অক্টোবর ২৫: সম্প্রতি ফিলিপিন্সের দুটি বেসামরিক জাহাজ এবং দুটি নৌপুলিশ জাহাজ চীনা সরকারের অনুমতি ছাড়াই চীনের নানশা দ্বীপপুঞ্জের রেনআইন রিফসংলগ্ন জলসীমায় প্রবেশ করে। এ সময় ঘটনাস্থলে আইন প্রয়োগকারী চীনা কোস্ট গার্ড জাহাজ এবং চীনের মাছ ধরা নৌকাগুলোর সাথে ফিলিপিনো জাহাজগুলোর বিপজ্জনকভাবে সংঘাতের সৃষ্টি হয়। অথচ ফিলিপিন্স উল্টো চীনকে দোষারোপ করে চীন ‘ইচ্ছাকৃতভাবে উসকানি’ দিয়েছে বলে অভিযোগ করে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কালবিলম্ব না করে, একটি বিবৃতিতে চীনের বৈধ অধিকার সুরক্ষাকাজ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পদক্ষেপের সমালোচনা করে এবং ফিলিপিন্সের উস্কানিমূলক আচরণকে প্রকারান্তরে উত্সাহিত করে। বিবৃতিতে ইউএস-ফিলিপিন্স পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’-র কথাও উল্লেখ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপিন্স এক্ষেত্রে যেন একসাথে একটি ‘দ্বৈত অভিনয়’ করেছে। এই ঘটনায় কে সঠিক ও কে ভুল? চীনের কোস্ট গার্ড কর্তৃক প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ থেকে দেখা গেছে যে, ২২ অক্টোবর ফিলিপিন্সের একটি জাহাজ চীনের কঠোর সতর্কতা উপেক্ষা করে ও বিপজ্জনকভাবে চীনা জাহাজের কাছাকাছি চলে আসায়, সংঘর্ষ ঘটে। চীনা কোস্ট গার্ড আইন অনুযায়ী, ফিলিপিন্সের জাহাজের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যা খুবই ন্যায়সঙ্গত ও পেশাদার আচরণ। সংশ্লিষ্ট ভিডিও ফুটেজ আছে, সত্যও আছে। এ অবস্থায় কালোকে সাদা হিসেবে বর্ণনা করার চেষ্টা বাতুলতা মাত্র।
তা ছাড়া, রেনআই রিফের সার্বভৌমত্ব সম্বন্ধে আন্তর্জাতিক সমাজের অভিন্ন ধারণা এই যে, এটি চীনের নানশা দ্বীপপুঞ্জের একটি অংশ। জাতিসংঘ সনদসহ আন্তর্জাতিক আইনও একই কথা বলে। চলতি বছর থেকে ফিলিপিন্স দক্ষিণ চীন সাগরে বার বার ঝামেলা সৃষ্টি করে আসছে, বার বার চীনের হুয়াংইয়ান দ্বীপ এবং রেনআই রিফের কাছাকাছি সমুদ্রসীমায় অবৈধভাবে প্রবেশ করছে। পাশাপাশি, দেশটি ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে, আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করছে, এবং বাইরের বিশ্বকে এই মর্মে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে যে, চীন ছোট দেশগুলোকে ধমক দিচ্ছে।
ফিলিপিন্সের অস্বাভাবিক আচরণ সম্বন্ধে দীর্ঘসময় ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ইস্যু নিয়ে গবেষণা করা পন্ডিত জানান, এর পিছনে মূল কারণ হল যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে প্রতিরোধ করার তথাকথিত ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল’ বাস্তবায়নকাজের গতি বাড়িয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। সম্প্রতি মার্কিন কর্মকর্তা ঘন ঘন সংশ্লিষ্ট দেশগুলো সফর করেন, যার প্রধান উদ্দেশ্য হল প্রাসঙ্গিক দেশগুলোকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পক্ষ বেছে নিতে বাধ্য করা এবং দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধকে ব্যবহার করে তাদের ও চীনের মধ্যে বিভেদের বীজ বপন করা, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করা।
আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে, ফিলিপিন্স ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খুব বিশেষ ধরনের। ফিলিপিন্স একসময় যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশ ছিল। এখনো ফিলিপিন্সের কূটনীতি ও নিরাপত্তা নীতির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রভাব আছে। ২০২২ সালের জুন মাসে নতুন ফিলিপিনো সরকার ক্ষমতায় আসার পর, যুক্তরাষ্ট্র তার চাপ ও প্ররোচনার মাত্রা বাড়িয়েছে।
ফিলিপিন্সের দিক থেকে, সে দেশের কিছু রাজনৈতিক শক্তি মনে করে, চীন ও ফিলিপিন্সের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ বা বৈরিতা সৃষ্টি হলে, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয় ফিলিপিন্সকে সমর্থন করবে। এটাও ফিলিপিন্সের দক্ষিণ চীন সাগরে ঝামেলা সৃষ্টি করার প্রধান কারণ। তবে, বিশ্লেষকরা বলেন, এ চিন্তা আসলে ফ্যান্টাসি। "সাইগন মোমেন্ট" থেকে আফগান পশ্চাদপসরণ পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘকাল ধরে তার সকল মিত্রের কাছে একটি স্পষ্ট সংকেত পাঠিয়েছে, আর সেটি হলো: তাকে বিশ্বাস করা যায় না এবং সে নির্ভরযোগ্য নয়।
মোদ্দাকথা, রেনাইন রিফ সমস্যা চীন ও ফিলিপিন্সের দ্বিপক্ষীয় ব্যাপার। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো হস্তক্ষেপের অধিকার নেই। ফিলিপিন্সের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করার ফ্যান্টাসি ছেড়ে দেওয়া, সমুদ্রে উসকানি বন্ধ করা, চীনের সঙ্গে দক্ষিণ চীন সাগরের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় যৌথভাবে কাজ করা, ও এতদঞ্চলের দেশগুলোর অভিন্ন স্বার্থ রক্ষা করা। চীন সংঘাত চায় না, আবার সংঘাতকে ভয়ও পায় না। চীন দৃঢ়ভাবে নিজের সার্বভৌমত্ব ও ভূখন্ডের অখন্ডতা এবং সমুদ্রে নিজের স্বার্থ রক্ষা করে যাবে। (শুয়েই/আলিম)