চলতি বাণিজ্যের ৪১তম পর্ব
2023-10-27 20:21:48

চলতি বাণিজ্যের ৪১তম পর্বে থাকছে:

১. চীনা ইলেক্ট্রিক গাড়ি প্রতিযোগিতায় ফেলেছে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলোকে

২. কিরিগজ নাগরিকদের চলাচল সহজ করেছে চীনা বাস

৩. বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম হয়েছে চীনের ক্যান্টন মেলা

 

চীনা ইলেক্ট্রিক গাড়ি প্রতিযোগিতায় ফেলেছে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলোকে

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চীনের তৈরি করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ির সঙ্গে বাজারে টিকে থাকতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে নতুন প্রযুক্তির ইলেক্ট্রিক গাড়িগুলো বিভিন্ন দেশের ক্রেতাদের নজর কেড়েছে। চলতি বছরের মিউনিখ অটো শোতে চীনা গাড়ির নানা বৈশিষ্ট্য মুগ্ধ করে আগতদের। তবে চীনা উদ্ভাবন কপালে চিন্তার ভাজ ফেলেছে পশ্চিমা গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তাদের।

সারা বিশ্বেই গাড়ি নির্মাণ শিল্পে এক বিপ্লব ঘটে গেছে। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার গাড়ি শিল্পে এনে দিয়েছে এক নতুন ধারার। আর এ ধারায় নেতৃত্বের আসনে বসেছে চীন।

চীনের গাড়ি নির্মাণ শিল্পের এই উদ্ভাবন ও এগিয়ে চলাই কঠিন পরীক্ষা ও প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে ইউরোপকে। বিশেষ করে জার্মানির গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এরইমধ্যে কঠিন সময় পার করতে শুরু করেছে। চলতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া মিউনিখ অটো শো যেন তারই প্রমাণ।

এই অটো শো তে নজরকাড়া সব উদ্ভাবনের সমাহারে তৈরি গাড়ি প্রদর্শন করে চীন। চীনের তুলনায় খুবই কম সংখ্যক নতুন মডেল ও সুযোগ-সুবিধার সমাহার দেখাতে পেরেছে জার্মানির নির্মাতারা। এর ফলে আগামীতে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাচ্ছেন তারা।

জার্মানির অ্যাসোসিয়েশন অব অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রি’র প্রেসিডেন্ট হাইডেলগার্ড মুলার জানান, মিউনিখের অটোশোতে আসলে দেখা যায় ইলেক্ট্রিক গাড়ি নির্মাণ শিল্পে জার্মানি কতোটা পিছিয়ে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, গাড়ি শিল্পের দ্রুত পরিবর্তন জার্মান নির্মাতাদের অনেকটা চাপে ফেলেছে।

হাইডেলগার্ড মুলার, প্রেসিডেন্ট, জার্মান অ্যাসোসিয়েশন অব অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রি

“আমাদের প্রয়োজনীয় জ্বালানী কোথা থেকে আসবে এটা নিয়ে আলাপ করাটা জার্মানিতে খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। আলোচনা করতে হবে শিল্পের কাঁচামাল আসবে কোত্থেকে। গাড়ি তৈরির শিল্প একটি বৈশ্বিক শিল্প আর এ কারণেই আমাদের নানা রকম চুক্তি প্রয়োজন, অন্যান্য পদক্ষেপও নিতে হবে।“

গাড়ির উচ্চ মূল্য, কম গতি ও চার্জিং স্টেশনের স্বল্পতার কারণে ইউরোপে ইলেক্ট্রিক গাড়ির বাজার সম্প্রসারণে প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। (জার্মান সেন্টার ফর অটোমোটিভ রিসার্চের পরিচালক ফার্ডিনান্ড ডুবেনহফার জানান, জার্মানির গাড়ি তৈরি কোম্পানিগুলোর ভেতরের দ্বন্দ্ব ও নানা অভ্যন্তরীণ সমস্যাও ইউরোপের এ শিল্পে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ।

ফার্ডিনান্ড ডুবেনহফার, পরিচালক, জার্মান সেন্টার ফর অটোমেটিভ রিসার্চ –সিএআর

“আমার মনে হয় জার্মান গাড়ি নির্মাণ শিল্পের রূপান্তর দরকার। অর্থাৎ প্রচলিত ইঞ্জিন বদলে এখন নতুন ধরনের জ্বালানী চালিত ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন তৈরির দিকে এগোতে হবে। আপনি যদি প্রকৌশল বিভাগের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন প্রায় ৯০ শতাংশ প্রোকৌশলীই প্রচলিত শিল্পখাতের এবং বাকি ১০ শতাংশ অন্যান্য বিভাগের বিশেষ করে ব্যাটারি প্রযুক্তি ও ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন বিষয়ক।“

চীনা গাড়ি শিল্পের আধুনিকায়ন ও উদ্ভাবনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে দেখলেও তা নিজেদের সংস্কারের উপলক্ষ হিসেবে নিতে চান নীতিনির্ধারকরা। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজও চীনের উদ্ভাবনকে অনুসরণ করে জার্মানির গাড়ি নির্মাণ শিল্পের উন্নয়ন ও সংস্কারে ১১০ বিলিয়ন ইউরোর একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। বিশেষ করে গাড়ি নির্মাণ শিল্পের অবকাঠামো উন্নয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার বাড়ানো এবং ব্যাটারির উন্নয়নে এই অর্থ ব্যয় করার কথা রয়েছে।

গাড়ি তৈরি শিল্পে চীনের নানা অগ্রগতিতে টনক নড়েছে ইউরোপের উদ্যোক্তাদেরও। চীনের এই এগিয়ে যাওয়ার উদাহরণ থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। তারা বলছেন, জার্মানির মতো দেশের গাড়ি তৈরি শিল্পের রূপান্তর ঘটাতে হলে সহযোগিতা দরকার চীনের। একইসঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে চীনা বাজারে কাজ শুরু করার কথাও ভাবছেন কেউ কেউ। এদেরই একজন ফক্সওয়াগন গ্রুপের প্রেসিডেন্ট অলিভার ব্লুম।

অলিভার ব্লুম, প্রেসিডেন্ট, ফক্সওয়াগন গ্রুপ

“চীন খুবই শক্তিশালী, খুবই বড় বাজার। আমরা চীনকে বিশ্বাস করি এবং চীনের সঙ্গে কাজ করতে চাই।“

যুক্তরাজ্যের ডেইলি মিরর বলছে, কয়েকটি নতুন মডেলের গাড়ি বাজারে আনলেও জার্মানির গাড়ি নির্মাণ শিল্প প্রতিযোগিতায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে। মার্সিডিজ বেঞ্জ চেয়ারম্যান ওলা কালেনিয়াস জানান, চীনাদের উদ্ভাবনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে চানা তারাও।

ওলা কালেনিয়াস, চেয়ার‌ম্যান, মার্সিডিজ বেঞ্জ

“চীনের বাজারের যে উদ্ভাবন ও গতি তা বেশি শক্তিশালী। আমরা সেই সুবিধাটা নিতে চাই। এটা কেবল আমাদের চীনা ক্রেতাদের জন্য নিতে চাই তা নয় বরং বিশেষ করে এই ডিজিটাল দুনিয়ায় চীনের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে আমরা পুরো বিশ্বের জন্যই কাজে লাগাতে চাই।“

নিউ ইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, মিউনিখ অটো শো’র পুরো নজর ছিলো চীনা নির্মাতাদের তৈরি করা গাড়ির দিকে। এটি জার্মানির অর্থনীতিকেও চাপে ফেলেছে বলেও মূল্যায়ন করে সংস্থাটি। বিএমডাব্লিউ এর চেয়ারম্যান অলিভার জিপস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, চীনা গাড়ির বাজার ধরতে নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করার এটাই সময়।

অলিভার জিপস, চেয়ারম্যান, বিএমডাব্লিউ

“সারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাড়ির বাজার চীনে। একইসঙ্গে এই শিল্প এরইমধ্যে বেশ উন্নত হয়েছে। এটা কিন্তু কোন চমকই নয়। আমাদের এটাকে কাজে লাগাতে হবে এবং তাদের সঙ্গে একটি সমান প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমাদের ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে হবে।“

জার্মানির অর্থনীতির একটি বড় নিয়ামক সেদেশের গাড়ি নির্মাণ শিল্প।

 

ভিনদেশে চীন:

কিরিগজ নাগরিকদের চলাচল সহজ করেছে চীনা বাস

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: কিরিগজ নাগরিকদের দৈনন্দিন চলাচলকে সহজ করেছে চীনের তৈরি বাস। শুধু তাই নয়, পরিবেশবান্ধব এই বাস কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকের বিভিন্ন রাস্তায় চলছে এই বাস। সম্প্রতি চীনা নির্মাতারা কিরগিজ সরকারের কাছে এসব বাস হস্তান্তর করে।

কিরিগজ নাগরিকদের দৈনন্দিন চলাচলকে সহজ করেছে চীনের তৈরি বাস। শুধু তাই নয়, পরিবেশবান্ধব এই বাস কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকের বিভিন্ন রাস্তায় চলছে এই বাস। সম্প্রতি চীনা নির্মাতারা কিরগিজ সরকারের কাছে এসব বাস হস্তান্তর করে।

কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকের ব্যস্ত রাস্তায় নাগরিকদের স্বস্তি দিয়েছে চীন থেকে আনা বাস। সাদা ও সবুজ রঙের এই বাসগুলো পরিবেশবান্ধব ও আরামদায়ক।

চলতি বছর চীন ও কিরগিজস্তানের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক ও কৌশলগত সম্পর্ক আরও গভীর হয়। বিশেষ করে গণপরিবহনসহ নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করে দুই দেশ। এরই অংশ হিসেবে চীন থেকে এসব বাস নিয়ে আসে কিরগিজ সরকার।

এরইমধ্যে এসব বাস যাত্রী পরিবহন শুরু করেছে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছরগুলোতে চীন থেকে আরও নতুন বাস সংগ্রহ করবে কিরগিজস্তান।

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম হয়েছে চীনের ক্যান্টন মেলা

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনে বিনিয়োগের জন্য যাচাই-বাছাই ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে ক্যান্টন ফেয়ার। বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের সদস্য দেশগুলোর জন্য সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এই মেলা।

চীনের বিশাল বাজার দুনিয়ার তাবৎ ব্যবসায়ীক কোম্পানির কাছে আকর্ষষণীয়। বিশেষ করে চীনের বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগে আগ্রহী কোম্পানিগুলো। তাইতো চীনের কুয়াংচৌতে যে ক্যান্টন মেলা বসে তা আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে এসব বিনিয়োগকারীরা।

বরাবরের মতো চলতি বছরও শুরু হয়েছে ১৩৪তম ক্যান্টন মেলা। দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের কুয়াংচৌ শহরে বসে এই মেলা।

এবারের মেলায় অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বিশেষভাবে অংশ নিয়েছে চীনের প্রস্তাব করা বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের সদস্য দেশগুলো। এসব দেশের বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলো এই মেলাকে নিয়েছে চীনে বিনিয়োগের সেতুবন্ধন হিসেবে। 

ক্যান্টন মেলা বা আমদানি রফতানি মেলা হিসেবে পরিচিত এই মেলার তাই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে চীনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে বিনিয়োগের সুযোগ বুঝে নেওয়া।

বিশেষ করে গৃহস্থালী পণ্য, উপহার সামগ্রী, ঘর সাজানোর পণ্য, বাড়ি নির্মাণ সামগ্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের ফার্নিচারের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে ক্যান্টন মেলা। 

এবারের ক্যান্টন মেলা অনুষ্ঠিত হয় সোয়া ৫ লাখ বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে।