অক্টোবর ২৩: সম্প্রতি জাতিসংঘের সাবেক উপ-মহাসচিব, "বেল্ট অ্যান্ড রোড" গ্রিন ডেভেলপমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের ভাইস চেয়ারম্যান, "বেল্ট অ্যান্ড রোড" গ্রিন ডেভেলপমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সভাপতি এরিক সোলহেইম তৃতীয় বিআরআই সহযোগিতা আন্তর্জাতিক শীর্ষ ফোরামে অংশ নেন এবং চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)-কে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে চীনের সবুজ উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, এবারের শীর্ষ ফোরামে তিনি সবুজ উন্নয়ন উচ্চপদস্থ ফোরামে অংশগ্রহণ করেন। সব উন্নয়নশীল দেশ প্রধানত চীনের সবুজ উন্নয়ন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ক্ষেত্রের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ওপর খুব গুরুতারোপ করে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, চীন কিভাবে সবুজ খাতে পুঁজি বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে।
সোলহেইম বলেন, চলতি বছর হল ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ উত্থাপনের দশম বার্ষিকী। বিগত দশ বছরে বিআরআই-এর ফ্রেন্ড সার্কেল আরও বড় হয়েছে। বিআরআই সহযোগিতা এশিয়া ও ইউরোপ থেকে আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকা অঞ্চলে ছড়িয়েছে। ২০২৩ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত, চীন ১৫০টিরও বেশি দেশ, ৩০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে দুই শতাধিক সহযোগিতা দলিল স্বাক্ষর করেছে, যার মধ্যে যৌথভাবে সবুজ রেশমপথ নির্মাণ করা হল গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। চীন ৪০টিরও বেশি দেশের ১৫০টিরও বেশি সহযোগিতা অংশীদারের সঙ্গে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ সবুজ উন্নয়ন আন্তর্জাতিক লীগ প্রতিষ্ঠা করেছে। ৩২টি দেশের সঙ্গে বিআরআই জ্বালানি সহযোগিতা অংশীদারিত্বের সম্পর্ক স্থাপন করেছে; ব্যাপকভাবে সবুজ বিনিময় ও সহযোগিতার মঞ্চ গড়ে তুলেছে।
সোলহেইম বিআরআই-এর কথা উল্লেখ করে বলেন, যখন প্রথমবার এই উদ্যোগের কথা শোনেন, তখন একে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি তার কাছে। তবে, খুব তাড়াতাড়ি তিনি বুঝতে পারেন যে, এই উদ্যোগ হল বর্তমান যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন উদ্যোগ। কারণ, চীনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার, প্রযুক্তি হস্তান্তরের সামর্থ্য রাখে। অবশ্য, অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে পুঁজি বিনিয়োগের যথেষ্ঠ সামর্থ্যও আছে চীনের। তাই তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, এই উদ্যোগ খুব ভালো ও বিশাল।
সোলহেইম, জাতিসংঘের সাবেক উপ-মহাসচিব ও ইউএনইপি-এর নির্বাহী পরিচালক এবং নরওয়ের পরিবেশ ও বৈদেশিক সহায়তামন্ত্রী ছিলেন। তার কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় জাতীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে পরিবেশগত এবং উন্নয়ন ইস্যুতে কাজ করেছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের চ্যচিয়াং প্রদেশের আনজি গ্রাম পরিদর্শন করেন। স্থানটি ‘সবুজ পাহাড় ও পরিচ্ছন্ন পানি মানে সোনার পাহাড় ও রূপার পাহাড়’ এই চিন্তাধারার জন্মস্থান। এটি ছিল সোলহেইমের তৃতীয় আনজি সফর।
তিনি বলেন, সবখানে বোঝা যায় বিরাট পরিবর্তন। পুরো শহর খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। যদি আপনি আনজিতে যান, আপনি দেয়ালে দেখতে পারেন অনেক পুরানো কারখানার ছবি। তখন দূষণ খুব ভয়ংকর মাত্রায় ছিল। এখন এসব কারখানা আর নেই। বরং আছে বিভিন্ন কফির দোকান, লাইব্রেরি, ইত্যাদি। দূষণ থেকে সবুজ উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় এতো বেশি কর্মসংস্থান ও সমৃদ্ধ জীবন সৃষ্টি হয়েছে, যা খুব চমত্কার ব্যাপার। এসব পরিবর্তন দশ বছরের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
"বেল্ট অ্যান্ড রোড" উদ্যোগ প্রস্তাবিত হওয়ার পর থেকে বিগত দশ বছরে, চীন সর্বদা মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার ধারণাকে সমর্থন করেছে এবং "বেল্ট অ্যান্ড রোড" উদ্যোগের সাথে সবুজ উন্নয়নের স্তরের প্রচার ও উন্নতি অব্যাহত রেখেছে। এই বছরের বেল্ট অ্যান্ড রোড শীর্ষ ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের উচ্চ-মানের যৌথ নির্মাণকে সমর্থন করার জন্য চীনের আটটি পদক্ষেপের ঘোষণা দেন, যার মধ্যে একটি হল সবুজ উন্নয়নের প্রচার। ফোরামের পরে, সোলহেইম প্রায় এক সপ্তাহ চীনে থাকেন। এ সময়টা তিনি "বেল্ট অ্যান্ড রোড" উদ্যোগের সবুজ উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন সম্পর্কিত সেমিনার ও সভায় কাটান।
সোলহেইম বলেন, তিনি মনে করেন, পরের দশকে সবাই থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার মাধ্যমে বেইজিং ও সিঙ্গাপুরের সাথে সংযোগকারী হাইস্পিড রেল দেখতে পাবেন। এমনকি, নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে মিয়ানমার ও লাওসকেও। বেইজিং থেকে ২৪ ঘন্টায় সিঙ্গাপুর পৌঁছাতে পারা পর্যটন শিল্পের জন্য একটি ভালো বিষয় হবে। একই সময়ে, এটি পণ্যসম্ভার পরিবহন ও আন্তঃসংযোগকেও উন্নত করতে পারে। সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি এবং জলবিদ্যুতে বিপুল বিনিয়োগ হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে আরও চেষ্টা করা যেতে পারে। এ ছাড়া, এই ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট সি’র মূল বক্তব্য ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের জন্য একটি নতুন দিক নির্দেশ করে। তিনি বলেছিলেন যে, আমাদের "ছোট কিন্তু সুন্দর" প্রকল্পগুলো সন্ধান করা উচিত এবং আমাদের উচ্চ মানের প্রকল্পগুলো সন্ধান করা উচিত। তিনি মনে করেন, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যা প্রকাশ করতে চান তা হল "বেল্ট অ্যান্ড রোড"-এর আওতায় অবকাঠামো নির্মাণের ওপর জোর দেওয়া উচিত, কিন্তু একই সাথে, এটি শিল্প, সংস্কৃতি, জাদুঘর, স্বাস্থ্যের মতো বিষয়গুলোর ওপরও গুরুত্বারোপ করা উচিত। কারণ, এগুলো মানুষের জীবিকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। (শুয়েই/আলিম)