

টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট অব ফিজিক্স অ্যান্ড কেমিস্ট্রির (টিআইপিসি) গবেষক এবং গবেষণা নিবন্ধের লেখক ওয়াং শুথাও বলেন, “প্রথাগত সিমেন্ট-নির্ভর নির্মাণ উপকরণগুলোর উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রচুর শক্তি ব্যয় হয় এবং একই সঙ্গে প্রচুর কার্বন নিঃসরণ হয়। সুতরাং নতুন স্বল্প-কার্বন এ বিল্ডিং উপকরণটির বিকাশ অত্যন্ত জরুরি।“

গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, এ বিল্ডিং উপাদান বিভিন্নভাবে ব্যবহার উপযোগী। এটি বিভিন্ন বালুকণা যেমন- মরুভূমির বালু, সমুদ্রের বালু, কংক্রিট স্ল্যাগ, কয়লা সিন্ডার এবং খনিজ অবশিষ্টাংশ দিয়ে তৈরি। এর ভাল কর্মক্ষমতা, স্বতন্ত্র পুনর্ব্যবহারযোগ্যতা, ক্ষয়প্রতিরোধী গুণ এবং পরিমাপযোগ্যতা রয়েছে।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

 

·       ২০২২ সালে নতুন ১৩২ মিনারেল ডিপোজিট আবিষ্কার করেছে চীন

২০২২ সালে মোট ১৩২টি নতুন মিনারেল ডিপোজিট আবিষ্কার করেছে চীন, যা দেশটির জাতীয় সম্পদের মজুদ বাড়িয়েছে এবং নিরাপত্তা উন্নত করেছে। একই বছর চীনের খনিশিল্পে স্থায়ী বিনিয়োগ এবং প্রধান খনিজ পণ্যের উৎপাদনও ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে ২০২২ সালের শেষ নাগাদ ১৭৩ ধরনের খনিজ আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ ধরনের জ্বালানি খনিজ, ৫৯ ধরনের ধাতব খনিজ, ৯৫ ধরনের অধাতু খনিজ এবং ছয় ধরনের জল-গ্যাস খনিজ রয়েছে। সম্প্রতি চায়না মাইনিং কংগ্রেস অ্যান্ড এক্সপোতে প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয় এসব তথ্য জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের খনিজ সম্পদ সুরক্ষা ও তত্ত্বাবধান বিভাগের কৌশলগত পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক ইয়ু হাইয়াং বলেন, ২০২২ সালে চীনে তেল-গ্যাস এবং নন-ওয়েল ও গ্যাস খনিজের ভূতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৩২টি নতুন মিনারেল ডিপোজিট আবিষ্কৃত হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০২২ সালে থারিম, চুংকার, বোহাই বে এবং সিছুয়ানসহ তেল ও গ্যাসসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোতে ভূতাত্ত্বিক স্তরে নতুন তেল ও গ্যাসের খনি অনুসন্ধানে ভালো অগ্রগতি হয়েছে। এর মধ্যে কয়লা, লোহা, তামা, সোনাসহ পৃথিবীতে দুর্লভ যেসব ধাতু রয়েছে সেগুলোর পাশাপাশি ছড়িয়ে থাকা ধাতু এবং নন-ওয়েল ও গ্যাসের অনুসন্ধানে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে চীনের খনিশিল্পে স্থায়ী বিনিয়োগ এবং প্রধান খনিজ পণ্যের উৎপাদন উভয়ই ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে কয়লার উৎপাদন রেকর্ড ৪ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন টনে পৌঁছেছে এবং অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন ২০৫ মিলিয়ন টনে পৌঁছেছে, যা টানা চার বছর ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইয়ু হাইয়াং বলেন, “আমরা জাতীয় খনিজ সম্পদের ১৪তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছি। আমরা ভূতাত্ত্বিক অনুসন্ধান কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করেছি এবং সেইসঙ্গে ভূতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের নিরাপত্তাও জোরদার করেছি। এছাড়া পিয়ার-রিভিউ, পরিসংখ্যান এবং খনিজ সম্পদ সংরক্ষণের তত্ত্বাবধান মানও উন্নত করা হয়েছে। আমরা তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান ব্লকের স্থানান্তর জোরদার করেছি, স্যান্ডস্টোন খনির ব্যবস্থাপনাকে মানসম্মত করেছি, লৌহ আকরিকের জন্য সম্পদ নিশ্চয়তা শক্তিশালী করেছি এবং খনি অধিকারের নিবন্ধন পদ্ধতিকে আরও সহজতর করেছি।”

চীনের মৌলিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে ২০২২ সাল থেকে। এ ছাড়া দেশটির জাতীয় ভূগর্ভস্থ পানিসম্পদের বার্ষিক মূল্যায়ন এবং সঞ্চয়স্থান পরিবর্তনের জরিপও সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি সামুদ্রিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ, খনিজ সম্পদ জরিপ এবং মহাসাগর ভূতাত্ত্বিক জরিপ বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

