‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ৪১
2023-10-26 18:43:32

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।        

১. ছেংতু সাই-ফাই কার্নিভাল: তরুণ প্রজন্মে ব্যাপক সাড়া

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছেংতুতে সম্প্রতি হয়ে গেলো বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী কল্পবিজ্ঞান কনভেনশন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সায়েন্স ফিকশন অনুরাগীরা এতে জড়ো হন। "মিট দ্য ফিউচার" থিমে পাঁচ দিনব্যাপী এ কার্নিভাল তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। আয়োজক এবং সায়েন্স ফিকশন লেখকরাও বলছেন, তরুণদের বিজ্ঞান অনুরাগী করে তুলতে,  ভবিষ্যতের বিজ্ঞানী তৈরিতে এ কার্নিভাল এবং কল্পবিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি। 

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাই-ফাই সংস্কৃতি শিল্পের বিকাশ এবং চীনের প্রধান বৈজ্ঞানিক-কল্পকাহিনী শহর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জোর চেষ্টা চালায় দক্ষিণপশ্চিম চীনের সিছুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেংতু। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ২০২৩ ওয়ার্ল্ডকন হোস্ট করার জন্য নির্বাচিত হয় শহরটি।

 

এরই ধারাবাহিকতায় ছেংতু বিজ্ঞান জাদুঘরের ৫ হাজার বর্গমিটার বিস্তৃত এলাকায় আয়োজন করা হয় ৮১তম ওয়ার্ল্ড সায়েন্স ফিকশন কনভেনশন। ১৮ থেকে ২২ অক্টোবর- পাঁচদিনব্যাপী এ কার্নিভালে প্যানেল আলোচনা, মর্যাদাপূর্ণ বার্ষিক হুকো পুরস্কার ও থিমভিত্তিক প্রদর্শনীসহ দু শ’র বেশি কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। 

 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কল্পবিজ্ঞান বা সাই-ফাই অনুরাগীরা যোগ দেন ছেংতু কার্নিভালে; বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে আয়োজনটি।

সাংহাই অ্যাস্ট্রোনমি মিউজিয়ামের প্রদর্শক ও ডিজাইনার আলেকজান্ডার ব্যান্ড তুলে ধরেন এর গুরুত্বের কথা।

 

প্রচলিত বিজ্ঞান জাদুঘরে ছেলেমেয়েরা ৫০-১০০ বছর কি তারও আগের বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারনা পায়। আমরা এই কার্নিভালের মাধ্যমে তাদের জন্য এমন একটা সুযোগ তৈরি করতে চাই, যাতে তারা ভবিষ্যতের বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা পাবে এবং উদ্ভাবক ও বিজ্ঞানী হয়ে উঠবে।

কার্নিভালে গেস্ট অব অনার কানাডার খ্যাতিমান সায়েন্স ফিকশন লেখক রবার্ট জে সয়ার অভিভূত চীনের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিজ্ঞানের কল্পকাহিনীর প্রতি আগ্রহ দেখে।

চীনে কল্পকাহিনীর জনপ্রিয়তা কমেনি বরং এখনো উর্ধ্বমুখী। আমি এ রহস্যটা জানতে চাই- কীভাবে আপনার তরুণদের সায়েন্স ফকিশনের প্রতি আগ্রহী করে তুললেন। ইংরেজিভাষী বিশ্বে আমরা এ কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছি। চীনের কল্পবিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন সাই-ফাই লেখক লিউ চিশিন।

এ সময়ে আমাদের সায়েন্স ফিকশন খুবই দরকার, কারণ আমাদের সময়কাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে দ্রুত বদলে যাচ্ছে। চীনের আধুনিকায়ন প্রক্রিয়াও এগুচ্ছে দ্রুত গতিতে। এটি পূর্ণতা পেলে চীনে সায়েন্স ফিকশনেরও স্বর্ণ যুগ আসবে।

 

এশিয়ায় দ্বিতীয় ও চীনের প্রথম শহর হিসেবে ছেংতু বিশ্বের বৃহত্তম ও প্রভাবশালী এ কার্নিভালের আয়োজন করলো। এবারের আয়োজনে ছেংতুর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতীকের অন্তর্ভুক্তিও নজর কাড়ে সাই-ফাই অনুরাগীদের।

 

প্রতিবেদক: মাহমুদ হাশিম    

সম্পাদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

 

২. তরুণ সাই ফাই লেখক হাই ইয়া

 

এদিকে, ৮১তম ওয়ার্ল্ড সায়েন্স ফিকশন কনভেনশনে সেরা উপন্যাসের জন্য হুকো পুরস্কার পেয়েছেন চীনা তরুণ সাই-ফাই লেখক হাই ইয়া। চীনা লেখক হাই ইয়া এর সেরা কাজ "দ্য স্পেস-টাইম পেইন্টার"। হাই ইয়া এই পুরস্কারের তৃতীয় চীনা বিজয়ী।  এর আগে এই হুকো পুরস্কার পান সাই-ফাই লেখক লিউ সিসিন এবং হাও চিংফাং।

