বিজ্ঞানবিশ্ব ৪১তম পর্ব
2023-10-23 19:19:11

চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব

৪১তম পর্বে যা থাকছে:

 

* শূকরের চামড়া মানুষের ত্বকে প্রতিস্থাপনে সফল চীনা গবেষকরা

* থাইল্যান্ডের প্রাচীন স্কুলকে ডিজিটাল করলো চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান

* প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা তুলে ধরতে ক্যান্টন ফেয়ারে ওয়ালটন

 

 

·        শূকরের চামড়া মানুষের ত্বকে প্রতিস্থাপনে সফল চীনা গবেষকরা

গুরুতরভাবে পোড়া রোগীর ত্বকের মধ্যে ‘মাল্টি-জিন সম্পাদিত’ শূকরের চামড়া সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন চীনা বিজ্ঞানীদের একটি দল। এটি জেনোট্রান্সপ্লান্টেশনের ক্লিনিকাল প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। পাশাপাশি এখন থেকে আগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসায় নতুন এ পদ্ধতি আরও বেশি সফলতা দেবে।

উত্তর-পশ্চিম চীনের শায়ানসি প্রদেশের সি’য়ান শহরের এয়ার ফোর্স মেডিকেল ইউনিভার্সিটির সিচিং হাসপাতালে গত জুলাইয়ে এমন একজন রোগীর ওপর অস্ত্রোপচার করা হয়, যার শরীরের ৯০ শতাংশেরও বেশি পুড়ে গিয়েছিল এবং যার মধ্যে ৫০ শতাংশেরও বেশি অংশ ছিল গুরুতর পুড়ে যাওয়া।

সে অস্ত্রোপচারে গবেষকদল প্রথমে ওই ব্যক্তির উপরের ত্বক থেকে পোড়া অংশ অপসারণ করে এবং তারপর রোগীর অটোলোগাস (নিজস্ব কোষ) স্কিন গ্রাফ্টের সঙ্গে মিলিয়ে ‘বহু-জিন সম্পাদিত’ শূকরের চামড়া প্রতিস্থাপন করে।

অস্ত্রোপচারের পরে রোগীর শরীরে ট্রান্সপ্ল্যান্টে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। পঞ্চাশ দিন পর শুকরের চামড়া স্বাভাবিকভাবেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ক্ষত স্থান সম্পূর্ণ নিরাময় হয়।

শিচিং হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড কিউটেনিয়াস সার্জারি বিভাগের উপ-পরিচালক ইয়াং শুয়ে খাং বলেন, “বাম হাতে ‘জিন-সম্পাদিত’ শূকরের চামড়া প্রতিস্থাপন করা হয়। আর ডান হাতে আমরা ক্লাসিক অ্যালোজেনিক স্কিন গ্রাফ্ট ব্যবহার করি। দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পর আমরা দেখতে পাই যে, ‘জিন-সম্পাদিত’ শূকরের চামড়ার হাতটির অবস্থা অনেক ভালো। অদূর ভবিষ্যতে আমরা এই ফলাফল নিয়ে আরও গবেষণা করব। আমি বিশ্বাস করি যে, ‘জিন-সম্পাদিত’ শূকরের চামড়া গুরুতর পোড়ার চিকিৎসার ক্ষেত্রে অ্যালোজেনিক স্কিন গ্রাফ্টের স্থান নেবে।”

এর আগে জিনোমিক সিকোয়েন্সিং, পিসিআরসহ অন্যান্য পরীক্ষার জন্য রক্ত ও ত্বকের নমুনা পাঠানো হয়েছিল। পরীক্ষায় শূকরের এন্ডোজেনাস রেট্রোভাইরাস এবং অন্যান্য প্যাথোজেনিক অণুজীবের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

গত বৃহস্পতিবার যুগান্তকারী এ সাফল্য ঘোষণা দিতে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

 

·        থাইল্যান্ডের প্রাচীন স্কুলকে ডিজিটাল করলো চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান

