‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগে চীন এবং বাংলাদেশের মৈত্রীর প্রমাণ
2023-10-27 14:09:07

প্রিয় বন্ধুরা, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ আপনাদের কাছে নিশ্চয় অনেক পরিচিত এক টার্ম। সম্প্রতি আমি বাংলাদেশে গিয়েছিলাম এবং স্বচক্ষে দেখেছি এই উদ্যোগের অধীনে চীন ও বাংলাদেশের মৈত্রীর অনেক প্রমাণ। রেলপথ, সেতু, পানি বিশুদ্ধকরণ কারখানা, বিদ্যুত্ প্রকল্প ইত্যাদি অনেক কিছু। চীন বাংলাদেশের ভালো বন্ধু এবং ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ। এটা শুধু মুখের কথা নয়, বরং চীন সত্যিই নিজের ভাইয়ের মতো আচরণ করে বাংলাদেশের উন্নয়নে সাহায্য করছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহন করা পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের (পিবিআরএলপি) প্রথম ট্রেন ১০ অক্টোবর দুপুরে রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে একটি নতুন স্টেশন থেকে রওনা হয়, যা দেশের বৃহত্তম রেলওয়ের প্রথম সেকশন।

বাংলাদেশে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর অধীনে একটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প এটি, চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি) দ্বারা নির্মিত এবং এতে চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অর্থায়ন করেছে।

 

ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার এই রেলপথের প্রথম অংশ। মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া স্টেশনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সাক্ষী হন মুন্সীগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী জেলার হাজার হাজার মানুষ।

 

ট্রেন চলার আগে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, "ট্রেনে করে পদ্মা নদী পার হওয়ার স্বপ্ন পূরণের দিন। আমাদের লক্ষ্য রয়েছে বাংলাদেশের রেলওয়েকে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত করার এবং আমরা কাজ করছি।

হাসিনা রেল সংযোগ উদ্বোধনের জন্য একটি ফলক উন্মোচন করার সাথে সাথে উচ্চস্বরে উল্লাস ও করতালি শোনা যায়। উদ্বোধনে যোগদানের পর হাসিনা ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌঁছানোর জন্য টিকিট কিনে স্পেশাল ট্রেনে চড়েন।

এটির নির্মাণকাজে দশ হাজারেরও বেশি স্থানীয় লোককে নিয়োগ করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের জন্য ২০ হাজারেরও বেশি রেলওয়ে নির্মাণ শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

 

"এই প্রকল্পের জন্য ধন্যবাদ, আমি এখন আমার শহরে কাজ করতে পারি এবং একজন বাংলাদেশি হিসাবে, আমি সত্যিই গর্বিত যে আমি এত বড় প্রকল্পের সাথে যুক্ত হতে পেরেছি," বলছিলেন একজন স্থানীয় কর্মী।

 

"আমি গত পাঁচ বছর ধরে এখানে কাজ করছি। প্রকল্পের শুরু থেকে, আমি আমাদের চীনা দলের সাথে কাজ করছি। আমি চীনা, চীনা সংস্কৃতি, চীনা কাজের পদ্ধতি এবং চীনের থেকে অনেক কিছু শিখছি।” বলছিলেন আরেক বাংলাদেশি কর্মী।

 

সমগ্র ১৭২ কিলোমিটার প্রকল্প, যা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোরে গিয়ে শেষ হবে। ২০২৪ সালে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

 

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল হিসেবে কাজ করবে, যা ঢাকা এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২০টিরও বেশি জেলাকে সংযুক্ত করবে এবং বাংলাদেশের আঞ্চলিক সংযোগ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে।

 

সেই সঙ্গে বাংলাদেশে সম্প্রতি একটি ২২-টারবাইন বায়ু খামার প্রকল্পের উদ্বোধনের মাধ্যমে গ্লোবাল উইন্ড পাওয়ার ক্লাবে যোগ দিয়েছে। এই প্রকল্পটিও চীনের বিনিয়োগে সম্ভব হয়েছে।

 

১২ অক্টোবর  বিকেলে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এবং চীনের রাজধানী বেইজিং- উভয় শহরে কক্সবাজার উইন্ড ফার্মের জন্য একটি অনলাইন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রীয় গ্রিডের সাথে বায়ুকল খামারের সংযোগের পর দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে প্রথম কেন্দ্রীভূত বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল।

৬৬  মেগাওয়াটের ইনস্টল ক্ষমতা সহ এই প্রকল্পটি প্রতি বছর ১৪ মিলিয়ন কিলোওয়াট-এর বেশি নিরাপদ ও সবুজ বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।

 

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে নির্মাণ শুরু হওয়া প্রকল্পটি দেশের বার্ষিক কয়লার খরচ ৪৪.৬ হাজার টনের বেশি কমিয়ে দেবে। পাশাপাশি, কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন প্রায় ১.১ লাখ টন কমাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

নতুন কারখানা ঢাকা থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় এলাকা কক্সবাজারে অবস্থিত। এটি চীনের স্টেট পাওয়ার ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন (SPIC) এর সহযোগী সংস্থা উলিং পাওয়ার কোর্পোরেশনের অর্থায়নে পাওয়ার চায়না ছেংতু ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন দ্বারা তৈরি হয়েছিল।

 

"যখন সম্পূর্ণ কার্যক্রম শুরু হবে, তখন প্রকল্পটি ১ লাখ পরিবারের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাবে। আমরা অনেক নতুন জ্বালানি প্রকল্প নির্মাণের জন্য প্রচার চালিয়ে যাব, যেমন কক্সবাজার বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায় এবং মংলা বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প।

উলিং পাওয়ার কর্পোরেশনের প্রধান ম্যানেজার সিয়া গাং এ কথা বলছিলেন।

 

কক্সবাজার থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে চট্টগ্রাম শহরের মংলা প্রকল্পটি আগামী বছর থেকে কাজ শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।