 

·       লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসায় অভাবনীয় সফলতা পেয়েছেন চীনা চিকিৎসকরা

 

লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসায় ইনোভেটিভ ‘টার্গেটেড থেরাপি’ সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন চীনের একটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা, যা এ ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসায় নতুন অগ্রগতি। সম্প্রতি দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর শেনচেনের হাসপাতাল থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

টার্গেটেড থেরাপি হলো এক ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসাপদ্ধতি। এ ধরনের থেরাপিতে সাধারণ কোষকে প্রভাবিত না করে ক্যান্সার কোষকে ‘লক্ষ্য’ করে চিকিৎসা করা হয়। ক্যান্সারের চিকিৎসায় টার্গেটেড থেরাপির গবেষণা চলমান। চীনের সুন ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম অধীভুক্ত হাসপাতালের অধ্যাপক হে সিয়াওশুনের দল ‘অর্গান-টার্গেটেড থেরাপি’ চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।

সম্প্রতি চীনে ৫৫ বছর বয়সী একজন রোগী শরীরের প্রথমবারের মতো ‘অর্গান-টার্গেটেড থেরাপি’ প্রয়োগ করে সফলতা পেয়েছেন চিকিৎসকরা। ওই রোগীর বিভিন্ন অঙ্গে বিশেষ করে ফুসফুস ও হাড়েও ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছিল। অর্থাৎ ওই ব্যক্তি লিভার ক্যান্সারের চতুর্থ বা শেষ স্তরে ছিল।

সুন ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম অধিভুক্ত হাসপাতালের চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেছেন, হাই-কনসেনট্রেশন কেমোথেরাপিগুলো শুধুমাত্র রোগীর লিভারের ক্যান্সারযুক্ত অংশকে টার্গেট করে, লিভারের সুস্থ অংশ ও শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে না।

সিয়াওশুনের মতে, অস্ত্রোপচারের সময় লিভারের বাম এবং ডান লোব বা অংশকে আলাদা করার পর চিকিৎসকরা দ্রুত ডান লোবের ক্যান্সারযুক্ত অংশে একটি ক্যাথেটার প্রবেশ করান এবং এটি একটি পারফিউশন ডিভাইসের সঙ্গে সংযুক্ত করেন।

সিয়াওশুনের দলের আবিষ্কার করা ‘মাল্টি-অর্গান মেইন্টেন্যান্স সিস্টেম’ ব্যবহার করে চিকিৎসকরা ডান লোবের রক্ত সরবরাহ ও জীবনীশক্তি ধরে রাখার পাশাপাশি কার্যকরভাবে ডান লোবের রক্তকে ‘বহির্মুখী চলাচল’ অব্যাহত রেখেছিলেন। টিউমার টিস্যু নিষ্ক্রিয় করার জন্য দুই ঘণ্টা ধারাবাহিকভাবে কেমোথেরাপি প্রয়োগ করা হয়।

সিয়াওশুন জানিয়েছেন, কেমোথেরাপির পর রোগীদের সাধারণত যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন বমি বমি ভাব, বমি ও চুল পড়ে যাওয়া দেখা যায় এর কোনোটিই লক্ষ্য করা যায়নি। অর্থাৎ এর থেকে এটিই প্রমাণ হয় যে, নতুন এ কৌশলটি ক্যান্সারের কেমোথেরাপিতে আশাব্যঞ্জক একটি নতুন পদ্ধতি।

পরবর্তীতে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে রোগীর ডান লিভারে সফলভাবে একটি হেপাটেক্টমি করা হয় এবং কেমোথেরাপির পর দেখা যায় লিভার ক্যান্সারের প্রায় ৯০ শতাংশ কমে গিয়েছে। হেপাটেক্টমি বা লিভার রিসেকশন হলো লিভারের অংশবিশেষ বা পুরো লিভার অপসারণের জন্য একটি অস্ত্রোপচার। কেমোথেরাপির পর একটি প্যাথলজিকাল পরীক্ষায় দেখা যায়, লিভারের ডান লোবে কোনো জীবন্ত টিউমার কোষ নেই। বর্তমানে ওই রোগীর লিভারের কার্যকারিতা ও সামগ্রিক অবস্থা বেশ ভালো।

 

||প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

||সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

প্রিয় শ্রোতা, এই ছিলো আমাদের এবারের বিজ্ঞানবিশ্ব। অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের, তা আমাদের জানাতে পারেন। এতোক্ষণ বিজ্ঞানবিশ্বের পুরো আয়োজন জুড়ে ছিলাম আমি শুভ আনোয়ার। নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

 

 

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার

 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- শিয়াবুর রহমান

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী