থাং রাজবংশ ছিল চীনের সামন্ত সমাজের বিকাশের সর্বোচ্চ পর্যায়। সেই সময় চীনের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতি অভূতপূর্বভাবে সমৃদ্ধ, সার্বিক জাতীয় শক্তি অভূতপূর্বভাবে শক্তিশালী ছিল। চীনের সাথে তখন উত্তর-পূর্ব এশিয়া, মধ্য-এশিয়া, আরব, ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের ঘনিষ্ঠ আদান-প্রদানের সম্পর্ক ছিল। তখনকার চীন সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন দেশের মধ্যে উন্নয়ন ও শান্তির প্রচার করছিল। সমসাময়িক পণ্ডিতদের "থাং রাজবংশের ছয়টি গ্রন্থ"-এর রেকর্ড ও পরিসংখ্যান অনুসারে, থাং রাজবংশের বাইরের ৩০০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের সাথে আনুষ্ঠানিক আদান-প্রদান ছিল এবং এটি ছিল চীনের প্রাচীন কূটনীতি বিকাশের সবচেয়ে গৌরবময় সময়।
থাং রাজবংশ একটি সক্রিয় উন্মুক্ততার নীতি প্রচার করেছিল, যা চীনের প্রাচীন কূটনীতিকে একটি নতুন পর্যায়ে ঠেলে দেয়; চীনকে কেন্দ্র করে পূর্ব এশীয় কূটনৈতিক বৃত্তকে আরও প্রসারিত করে। থাং রাজবংশের কূটনীতি কেবল প্রাচীন চীনা কূটনীতির বিকাশের সর্বোচ্চ পর্যায় ছিল না, সেই সময়ে বিশ্বের একটি শীর্ষস্থানীয় অবস্থানেও ছিল। থাং রাজবংশকে কেন্দ্র করে পূর্ব এশীয় কূটনৈতিক বৃত্তটি সেই সময়ে ফ্রাঙ্ক, বাইজেন্টাইন এবং আরব সাম্রাজ্যকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা কূটনৈতিক বৃত্তের সাথে তুলনীয় ছিল। সাধারণভাবে বলতে গেলে, বিশালসংখ্যক দেশ ও অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ছিল, একাধিক ক্ষেত্রে ঘন বিনিময় ও গভীর প্রভাব ছিল।
থাং রাজবংশ ছিল একটি রাজবংশ যা "এক বিশ্ব, একটি পরিবার" ধারণা অনুশীলনের সফল সময় ছিল। আজকের চীনের জন্য সমৃদ্ধ কূটনৈতিক প্রজ্ঞা রেখে গিয়েছিল থাং রাজবংশ। আজ অবধি, অনেক বিদেশী মানুষ চীনা জনগণকে "থাং পিপল" হিসাবে উল্লেখ করেন এবং "থাং মানুষের রাস্তা-চায়নাটাউন" এবং "থাং সুট"-এর মতো টার্মও সুপরিচিত। অনেক ফিল্ম ও টেলিভিশন নাটকের থিমও হয়েছে "থাং রাজবংশে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা"। এতে বোঝা যায় যে, থাং রাজবংশ পরবর্তী প্রজন্মের ওপর কতোটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে।
দেশে ও বিদেশে থাং রাজবংশের আকাঙ্ক্ষা আসলে সাম্য, স্বাধীনতা, উন্মুক্ততা, সহনশীলতার ঐতিহাসিক পরিবেশ, "চীনা ও অন্যান্য জাতির মেলামেশা", সম্প্রীতি ও সহমর্মিতা, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য পরিবেশের আকাঙ্ক্ষা। বিশ্ব আজ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের একটি ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে রয়েছে। একটি জটিল ও সর্বদা পরিবর্তিত বিশ্ব মঞ্চে দাঁড়িয়ে, চীন সক্রিয়ভাবে প্রথাগত জ্ঞান থেকে আধুনিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য প্রতিষেধক খুঁজছে। দেশে ও বিদেশে সামগ্রিক পরিস্থিতির দীর্ঘমেয়াদী বিশ্লেষণ করলে, অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন একটি ঐতিহাসিক প্রবণতা, এবং দেশগুলোর মধ্যে শ্রম-বিভাজন এবং সহযোগিতা, পারস্পরিক উপকারিতা ও জয়-জয় নীতি হল দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা। অতএব, আজ, চীন বহির্বিশ্বে তার দরজা বন্ধ করবে না, তবে ঐতিহাসিক উন্নয়নের নিয়ম অনুসরণ করবে, সংস্কারকে গভীর করবে, উন্মুক্তকরণকে প্রসারিত করবে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্মুক্ততা ও সহযোগিতা জোরদার করবে এবং একটি উন্মুক্ত বিশ্ব অর্থনীতি নির্মাণে নিজের অবদান রাখবে।
চীনা সংস্কৃতিতে “দেশকে পরিবার হিসেবে দেখার” একটি দৃঢ় বোধ রয়েছে। এটি "দেশের উত্থান ও পতনের জন্য প্রত্যেকেই দায়ী" নীতি সমর্থন করে। এই সার্বজনীনভাবে সংযুক্ত ও বিকশিত বিশ্বদৃষ্টি প্রাচীনকাল থেকে বিদ্যমান এবং আজ পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। ২০১৫ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর, সি চিন পিং ৭০তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যৌথভাবে জয়-জয় সহযোগিতার জন্য নতুন অংশীদারিত্ব তৈরি করতে এবং মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার জন্য একটি বড় উদ্যোগের কথা বলেন। তিনি যৌক্তিক ও স্পষ্টভাবে মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ ব্যাখ্যা করেন। এ সমাজে থাকবে সমান আচরণ, পারস্পরিক পরামর্শ ও আলোচনার অংশীদারিত্ব, ন্যায্যতার ভিত্তিতে একসাথে নির্মাণ ও একসাথে উপভোগ করার নিরাপদ ব্যবস্থা, উন্মুক্ত উদ্ভাবন, অন্তর্ভুক্তি ও উপকারিতার বিকাশের সম্ভাবনা, সম্প্রীতিময় অথচ কিন্তু বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সভ্যতার বিনিময়, প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং সবুজ উন্নয়নের একটি পরিবেশগত ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এটি বিশ্বব্যাপী দেশগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংযোগ এবং পরস্পর নির্ভরতার বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার একটি বৈশিষ্ট্য। এটি ঐতিহাসিক তাত্ত্বিক "উদীয়মান দেশ ও প্রতিষ্ঠিত দেশের সাথে সংঘাত"-এর ধারণার ব্যতিক্রম। এটি "শূন্য-সমষ্টির খেলা" এবং "ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা মানে আধিপত্য"-এর মতো বাইনারিবিরোধী চিন্তাভাবনা। এতে "এক বিশ্ব, একটি পরিবার" এবং "সর্বজনীন বিশ্ব"-এর সহাবস্থানের চিন্তাধারা প্রতিফলিত হয়।
মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তুলতে গেলে, আমাদের অবশ্যই বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে হবে এবং সার্বজনীন নিরাপত্তাকে উন্নত করতে হবে; আমাদের অবশ্যই পারস্পরিক উপকারিতা ও জয়-জয় সম্পর্ক মেনে চলতে হবে, অভিন্ন উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হবে, অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে এবং বহুপাক্ষিকতাকে সমর্থন করতে হবে; আমাদের অবশ্যই সবুজ ও নিম্ন-কার্বন নীতি মেনে চলতে হবে এবং টেকসই উন্নয়ন প্রচার করতে হবে। এটি একটি নিরাপত্তা কমিউনিটি থেকে স্বার্থের কমিউনিটি, তারপর মূল্যবোধের কমিউনিটি এবং এমনকি, অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ার দুর্দান্ত বাস্তবায়ন-পথ। মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ একটি মিথ্যা বা বিমূর্ত অস্তিত্ব নয়, বরং তা প্রতিটি দেশ ও প্রতিটি জাতির সাথে জড়িত। প্রত্যেকেই এর মধ্যে একটি অণু, এবং প্রতিটি দেশ এটির একেকটি কোষ। বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যার মুখে, মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আজকের বিশ্বে, দেশগুলোর উন্নয়নকে একে অপর থেকে আলাদা করা যায় না। শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথ অনুসরণ করা, জয়-জয় সহযোগিতার পথে চলা, এবং একটি উন্মুক্ত বিশ্ব অর্থনীতি গড়ে তোলা আজকের পৃথিবীতে সাধারণ প্রবণতা। অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে একটি উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, সর্বজনীন, ভারসাম্যপূর্ণ এবং জয়-জয় উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের সহযোগিতা করা উচিত।
মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ হল শান্তি ও উন্নয়নের আদর্শ লক্ষ্য এবং শান্তি ও উন্নয়ন অর্জনের একটি বাস্তব উপায়। মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজের গন্তব্য হল সবাই পরস্পরকে ভালোবাসার একটি "মহান সম্প্রীতি"-র সমাজ বাস্তবায়ন করা। এটি সারা বিশ্বের মানুষের দীর্ঘ যাত্রা ও উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে খুঁজে পাওয়া গন্তব্য। (ইয়াং/আলিম/ছাই)