থাইল্যান্ডে একটি অংশের নাগরিকরা যখন আধুনিক শহরে বাস করে আধুনিক জীবন যাপন করছে, তখন অন্য একটি অংশ গ্রামে প্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই জীবন পার করছে, যদিও উভয় অংশের নাগরিকরা জাতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এরপরও জীবনযাপনে এই সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান, বিশেষ করে কোভিড-১৯ আসার পর এই বিভাজনটি আরও পরিষ্কার হয়ে উঠেছে।

তবে মধ্য থাইল্যান্ডের আয়ুথায়া প্রদেশের প্রাচীন স্কুল ‘জিরাসার্তউইথায়া’ স্থানীয় শিক্ষাকর্মী এবং চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়েই’র সহযোগিতায় ডিজিটাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব, শিক্ষকদের ডিজিটাল জ্ঞান না থাকা এবং একটি কার্যকর অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম বাস্তবায়ন না হওয়ায় থাইল্যান্ডের স্কুলগুলোর জন্য বর্তমান বিশ্বের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে।

তবে চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়েই’র সহযোগিতায় তৈরি ‘স্কুল ব্রাইট’ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে থাইল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে বলে আশা করছেন উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিস্থিতি পরিবর্তন নিয়ে আশাবাদী প্রতিষ্ঠানটি।

স্কুল ব্রাইটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নারিন খুরানা বলেন, “শিক্ষকরা তাদের সময়ের ৪২ শতাংশ এমন কাজে ব্যয় করেন, যা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তাই আমরা যদি শিক্ষকদের এই ৪২ শতাংশের হার কমিয়ে আনতে পারি তাহলে তাদের মূল্যবান সময় শিক্ষার্থীরা পাবে।”

ডিজিটালাইজেশন পুরোনো এই স্কুলটির শিক্ষাগত দৃশ্যপটকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। সকালের রোল কলে এখন আর কোনও শিক্ষকের উপস্থিতর প্রয়োজন হয় না। অভিভাবকরা তাদের ফোনে রিয়েল-টাইম নোটিফিকেশ পেয়ে যান যে, তাদের সন্তান স্কুলে পৌঁছেছে। একাডেমিক অগ্রগতি, হোমওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা, টিউশন ফি পরিশোধ এবং শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে দ্বিমুখী যোগাযোগ সবই ডিজিটাল উপায়ে সম্পন্ন হয় এ স্কুলটিতে। এ ছাড়া স্কুল ব্রাইট প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে স্ক্যান করে যাবতীয় অর্থ প্রদান করা যায়।

জিরাসার্তউইথায়া স্কুলের প্রশাসন বিভাগের নির্বাহী সহকারী ধনাদেজ জেভিয়ার কাঙ্কাওয়ারাত বলেন, “যদি এমন কোনও প্রযুক্তি থাকে, যা স্কুলের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে, আমাদের স্কুল নতুন সেই প্রযুক্তি গ্রহণ এবং শিখতে প্রস্তুত।”

যদিও স্কুল ব্রাইটের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রবেশ করার চমৎকার সুযোগ ছিল, তবে উদ্যোক্তরা এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছিল।

মধ্য থাইল্যান্ডের আয়ুথায়া প্রদেশের প্রাচীনতম জিরাসার্তউইথায়া স্কুলের শিক্ষাবিদরা কোভিড-১৯ আসার পর নতুন করে ভাবতে শুরু করেন যে, পদ্ধতিগতভাবে পরিচালিত পরিবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা কী হতে পারে। এরপর তারা গত কয়েক দশকের ঐতিহ্য থেকে বের হয়ে আসেন।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

 

·        প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা তুলে ধরতে ক্যান্টন ফেয়ারে ওয়ালটন

দক্ষিণ চীনের কুয়াংতং প্রদেশের কুয়াংচৌতে চলছে চীন আমদানি ও রপ্তানি মেলা বা ক্যান্টন ফেয়ার। বিশ্বের বহু দেশের ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য আমদানিকারক ও ক্রেতা জড়ো হয়েছেন চীনের ঐতিহ্যবাহী ও মর্যাদাপূর্ণ এ মেলায়। তৃতীয়বারের মতো এ মেলায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড ওয়ালটন।

 

প্রদর্শনীর আন্তর্জাতিক প্যাভিলিয়ন অংশে স্থাপন করা হয়েছে ওয়ালটনের মেগা প্যাভিলিয়ন। মেলার এ অংশে ‘ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড হাউজহোল্ড ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্স’ ক্যাটাগরিতে অংশ নিচ্ছে ওয়ালটন।

ক্যান্টন ফেয়ারের প্রথম ধাপের ৫ দিনে মেলায় প্রদর্শিত হয়েছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ইউরোপিয়ান এসিসি ব্র্যান্ড এবং বাংলাদেশি ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন ব্র্যান্ডের আন্তর্জাতিক মানের ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য। প্রদর্শন করা হয়েছে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী অত্যাধুনিক ফিচারের রেফ্রিজারেটর, ভয়েস কন্ট্রোল ও ডিজিটাল ডিসপ্লেসমৃদ্ধ এয়ার কন্ডিশনার, রিচার্জেবল ফ্যান, সিলিং ফ্যানসহ বিভিন্ন হোম ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্সেস।

ক্যান্টন ফেয়ারে আগত বৈশ্বিক ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে ওয়ালটন প্যাভিলিয়ন। এখানে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে ওয়ালটনের আইওটি-বেজড ইনভার্টার প্রযুক্তির বিদ্যুৎসাশ্রয়ী অফলাইন ভয়েস কন্ট্রোল স্মার্ট এসি, ভিআরএফ এসি এবং বেশ কয়েকটি মডেলের রেফ্রিজারেটর। বিশেষ করে অফলাইন ভয়েস কন্ট্রোল এসির বিশ্বের যে কোনও ভাষায় পরিচালন ফিচারটি ক্রেতাদের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে।

এছাড়া ৬৬০ লিটার ধারণক্ষমতার কনর্ভাটিবল মোডের সর্বাধুনিক ফিচারের ফ্রেঞ্চ ডোর মডেল, ৬১৯ লিটারের মাল্টিকালার সাইড বাই সাইড ডোর, ওয়াটার ডিসপেন্সার ফিচারের ৬৪৬ লিটার মডেল, ৩৪৩ লিটারের কম্বি মডেল, ১৯৩ ও ৯৩ লিটারের সিঙ্গেল ডোর মডেলের রেফ্রিজারেটর, আইসক্রিম কুলার এবং বেভারেজ কুলারও ক্রেতাদের নজর কেড়েছে। পাশাপাশি সোলার ও রিচার্জেবল ফ্যানও ভালো সাড়া ফেলেছে।

এ মেগা ট্রেড শোর মাধ্যমে বৈশ্বিক ক্রেতাদের সঙ্গে ওয়ালটনের আন্তর্জাতিক সেতুবন্ধন তৈরি হচ্ছে বলেও জানান ওয়াল্টন কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওয়ালটনের তৈরি পণ্য ইতোমধ্যে এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার ৪০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ক্যান্টন ফেয়ারের মাধ্যমে নতুন নতুন দেশে রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। সেইসঙ্গে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম সেরা গ্লোবাল ব্র্যান্ড হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে বলেও আশাবাদী ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।

||প্রতিবেদন: আফরিন মিম

||সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

প্রিয় শ্রোতা, এই ছিলো আমাদের এবারের বিজ্ঞানবিশ্ব। অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের, তা আমাদের জানাতে পারেন। এতোক্ষণ বিজ্ঞানবিশ্বের পুরো আয়োজন জুড়ে ছিলাম আমি শুভ আনোয়ার। নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

 

 

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার

 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- শিয়াবুর রহমান

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী