‘লাওস ১’ টেলিযোগাযোগ উপগ্রহের সংকেতের মাধ্যমে লাওসের শিক্ষা ও ক্রীড়া চ্যানেল প্রতিদিন সকালে দেশটির হাজার হাজার পরিবারের কাছে তার অনুষ্ঠান পৌঁছে দেয়। কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালে এ চ্যানেলটি লাওসের ছাত্রছাত্রীদেরকে ঘরে বসে লেখাপড়ায় সাহায্য করেছে এবং এখনও দূরবর্তী পাহাড়ি এলাকার মানুষদের জন্য দূরশিক্ষণে সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে।
লাওসের দূরশিক্ষণ থেকে লেবাননের বন্দর নির্মাণ কিংবা সামুদ্রিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত - যৌথভাবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ উত্থাপনের দশ বছরে চীন এ অঞ্চলের সহযোগিতামূলক অংশীদারদের সঙ্গে গভীর মহাকাশ বিষয়ক সহযোগিতা চালিয়েছে। এক একটি উপগ্রহ, এক একটি স্থল স্টেশনে স্থাপিত ‘মহাকাশ সিল্ক রোড’ মহাকাশ ক্যারিয়ার আরও ভালোভাবে সহযোগিতামূলক অংশীদারদের জন্য কল্যাণ সৃষ্টি করেছে।
চীনের মহাকাশ বিষয়ক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কর্পোরেশন (সিএএসসি) ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ সহযোগিতামূলক অংশীদারদের জন্য উপগ্রহ উদ্ভাবন ও উত্ক্ষেপণ পরিষেবা প্রদান করে আসছে। বলিভিয়া যোগাযোগ স্যাটেলাইট, ‘লাওস এ’ যোগাযোগ স্যাটেলাইট, চীন-ফ্রান্স সমুদ্র স্যাটেলাইট এবং পাকিস্তান রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট-১সহ সবই সাফল্যের সঙ্গে উত্ক্ষেপিত হয়েছে এবং টেলিযোগাযোগ, কৃষি, সংস্কৃতি, পরিবেশ সংরক্ষণ ও আবহাওয়া ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভুমিকা পালন করছে।
চীনা মহাকাশ ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ সহযোগিতামূলক অংশীদারদের উত্ক্ষেপিত বেশ কয়েকটি সেন্সিং স্যাটেলাইট আবহাওয়া পূর্বাভাস, দুর্যোগ প্রতিরোধ ও হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন দেয়।
একই সময় চীন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ সহযোগিতামূলক অংশীদারদের জন্য মহাকাশ সম্পর্কিত স্থানীয় মেধা লালন করছে, প্রযুক্তি হস্তান্তর বেগবান করছে এবং স্থানীয় মহাকাশযান গবেষণা অবকাঠামো নির্মাণ করে চলেছে।
২০২৩ সালের জুন চায়না একাডেমি অব স্পেস টেকনোলজি (সিএএসটি)-নির্মিত মিশরের স্যাটেলাইট অ্যাসেম্বলি সমাবেশ ইন্টিগ্রেশন টেস্ট সেন্টার (এআইটি)-এর চূড়ান্ত গ্রহণযোগ্যতা নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এটি ছিল চীন থেকে প্রথম হস্তান্তরিত এবং সাফল্যের সঙ্গে এআইটি-এ ব্যবহারিক সিস্টেম-স্তরের মহাকাশ উন্নয়ন অবকাঠামো রপ্তানিকৃত প্রকল্প। এর ফলে মিশর আফ্রিকায় এমন ক্ষমতার অধিকারী প্রথম দেশে পরিণত হয়েছে।
চীন ও মিশরের যৌথ নকশায় তৈরি দু’টো স্যাটেলাইটেরও এআইটি-এ পরীক্ষা, চূড়ান্ত সংযোজন ও পরিবেশগত পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এটি দেশটির উপগ্রহ শিল্পে তৈরি প্রথম স্থানীয় কেন্দ্র, যার ফলে আফ্রিকার কাছে উপগ্রহ প্রযুক্তি হস্তান্তরের দিক থেকে মিশর প্রধান ভূমিকা পালন করবে।
‘লাওস ১’ টেলিযোগাযোগ উপগ্রহের অপারেটিং পক্ষ হিসেবে সিএএসসি’র অধীনে স্পেস স্টার টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড লাওসকে উপগ্রহ পরিমাপ ও নিয়ন্ত্রণ এবং স্থল ব্যবহারিক পেশাদার কর্মী লালন করার পাশাপাশি স্থানীয় প্রযুক্তি ও প্রশাসন দল গঠন করেছে। স্থানীয় অপারেটিং দলের প্রায় ৯০ শতাংশ লাওস থেকে আসা।
তাছাড়া স্পেস স্টার টেকনোলজি বলিভিয়া, উরুগুয়ে ও বতসোয়ানার আবহাওয়া মোবাইল স্টেশন এবং ইথিওপিয়ার রিমোট সেন্সিং মাইক্রোস্যাটেলাইট প্রকল্প দেখভাল করে।
বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় স্পেস স্টার টেকনোলজি অনলাইন প্রশিক্ষণ চালিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে মহাকাশ প্রযুক্তির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার সামর্থ্য উন্নত করতে সাহায্য দেয়। প্রশিক্ষণের সুবিধাভোগী হলো লাওস, মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ ৮টি দেশ।
সিএএসসি ‘উপচে পড়া’ প্রভাব শক্তিশালী করে মহাকাশ বিষয়ক পণ্য রপ্তানির উচ্চ-প্রযুক্তি ও সিরিয়ালাইজেশন বাড়াতে এক গুচ্ছ পণ্য, পরিষেবা ও একীকরণ সমাধান পরিকল্পনার মাধ্যমে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ সহযোগিতামূলক অংশীদারদেরকে আরও ভালো মানের পরিষেবা দিয়ে যাবে। (প্রেমা/রহমান)