দেহঘড়ি পর্ব-০৪২
2023-10-29 18:25:55


‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং টিসিএম ভেষজের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা ‘ভেষজের গুণ’।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন চিকিৎসা টিসিএম

আপনার কি কখনো অস্থিসন্ধি, বিশেষ করে আঙুলের গিঁটে ও হাঁটুতে ফোলাভাব, শক্ত হয়ে যাওয়া ও ব্যথা অনুভব করেছেন। সে ব্যথা কি হঠাৎ আসে আবার কিছুক্ষণ পর আবার চলে যায়? সঙ্গে কি জ্বর ও ক্লান্তির অনুভূতি থাকে? এমন লক্ষণ থাকলে আপনি সম্ভবত রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। এটা এমন এক ধরনের বাত, যা প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং গুরুতর শারীরিক অক্ষমতার দিকে নিয়ে যায়। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন চিকিৎসা খুঁজলে আপনার জন্য উত্তম দাওয়াই ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা (টিসিএম)।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ


আঙ্গুলের গিঁট, হাঁটু ও অন্যান্য গিঁটে ব্যথা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ কারো কারো মধ্যে অনেক বছর ধরে ধীরে ধীরে প্রকাশিত হতে পারে; আবার কারো কারো মধ্যে হঠাৎ দেখা দিতে পারে৷ এ রোগের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে: অস্থিসন্ধিতে, বিশেষ করে হাতের ও পায়ের গিঁটে ব্যথা; গিঁট ফুলে যাওয়া এবং সেখানে তাপ অনুভব করা; দিনের শুরুতে শারীরিক কাজ করতে কষ্ট হওয়া এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কমতে থাকা; সব সময় ক্লান্তি বোধ করা; বেদনাদায়ী গিঁটের কাছে ত্বকের নীচে শক্ত পিণ্ড হওয়া; চোখে ব্যথা ও চোখ শুষ্ক হওয়া এবং দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া; অল্প জ্বরভাব থাকা এবং হতাশার অনুভূতি জাগা।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ধীরে ধীরে চলাফেরায় ও দৈনন্দিন কাজকর্মে অসুবিধা বোধ করেন এবং সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলোর আকৃতি পরিবর্তিত হতে পারে।

চিকিৎসা

পশ্চিমা চিকিৎসা ব্যবস্থায় রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিত্সা এখনও পর্যন্ত প্রধানত ব্যথা উপশম, দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হ্রাস এবং এই প্রদাহজনিত রোগ নিয়ন্ত্রণ-কেন্দ্রিক। চূড়ান্ত নিরাময় নেই এ চিকিৎসায়। তবে টিসিএমে মনে করা হয়, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের নিরাময় আছে এবং সেটা সম্পূর্ণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন।

টিসিএম তত্ত্ব অনুসারে, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ‘বি’ শ্রেণির রোগের মধ্যে পড়ে৷ এতে মনে করা হয়, ঠান্ডা, বাতাস, তাপ ও ক্লেদের মতো পরিবেশগত কারণগুলো শরীরকে আক্রমণ করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন অঙ্গকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে অঙ্গ-ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়ে। এ আক্রমণের কারণে ঠান্ডা ও ক্লেদের মতো কারণগুলো শরীরের মধ্য দিয়ে রক্ত ও জীবনী শক্তি ‘ছি’র প্রবাহকে ধীর বা বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

গিঁটের প্রদাহ ও ব্যথা উপশম করার মাধ্যমে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস সারতে সাহায্য করে টিসিএম। এ চিকিৎসায় টিসিএম নীতির উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট আকুপয়েন্ট বাছাই করা হয় এবং আকুপাংচার ও মক্সিবাস্টনের মাধ্যমে সেগুলো উদ্দীপিত করা হয়। এর ফলে প্রতিবন্ধকতা সরে যায় এবং শরীরে রক্ত ও ‘ছি’র প্রবাহ নির্বিঘ্ন হয়। তবে মনে রাখতে হবে, আকুপাংচার ও মক্সিবাস্টন দীর্ঘমেয়াদী চিকিত্সা। ফলে ব্যথা তীব্র হলে প্রচলিত চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে।

 

#চিকিৎসার_খোঁজ

ছংছিয়ংয়ের প্রথম আন্তর্জাতিক হাসপাতাল রাফেলস

‘র‌্যাফেলস হাসপাতাল ছংছি’ হলো চীনের মধ্যাঞ্চলীয় ছংছিং শহরের প্রথম আন্তর্জাতিক জেনারেল হাসপাতাল। এ হাসপাতালে রয়েছে চিকিৎসাখাতের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, সরঞ্জাম ও সুবিধা, যা হাসপাতালটিকে একটি অত্যাধুনিক চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।

বিদেশি এবং ছংছিং ও আশেপাশের অঞ্চলের অধিবাসীদের উচ্চ মানের চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসেবা, নার্সিং ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সেবা দেয় ১ লাখ ১০ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে স্থাপিত এ হাসপাতালটি।

দেশি-বিদেশি বহু বিমা কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে র‌্যাফেলস হাসপাতাল ছংছিয়ের, যার ফলে বিমার আওতায় থাকা দেশি-বিদেশি রোগীরা এখান থেকে চিকিৎসা নিতে পারেন বিমার মাধ্যমে বিল পরিশোধ করে।

র‌্যাফেলস হাসপাতাল ছংছি প্রতিষ্ঠা করেছে সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান র‌্যাফেলস মেডিকেল গ্রুপ (আরএমজি)। ছংছিয়ের বাইরে এ প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শাখা-হাসপাতাল রয়েছে চীন, সিঙ্গাপুর, জাপান, ভিয়েতনাম ও ক্যাম্বোডিয়ার আরও ১২টি শহরে। র‌্যাফেলসের প্রতিটি হাসপাতালই একেবারের হোটেলের মতো ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণ করে, যার ফলে রোগীরা এখানে পান তারকা-খচিত হোটেলের মতো সেবা।

র‌্যাফেলস মেডিকেল স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় এবং রোগীদেরকে সহানুভূতির সঙ্গে সামগ্রিক ও মর্যাদাপূর্ণ চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-সেবা প্রদান করে। এ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মনে করে, তারা কেবল এটি চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নয়, স্বাস্থ্যের যে কোনও ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারও।

ছংছিং ছাড়া চীনের যেসব শহরের র‌্যাফেলস হাসপাতাল রয়েছে সেগুলো হলো বেইজিং, তালিয়ন, নানজিং, শাংহাই, শেনজেন, থিয়ানজিন ও হংকং। অন্য শাখাগুলো রয়েছে সিঙ্গাপুর, জাপানের ওসাকা এবং ভিয়েতনামের হোচিমিন সিটি ও ভুং থাউ এবং ক্যাম্বোডিয়ার নমফেনে। এর বাইরে র‌্যাফেলস সিঙ্গাপুরের ছাংগি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ারপোর্ট ক্লিনিক পরিচালনা করে।

সাধারণ অসুস্থতা নিরাময়ের পাশাপাশি র‌্যাফেলস মেডিকেলের অধীনে পরিচালিত ক্লিনিকগুলোর নেটওয়ার্ক জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ভ্রমণ স্বাস্থ্য পরিষেবা, টিকা ও কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদান করে।  

 

#ভেষজের গুণ

নানা গুণ অ্যালোভেরার

অ্যালোভেরার রয়েছে নানাবিধ স্বাস্থ্যগত উপকারিতা। বিভিন্ন স্বাস্থ্য-সমস্যা নিরাময়ে বহুকাল ধরে এ উদ্ভিদটি ব্যবহার করে আসছে মানুষ। অ্যালোভেরার বাংলা নাম ঘৃতকুমারী। এর পাতার মধ্যকার আঠালো পদার্থে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের নানা উপকার করে। চলুন জেনে নিই সেসব সম্পর্কে।

রক্তে শর্করা কমায়: বহু যুগ ধরে ডায়াবেটিসের প্রাকৃতিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে অ্যালোভেরার জুস। এই জুস নিয়মিত খেলে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।

ত্বক ভালো রাখে: অ্যালোভেরা ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে, যার ফলে সহজে ছোটখাটো কাটা-পোড়া, অ্যালার্জি, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি সারে। অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে মধু, দুধ, হলুদ বা সামান্য দুধের সর মিশিয়ে মুখে মাস্কের মতো লাগালে ব্রণ সারে এবং বলিরেখা দূর হয়। এছাড়া রোদে পোড়া ত্বকে অ্যালোভেরা, শসার রস আর দইয়ের মিশ্রণ লাগালে ত্বকের উপকার হয়।

ওজন কমায়: দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে অ্যালোভেরা। এর মধ্যে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। তাই নিয়মিত অ্যালোভেরা জুস খেলে সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং ওজন কমে।

চুল পড়া কমায়: অ্যালোভেরার জুসে প্রোটিয়োলাইটিক এনজাইম নামে এক ধরনের উৎসেচক থাকে, যা মাথায় ব্যবহার করলে তালুর ত্বকের কোষগুলোর স্বাস্থ্যরক্ষায় সাহায্য করে। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের দৈর্ঘ্য বাড়ে, খুশকি কমে এবং তালুর ইনফেকশন দূর হয়। এটি কন্ডিশনার হিসেবেও কাজ করে, যার ফলে চুল থাকে নরম ও মোলায়েম।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: অ্যালোভেরা পাতার নিচের দিকে হলুদ রঙের এক ধরনের আঠালো পদার্থ থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ হিসেবে ভীষণ কার্যকর।

 

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।