শেয়ার বাজারের মতো ব্যস্ত ফুল বাজার
2023-10-27 10:17:46


চীনের ইয়ুন নান প্রদেশের খুন মিং শহরের তৌ নান ফুল বাজার হলো এশিয়ার বৃহত্তম ফুল বাজার। স্থানীয়রা এ বাজারকে রঙিন বাজার হিসেবে গণ্য করেন। তাজা ফুল কেজি হিসাবে বিক্রি হয় এখানে। এ কথা বড় করে বলা হয়নি। গত ১০ বছরে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআই’র কারণে তৌ নান বাজারের ফুল বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হয়েছে।

আপনি যদি প্রথমবারের মত তৌ নান বাজারে আসেন, তাহলে সময় ব্যবস্থাপনা করতে হবে। সারারাত ব্যস্ত থাকার পরে পুরো নগরীতে সকাল হলো ঘুমানোর সময়। নতুন দিন দুপুর থেকে হিসাব করা হয়।

তৌ নান অঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসা শুরুর পর কলম্বিয়ার ফুল ব্যবসায়ী সিমেনের দেহঘড়ি পরিবর্তিত হয়েছে। এদিন একটি জরুরি অর্ডার পাওয়ার পরপরই সিমেনকে তৌনান বাজারে যেতে হবে।

আপনি এ বাজারে প্রবেশ করলে মনে হতে পারে যে, আপনি ভুল করে শেয়ার বাজারে প্রবেশ করছেন। আসলে এটি খুন মিং শহরের আন্তর্জাতিক ফুল নিলাম ও বাণিজ্য কেন্দ্র। প্রতিদিন দুপুর একটায় ৯শ জনেরও বেশি ‘ফুল দালাল’ বলিষ্ঠতার সঙ্গে ফুল লেনদেনের ব্যবস্থা করেন। এ বাজারে নেদারল্যান্ডের নিলাম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রতি ৪ সেকেন্ডে একটি লেনদেন করা যায়। মাত্র শূন্য দশমিক ৬ সেকেন্ডের ব্যবধানে লেনদেনের সুযোগ চলে যেতে পারে।

এশিয়ার সবচেয়ে পেশাগত ফুল নিলাম কেন্দ্র হিসেবে প্রতিদিন ৩ হাজারের বেশি প্রজাতির ফুল এখান থেকে ৪০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে পাঠানো হয়।

নিজের পছন্দের ফুল পেতে চাইলে শুধু হাতের গতি নয়, লাগবে অংশীদারও।

ফুলের শ্রেণীবিন্যাস গুণগতমানের নিশ্চয়তা। প্রতিদিন চাষ কেন্দ্র থেকে এ কেন্দ্রে আসা ফুল দৈর্ঘ্য, ফোটার মাত্রা এবং ফুলের আকার অনুযায়ী শ্রেণীবিন্যাস করা হয়।

গ্রীষ্মকাল ফুলের পিক সিজন নয়। কেবল বাজার বন্ধ হওয়ার আগেই ফুলের বাকি পরিমাণ জানতে পেরে মহাব্যবস্থাপক ছি ধারণা করতে পারেন আগামীকালের ফুল বাজার কেমন হবে।

আমাদের সাংবাদিককে তিনি জানান, তার বার্ষিক ব্যবসার পরিমাণ বেশি নয়, মোটামুটি ১০ কোটি ইউয়ানের মতো।

তৌ নান ফুল বাজারে ফুটবল মাঠের মতো আকারের ফুল বাজার পুরো এশিয়ার ফুলের দামকে প্রভাবিত করে। এ বাজারের খ্যাতির কারণে আসা লোকদের মধ্যে কেবল তৌ নানকে ভালো জানার মানুষ নয়, আছেন ব্যবসার সুযোগ উপলব্ধিকারী অতিথিরাও।

সিমেন তাদের মধ্যে একজন। তিনি বলেন, “আমার বাড়ি কলম্বিয়া। আমার বাড়িতে আমরা ফুল চাষ করে রপ্তানি করতাম দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ থেকে এশিয়া মহাদেশ পর্যন্ত, বিশেষ করে চীনে রপ্তানি করি আমরা। তাই আমি খু মিং শহরে এসে দেখার কথা ভাবি। এখন আমি এ বিশাল বাজার দেখতে পেয়েছি। এখানে আমি চীনের ফুল বিদেশে রপ্তানি করার একটি সুযোগ দেখতে পাচ্ছি।

লুও ইয়ু ছিন ফুল বাজারে দ্বিতীয় প্রজন্ম। তার বাবা-মা গত নব্বইয়ের দশকে তৌ নান বাজারে প্রথম দলীয় ফুল আমদানিকারকদের মধ্যে একজন। লুও ইয়ু ছিন ৮ বছর ধরে ব্রিটেনে লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে আসেন তার পরিবারের ব্যবসার হাল ধরতে। তিনি সেসব ফুলের দিকে তাকিয়ে আমাদের সাংবাদিককে বলেন,  বাকি এ সব ফুল ব্যাংককে রপ্তানি করা হবে।

তৌ নান ফুল বাজারে রাতে প্রতি মিনিট-সেকেন্ডে ব্যস্ত থাকেন সবাই। মনে হয়, এ রাত শেষ হয় না। আগামীকালের গৌরব রাতে ঘুমাতে না যাওয়া লোকদের জন্য প্রস্তুত।

ভোর ৫টায় মাত্র ঘুমিয়ে পড়া মহাব্যবস্থাপক ছি ঘুম থেকে উঠেছেন।  তিনি বলেন, “সকালে এ ফুল বাজারে যে ফুল বেচাকেনা হচ্ছে, সে সব ফুল চাষীদের নিজেদের চাষ করা ফুল। সকালে এখানে যারা ফুল কিনতে আসেন, তারা সবাই এ খাতের জ্ঞানী মানুষ।

 ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’র যৌথ নির্মাণের কারণে তৌ নান বাজারে বর্তমানে আগে থেকে লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটেছে। বিআরআই তৌ নান ফুল বাজারের জন্য উন্নয়নের চালিকাশক্তি স্থাপন করেছে।

গত দশ বছরে থিয়ান হ্রদের পূর্ব তীরে ছোট্ট গ্রাম থেকে বর্তমান এশিয়ার বৃহত্তম ফুল বাজারে পরিণত হয়েছে তৌ নান। তৌ নানে সময় কখনও থেমে যাবে না। প্রতিদিন এখান থেকে পাঠানো ফুল এখানকার গল্প দূরদূরান্তে মানুষেদের কাছে নিয়ে যাচ্ছে।

(রুবি/রহমান)