 

১৯৫৩ সালে প্রথম উপস্থাপিত, হুকো পুরস্কারটিকে সাই-ফাই ঘরানার নোবেল পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি ১৯৫৫ সাল থেকে কার্যকর হয়ে আসছে।

 

"মিট দ্য ফিউচার" থিমে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছেংতুতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় ৮১তম ওয়ার্ল্ড সায়েন্স ফিকশন কনভেনশন।  প্রথমবারের মতো বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী এই কল্পবিজ্ঞান কার্নিভাল আয়োজন করে চীন।

 

প্রতিবেদক: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদক : মাহমুদ হাশিম    

 

৩. বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে বিআরআই কেমন

বিশ্বব্যাপী অবকাঠামো ও সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চীনের প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) সম্প্রতি ১০ বছর পূর্ণ করেছে।

২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং কাজাখস্থানে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআই প্রস্তাব তুলে ধরেন। এরপর থেকে ১৫০টিরও বেশি দেশ এবং ৩০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থা ২৩০টিরও বেশি সহযোগিতা নথিতে স্বাক্ষর করে।

এতে স্বাক্ষর করা দেশগুলোর অনেক শিক্ষার্থী চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছেন। এই শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ শৈশব থেকেই চীনা সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগী, আবার কেউ কেউ চীনকে তাদের দ্বিতীয় বাড়ি বলে মনে করেন। অনেকে তাদের গবেষণা প্রকল্প হিসেবে বিআরআইকে বেছে নিয়েছেন। যদিও সকলেই চীনের আধুনিকায়ন এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য দেখে বিস্মিত।

চীনা সরকারি গণমাধ্যম চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন সিসিটিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই তরুণ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিআরআই কীভাবে আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক উন্নয়নকে প্রভাবিত করেছে। এ ছাড়া তাদের নিজ দেশ কীভাবে এই উদ্যোগে সম্পৃক্ত হয়েছে এ বিষয়ে অভিমতও ব্যক্ত করেন। 

সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থী ফিলিপাইনের ডিকেনসন সি বলেন,

“প্রেসিডেন্ট সি’র প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ফিলিপাইনকে পরিবহন, অবকাঠামো এবং জ্বালানির মতো ক্ষেত্রগুলোতে বেশ কয়েকটি নতুন সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আরও সফলতা নিয়ে আমি আশাবাদী। আমি আরও সমৃদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণ বিশ্বের জন্য অপেক্ষা করছি।”

অর্থনীতি ও ফিন্যান্স বিষয়ে প্রথম বর্ষের স্নাতকের শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ার ট্যাং ইয়ান জু বলেন, “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের প্রথম দিকের অংশীদারদের মধ্যে একটি হল মালয়েশিয়া, চীন দীর্ঘ সময় থেকে মালয়েশিয়ার বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার। উভয় দেশের অর্থনীতি একীভূত ও সম্প্রসারণে বিআরআই প্রকল্পগুলো সাহায্য করছে।..”

রোমানিয়ান শিক্ষার্থী আন্দ্রেয়া ডায়ানা মানোলাছি। তিনি চীনে স্কুল অব ইকোনমিক্স এন্ড ম্যানেজমেন্টের অর্থনীতি ও ফিন্যান্স বিভাগে পড়ছেন।

 

“চীন ও রোমানিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার এবং চীন থেকে রোমানিয়াতে আমদানি ও রপ্তানি প্রতি বছরই দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি দুই দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির অনেক জায়গা রয়েছে।”

সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা কেন্দ্র থেকে চীনা এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করছেন জাপানের তাকায়া ইনোউ।

“আমি নিশ্চিত বিআরআই প্রকল্প শুধুমাত্র একটি দেশ নয়, পুরো বিশ্বকে উপকৃত করছে। যা আরও দেশগুলোর যোগাযোগকে আরও উন্নত করবে এবং বিশ্বজুড়ে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলবে।”

 

সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে ইন্দোনেশিয়ার সেলিয়া অ্যানেটা। তিনি বলেন, “আমি মনে করি চীন বা বেইজিং প্রযুক্তি ভিত্তিক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি অবকাঠামো, পরিবহনে এবং কীভাবে মানুষ সামগ্রিকভাবে জীবনযাপন করে তার পার্থক্য বলতে পারি।”

 

এ ছাড়া সম্প্রতি বেইজিংয়ে তৃতীয় বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (বিআরএফ) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৭ সালে বেইজিংয়ে প্রথম বিআরএফ অনুষ্ঠিত হয় এবং এর দ্বিতীয় সংস্করণ ২০১৯ সালে তুলে ধরা হয়।

 

প্রতিবেদক: শুভ আনোয়ার

সম্পাদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী