‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৪১
2023-10-24 19:33:18

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। বেইজিংয়ের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে ক্যাপিটাল মিউজিয়াম

২।  পর্যটক আকর্ষণে চীনের কৃষিকাজ

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।  

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৪১তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।    

১। বেইজিংয়ের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে ক্যাপিটাল মিউজিয়াম

জাদুঘর একটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক এবং এটা সভ্যতা, ইতিহাস বহন করে। বেইজিংয়ে রয়েছে নানা ধরনের জাদুঘর এবং প্রতিটি জাদুঘরের রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। এখানে রয়েছে চীনের বৃহত্তম ও সবচেয়ে সমৃদ্ধ বেশকয়েকটি জাদুঘর। তার মধ্যে অন্যতম ক্যাপিটাল মিউজিয়াম। বেইজিংয়ের ৫ লাখ বছরের মানব বসতির ইতিহাস, ৩ হাজার বছরের শহুরে ইতিহাস এবং ৮শ বছরের রাজধানী হিসাবে বেইজিংয়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানার অন্যতম উৎস এই জাদুঘর।  

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের  ফু চিং মেন অ্যাভিনিউতে অবস্থিত এই ক্যাপিটাল মিউজিয়াম। শি চ্যাং আন চি এভিনিউর ধারাবাহিকতা হিসাবে পূর্ব-পশ্চিমে রয়েছে প্রধান রাস্তা, যা ফরবিডেন সিটি এবং থিয়েন আন মেন স্কোয়ার বরাবর চলে গেছে। এই জাদুঘরটি শহরের ফ্ল্যাগশিপ পাবলিক বিল্ডিংগুলির মধ্যে একটি।

৬০ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে এ জাদুঘর। এ জাদুঘরে রয়েছে এগারোটি মূল প্রদর্শনী কক্ষ, যা ১ মিলিয়নেরও বেশি বাস্তব এবং প্রামাণ্য নিদর্শন সমন্বিত সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষের সংগ্রহশালা হিসেবে খ্যাত। এ জাদুঘরে রয়েছে অসংখ্য চমৎকার শিল্পকর্ম এবং মূল্যবান ঐতিহাসিক বস্তু।

এছাড়া ক্যাপিটাল মিউজিয়ামে রয়েছে  তিনটি অস্থায়ী প্রদর্শনী কক্ষ, যা  প্রায়শই চীন এবং সারা বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর প্রদর্শনী রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। ১৯৮১ সালে প্রায় ৮৩ হাজার বস্তুর সংগ্রহ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ক্যাপিটাল মিউজিয়াম। দিন যত অতিবাহিত হয়েছে বেইজিংয়ের অন্যান্য প্রধান শিল্প জাদুঘর, যেমন ফরবিডেন সিটি জাদুঘর, চীনের জাতীয় জাদুঘর এবং চীনের জাতীয় শিল্প জাদুঘরগুলোর মতই নেতৃস্থানীয় সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে এই জাদুঘর। 

ক্যাপিটাল মিউজিয়ামের রয়েছে বিশাল ছাদ এবং এর প্রবেশদ্বার স্কোয়ারের গ্রেডিয়েন্ট হল স্থপতি চিন-মেরি দুথিলিউল এবং কুই কাইয়ের কাজ। এটি তৈরি করা হয়েছে প্রাচীন চীনা স্থাপত্যশৈলীতে।

পাথরের তৈরি বাহ্যিক প্রাচীরটি প্রাচীন চীনের শহরের দেয়াল এবং টাওয়ারের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। জাদুঘরের উত্তর গেটের সামনে গেলে চোখে পড়বে মাটিতে ড্রাগন, ফিনিক্স এবং ইম্পেরিয়াল আর্টিফ্যাক্টের ছবি দিয়ে খোদাই করা একটি বিশাল পাথর।

মিউজিয়ামের ভিতরের প্রদর্শনী হলে গিয়ে বেইজিংয়ের ম্যাপ দেখে এক নজরে বেইজিং সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পাশাপাশি এখানে বিভিন্ন রাজবংশের সময়কার সম্রাটদের ছবি ও ব্যবহৃত নানা জিনিসও মুগ্ধ করে পর্যটকদের। এছাড়া রয়েছে প্রাচীন চীনামাটির বাসন, ব্রোঞ্জ, ক্যালিগ্রাফি, পেইন্টিং, ভাস্কর্য। পাশাপাশি অন্যান্য এশিয়ান সংস্কৃতির বৌদ্ধ মূর্তির বিশাল সংগ্রহও রয়েছে এখানে। 

চীনের ইতিহাস ,ঐতিহ্য নিয়ে জানতে এই মিউজিয়াম দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ঘুরতে আসেন হাজারো পর্যটক। আর এসব পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ইতিহাস সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিতে এই মিউজিয়ামের দেখভালের দায়িত্বে শতাধিক কর্মচারী। আর ক্যাপিটাল মিউজিয়ামের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে হান চানমিং।

রাজধানী বেইজিংয়ের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংগ্রহ, সংযোজন, পুনরুদ্ধার, গবেষণা এবং সংরক্ষণের জন্য বিশ্বজুড়েই খ্যাত এই ক্যাপিটাল মিউজিয়াম। পাশাপাশি বিশ্বের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসাবে অবদান রাখছে এই জাদুঘর।

আফরিন মিম

চীন ভ্রমণ পর্ব-২  

 

২। পর্যটক আকর্ষণে চীনের কৃষিকাজ

ফসল কাটার মৌসুমে চীনজুড়ে দেখা গেছে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা। কৃষিকাজ এখন পরিণত হয়েছে জনপ্রিয় পর্যটক আকর্ষণে, যার ফলে বাড়তি উপার্জন করতে পারছে কৃষকরা।

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশ। এই প্রদেশের লান ছাং লাহু স্বায়ত্তশাসিত কাউন্টির কৃষকরা এখন ব্যাস্ত সময় পার করছেন তাজা চা পাতা তুলতে। মেঘে ঢাকা এই চা বাগান দেখতে ভীর করছেন পর্যটকরা।

পুয়ের সিটির চিংমাই পাহাড়ের পুরনো এই চা বাগানে উপভোগ করা যায় অসাধারণ দৃশ্য । গেল সেপ্টেম্বরে এই স্থানটি স্বীকৃতি পেয়েছে ইউনেস্কোর বৈশ্বিক ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক স্থান হিসেবে। এটিই বিশ্বের প্রথম ঐতিহ্যবাহী স্থান যা চা এর সাথে সম্পর্কিত । এর মাধ্যমে ৫৭ বারের মত চীন প্রবেশ করেছে ঐতিহ্যবাহী স্থানে । 

চা বাগানগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে একটি বিশেষ সিস্টেমে, যা প্রাকৃতিক সম্পদকে টেকসই ব্যবহারের পাশাপাশি সম্পৃক্ত করে  সংস্কৃতি ও  জীব বৈচিত্র্যকে।এই প্রথাটি পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যবাহী চা সংস্কৃতির উপর  ভিত্তি করে  নির্মিত হয়েছে।

চিয়াংসি প্রদেশের চোংই কাউন্টি। এই কাউন্টিতে এখন দেখা মিলছে ঝলমলে সোনালী পাকা ধান।  পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত মাঠগুলো দেখে মনে হয় যেন সমুদ্রের সোনালী রঙয়ের ঢেউ । কৃষকরা এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এই পাকা ধান সংগ্রহ করতে। 

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা  কর্তৃক ২০১৮  সালে, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী কৃষি অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয় এই অঞ্চলের হাক্কা চত্তরকে। 

প্রায় ১০০০ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট কয়েক ডজন ধানের সারি করা হয়েছে পাহাড়ের প্রতিটি ধাপে।  এই স্থানটি শুধুমাত্র স্থানীয়দের জন্য জীবিকাই নির্বাহ করে না,  এটি চীনের কৃষি সভ্যতারও প্রতীক।

কেন্দ্রীয় হেনান প্রদেশ। যেখানে তাইহাং পর্বতমালার  ৪০০ কিলোমিটারেরও বেশি অংশ অবস্থিত।  স্থানীয়রা এই পাহাড়কে পর্যটন আকর্ষণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবেও ব্যবহার করছে।

পূর্ব চেচিয়াং প্রদেশে, তাইহু লেকের পানিকে ব্যাবহার করে নানছুন জেলায় তৈরি হয়েছে হাজার হাজার পুকুর, যার নাম মালবেরি পুকুর সিস্টেম। 

ভিন্ন ধারার এই সিস্টেমে মাছের পাশাপাশি চাষ করা হয় রেশম পোকার। মুলত পুকুরের পাড়ে মালবেরি গাছের পাতা ব্যাবহার করে চাষ করা হয় রেশম কীটের। মাছ খাবার হিসেবে ব্যাবহার করা হয় রেশম কীটের মলমূত্র। আবার মাছের মল থেকে সৃষ্ট পুকুরের পলিমাটি ব্যবহৃত হচ্ছে মালবেরি গাছের সার হিসেবে। এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাস্তুসংস্থান। যা ২৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো বলে দাবি করে স্থানীয়রা।

বিশ্বের খাদ্য চাহিদা পূরণে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হচ্ছে চীনের কৃষিক্ষেত্র। কৃষির এই সৌন্দর্য এখন রূপ নিচ্ছে পর্যটক আকর্ষণের নতুন সম্ভাবনা হিসেবেও।

প্রতিবেদন- হোসনে মোবারক সৌরভ

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী