চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-৪০
2023-10-28 18:57:45


  

চীনের সংস্কৃতি-সপ্তাহ:

১. বেইজিংয়ে আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সপ্তাহ

চীনের রাজধানীতে হয়ে গেলো প্রথম বেইজিং আন্তর্জাতিক অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সপ্তাহ।

২২ অক্টোবর শুরু হওয়া এ সম্মেলন ও প্রদর্শনীতে চীনসহ বিশ্বের ৪০টি দেশের চারু ও কারুশিল্পীরা সমবেত হন এবং তাদের শৈল্পিক দক্ষতা প্রদর্শন করেন।

সাংস্কৃতিক বিনিময় ও প্রচারমূলক এ ইভেন্টে অসাধারণ সব চারু ও কারুশিল্প, ১৯টি দেশের নৃত্যদলের পরিবেশনা এবং বেইজিংসহ প্রতিবেশি অঞ্চলের ৩৩০টি অনন্য শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হয়।

বেইজিং সংস্কৃতি ও শিল্প উত্তরাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক চেন ফং বিস্তারিত জানালেন বেইজিং আন্তর্জাতিক অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক সপ্তাহ সম্পর্কে।

‘সব মিলিয়ে বেইজিংসহ চীনের ১৮টি প্রদেশ এবং এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা ও উত্তর আমেরিকার ৪০টি দেশের ৩ হাজারের বেশি কাজ প্রদর্শিত হয় এ আয়োজনে। অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক নিদর্শনের প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে আমরা চীনের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে এবং আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক বিনিময়কে এগিয়ে নিতে চেয়েছি’।

অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনিময়ের মাধ্যমে একটি সম্প্রীতিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠা- এই থিমে বিশ্ব জুড়ে হারিয়ে যেতে বসা সাংস্কৃতিক নিদর্শন সমূহ সংরক্ষণের বিষয়টিও ওঠে আসে আয়োজনে।

প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।

 

২. ছেংতুতে বিশ্বের বৃহত্তম সাই-ফাই কার্নিভাল

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছেংতুতে আয়োজিত ৮১তম ওয়ার্ল্ড সায়েন্স ফিকশন কনভেনশন শেষ হয়েছে সম্প্রতি। ১৮ অক্টোবর শুরু হয় পাঁচ দিনব্যাপী ইভেন্টটি।

‘মিট দ্য ফিউচার’ থিমে প্রথমবারের মতো বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী এই কল্পবিজ্ঞান কার্নিভাল আয়োজন করে চীন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সায়েন্স ফিকশন অনুরাগীরা এতে জড়ো হন।

ছেংতু বিজ্ঞান জাদুঘরের ৫ হাজার বর্গমিটার বিস্তৃত এলাকায় প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ইভেন্টে মর্যাদাপূর্ণ বার্ষিক হুকো পুরস্কার দেয়া হয়, যা সায়েন্স-ফাই এবং  ফ্যান্টাসি ফিকশন ক্ষেত্রে সেরা সাহিত্যিক কাজকে সম্মানিত করে।

৮১তম ওয়ার্ল্ড সায়েন্স ফিকশন কনভেনশনে এবারের সম্মেলনে সেরা উপন্যাসের জন্য হুকো পুরস্কার পান  চীনা সাই-ফাই লেখক হাই ইয়া। চীনা লেখক হাই ইয়া এর সেরা কাজ "দ্য স্পেস-টাইম পেইন্টার"। হাই ইয়া এই পুরস্কারের তৃতীয় চীনা বিজয়ী।  এর আগে এই হুকো পুরস্কার পান সাই-ফাই লেখক লিউ সিসিন এবং হাও চিংফাং।

১৯৫৩ সালে চালু করা হুকো পুরস্কারটিকে সাই-ফাই ঘরানার নোবেল পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এবারের আয়োজনে 'দ্য ওয়ান্ডারিং আর্থে'র লেখক হিসেবে পরিচিত ৭৩তম হুকো পুরস্কারপ্রাপ্ত বিখ্যাত চীনা লেখক লিউ সিসিন উপস্থিত ছিলেন। তাঁর এই অনবদ্য  রচনা পরবর্তীতে একটি ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র সিরিজে রূপান্তরিত হয়।

প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী।

 

২. চেচিয়াংয়ের উচেন টাউনে থিয়েটার উৎসব

মঞ্চে অভিনয় করছেন তরুণ শিল্পীরা। দর্শকরা তাদের জীবনেরই প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছেন শিল্পীদের অভিনয়ে। ১০ম উচেন থিয়েটার উৎসবে এভাবেই জীবনের গল্প তুলে ধরা হয় মঞ্চে। পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের থোংসিয়াং সিটির উচেন টাউনে চলছে এই উৎসব।

পুসুচিচাও থিয়েটার ট্রুপের পরিচালক সিয়াও হান বললেন তাদের থিয়েটারের বিশিষ্টতা সম্পর্কে:

‘আমরা দর্শকদের পরিচিত স্পর্শকাতর ও সর্বজনীন অনুভূতিগুলো নাটকে তুলে ধরতে চাই যেন দর্শকদের সঙ্গে আরও বেশি যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। আমি চাই না গল্পটা তাদের বিভ্রান্ত করুক। আমি মনে করি, আমাদের কাজ যেন সকলের কাছে আরও বেশি পৌঁছাতে পারে’।

এই উৎসবে প্রদর্শিত নাটকগুলো বেশিরভাগই জীবনমুখী। বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে লেখা। পুসুচিচাও নাট্যদলটি মাত্র এক মাস হলো যাত্রা শুরু করেছে। তাদের নাটক ‘দ্য সিগাল-অডিওস’ বাস্তব ও বর্তমান জীবনের কাহিনী তুলে ধরেছে। দলটি মূলত তরুণদের নিয়ে গঠিত।

এমনি আরেকটি নাট্য দল রুটিন পোয়েমস ইন্সটিটিউট। তাদের দলটি দুই বছর হলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

রুটিন পোয়েমস ইন্সটিটিউট থিয়েটার ট্রুপের পরিচালক সিয়াও চিং বললেন তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে:

‘আমার কাজ এবং আমার দলের সব সদস্যের কাজ বাস্তব জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। নাটকের চিত্রনাট্য, চরিত্র, অভিনয় সবই জীবনঘনিষ্ঠ। এ জন্য আমরা দলের নাম রেখেছি রুটিন পোয়েমস ইন্সটিটিউট। আমি দৈনন্দিন জীবনের কাব্যিক অংশ আবিষ্কার করতে চাই’।

 

এই থিয়েটার উৎসবের বেশিরভাগ অভিনয়শিল্পীই তরুণ প্রজন্মের। এজন্য হয়তো অভিজ্ঞতায় ঘাটতি আছে বলে মনে করেন সিয়াও চিং। কিন্তু  সেটাকে তারা পুষিয়ে দেন উৎসাহ, নতুন কিছু করার আগ্রহ দিয়ে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে তরুণরা বেশি দক্ষ। ফলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাটকে শৈল্পিক ইমেজ তৈরি করতে পারেন তারা। এই উৎসবে বিদেশি শিল্পীদের সঙ্গেও পরিচয় ঘটছে চীনা শিল্পীদের।

২০১৩ সালে প্রথম উচেন থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল শুরু হয়। প্রতিবছর অক্টোবর মাসে ওয়াটার টাউনে এই উৎসব হয়। এ বছর ১৯ থেকে ২৯ অক্টোবর উৎসবের সময়কাল। ১১টি দেশ ও অঞ্চলের ২৮টি থিয়েটার গ্রুপ এগারো দিনে ৮৭টি নাটক মঞ্চস্থ করেছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া।

 

 

৩. ‘বিশ্বব্যাপী শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ে বিআরআই

গত এক দশকে, এক অঞ্চল, এক পথ উদ্যোগ-বিআরআই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে শক্তিশালী অবকাঠামো নির্মাণ এবং সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি এটি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ঐক্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বেইজিং-ভিত্তিক সেন্টার ফর চায়না অ্যান্ড গ্লোবালাইজেশন-সিসিজি এবং সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ ফেলো জুন আহমেদ খান সম্প্রতি চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক-সিজিটিএনের একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময়ে ‘এক অঞ্চল, এক পথ উদ্যোগ’-বিআরআইয়ের তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, চীনের ব্যাপক উন্নয়ন, নিরাপত্তা এবং বিশ্ব সভ্যতার উদ্যোগের উন্মোচন সভ্যতার সহাবস্থানের জন্য একটি নতুন পথ তৈরি করেছে, যা বিশ্বকে মানবজাতির জন্য অভিন্ন ভবিষ্যতের সম্প্রদায়ের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।

জুন বলেন, কিছু পশ্চিমা দেশ যারা ভেবেছিল যে তারাই শ্রেষ্ঠ এবং তাদের কাছ থেকে অন্যদের তাদের থেকে শিখতে হবে এবং তাদের অনুসরণ করতে হবে। এমন মনোভাবকে ভুল হিসেবে অখ্যায়িত করে জুন বলেন, বিশ্বের আশি শতাংশ মানুষ এমনটি ভাবেন না।

সাংস্কৃতিক বিনিময় বিশ্বব্যাপী বিভাজনে সেতুবন্ধন এবং বিশ্বব্যাপী পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং স্বীকৃতি বৃদ্ধির জন্য একটি শক্তিশালী অনুঘটক হিসাবে কাজ করতে পারে। আর এক্ষেত্রে বিআরআইয়ের ভূমিকা আগামীতেও গুরুত্বপূর্ণ থাকবে বলে মনে করেন জুন আহমেদ খান।

প্রতিবেদন: মাহমুদ হাশিম।

---------------------------------------------------------------------------

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ।