অক্টোবর ২৭: থাং হুং বো, থাং শেং চিয়ে এবং চিয়াং সিন লিন - এই তিন জন মহাকাশচারীকে বহনকারী চীনের শেনচৌ-১৭ মানববাহী নভোযান গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে জিউ ছুয়ান উপগ্রহ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে সফলভাবে মহাকাশে উৎক্ষেপিত হয়। মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছানোর পর এই তিন মহাকাশচারী কী কী ধরনের মহাকাশ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালাবেন? মহাকাশে গবেষণা ও পরীক্ষা চালানোর কী কী সুবিধা আছে? এসব গবেষণা মানবজাতির ভবিষ্যৎ জীবনে কেমন প্রভাব ফেলবে?
শেনচৌ-১৭ মানববাহী নভোযান নির্ধারিত কক্ষপথে প্রবেশের পর বেইজিং সময় বিকাল ৫টা ৪৬ মিনিটে সফলভাবে মহাকাশ স্টেশনের থিয়ান হ্য কোর মডিউলের সামনের দিক থেকে সংযুক্ত হয়। সংযুক্ত হতে সাড়ে ৬ ঘন্টা সময় লাগে। এরপর নভোচারী থাং হুং বো, থাং শেং চিয়ে এবং চিয়াং সিন লিন থিয়ান হ্য কোর মডিউলে প্রবেশ করেন। এর মধ্য দিয়ে চীনের মহাকাশ স্টেশন সবচেয়ে তরুণ ক্রুদের অভ্যর্থনা জানিয়েছে।
শেনচৌ-১৭ মানববাহী মহাকাশযানটি স্পেস স্টেশনের থিয়ানহ্য কোর মডিউলের ফরোয়ার্ড পোর্টে সফলভাবে ডক করে। চীনা মহাকাশ স্টেশনটি থিয়ান হ্য কোর মডিউল, ওয়েন থিয়ান পরীক্ষা মডিউল এবং শেনচৌ মহাকাশযানসহ ‘তিনটি কেবিন এবং তিনটি উড়জাহাজ’-এর কাঠামো তৈরি করেছে।
বেইজিং অ্যারোস্পেস কন্ট্রোল সেন্টারের কর্মী লি সিয়াও মিং জানান, এবারের ক্রু ঘূর্ণন কাজগুলো মূলত অতীতের মতোই। কর্মীরা সাবধানে দুটি লক্ষ্য নিয়ন্ত্রণ, কক্ষপথ সমন্বয়, অবস্থা নিয়ন্ত্রণ এবং সর্বোচ্চ মানদণ্ডে মহাকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা নিশ্চিত করার উপর গুরুতারোপ করবেন।
লি সিয়াও মিং বলেন, স্থলকেন্দ্রের কাছে আমাদের মানববাহী মহাকাশযান এবং থিয়ান হ্য কোর মডিউলের ফরোয়ার্ড, রেডিয়াল এবং ব্যাকওয়ার্ড ডকিং নিযন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে। কারণ ডকিংয়ের অবস্থা ভিন্ন, ফরোয়ার্ডে ডকিং করতে মহাকাশ এবং স্থলকেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগের দক্ষতা বেশি, নিয়ন্ত্রণের পরিবেশও আরও ভালো।
মানববাহী মহাকাশযান এবং মহাকাশ স্টেশনের কমপ্লেক্স সফলভাবে দ্রুত ডকিং করার পর শেনচৌ-১৭ মহাকাশচারীরা মহাকাশযানের রিটার্ন মডিউল থেকে অরবিটাল মডিউলে প্রবেশ করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৪ মিনিটে শেনচৌ-১৬ মহাকাশচারী ক্রু সুষ্ঠুভাবে ‘বাড়ির দরজা’ খুলে দূরের পৃথিবী থেকে আসা শেনচৌ-১৭ মহাকাশচারী ক্রু সদস্যদের ‘থিয়ান কুং’ মহাকাশ স্টেশনে স্বাগত জানান। এরপর দু’টি মহাকাশচারী ক্রু একসাথে একটি ‘পরিবারিক গ্রুপ ছবি’ তোলেন এবং যৌথভাবে দেশের সকল জনগণকে নিরাপত্তার সুখবর জানান।
এরপর দু’টি মহাকাশচারী ক্রু মহাকাশ স্টেশনে অন-অরবিট ঘূর্ণন সঞ্চালন করবে। এই সময়ের মধ্যে ছয় মহাকাশচারী বিভিন্ন নির্ধারিত কাজগুলো সম্পন্ন করতে প্রায় ৪ দিন মহাকাশ স্টেশনে একসাথে কাজ করবেন।
অন-অরবিট সময়ে, শেনচৌ-১৭ মহাকাশচারী ক্রু থিয়ান চৌ-৭ মালবাহী মহাকাশযান, শেনচৌ-১৮ মানববাহী মহাকাশযানকে স্বাগত জানাবে। তাঁরা আগামী বছরের এপ্রিল মাসে পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। এ ছাড়া শেনচৌ-১৭ মহাকাশচারীরা বেশ কয়েক বার স্পেস ওয়াক করবেন বা মহাকাশে হাঁটবেন এবং মৌলিক মাইক্রোগ্র্যাভিটি পদার্থবিদ্যা, মহাকাশ উপাদানবিজ্ঞান, মহাকাশ জীববিজ্ঞান, মহাকাশ চিকিৎসা, মহাকাশ প্রযুক্তি এবং অন্যান্য ক্ষেত্র সংশ্লিষ্ট বিপুল সংখ্যক পরীক্ষা পরিচালনা করবেন।
এছাড়া শেনচৌ-১৭ মানববাহী মহাকাশযান প্রধানত ‘স্পেস প্রোটিন আণবিক সমাবেশ এবং অ্যাপ্লিকেশন গবেষণা’ প্রকল্পের পরীক্ষামূলক ইউনিট চালু করবে। মানবজীবন ও স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রোটিন, পেপটাইড, নিউক্লিক অ্যাসিড, জৈবিক উপাদান এবং ওষুধ সামগ্রীসহ ৫টি বিষয়ে ২৯ ধরনের পরীক্ষামূলক নমুনার ব্যবস্থা করা হবে।