দেহঘড়ি পর্ব-০৪১
2023-10-22 17:45:08

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং টিসিএম ভেষজের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা ‘ভেষজের গুণ’।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

বুকে ব্যথা উপশমে টিসিএম

বুকে ব্যথা একটি ব্যাপক বিস্তৃত স্বাস্থ্যসমস্যা। এর মধ্যে ব্যথা ও বুকে চাপের অনুভূতি দু-ই অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে এবং পশ্চিমা চিকিৎসা ব্যবস্থায় এর জন্য দায়ী করা হয় মূলত হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ, উচ্চরক্তচাপ, গ্যাস, অ্যাসিডিটি ইত্যাদিকে।

তবে ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসাব্যবস্থা বা টিসিএমে মনে করা হয়, বুকে ব্যথা বহিরাগত প্যাথোজেনিক কারণে বা রোগীর অভ্যন্তরীণ অবস্থার আক্রমণের ফলে কিংবা দুটির সংমিশ্রণে হতে পারে। বুকের চ্যানেল ও সংশ্লিষ্ট অঙ্গগুলোতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন যে কোনও কারণেই বুকে ব্যথা হতে পারে। সাধারণ কারণগুলো হলো মূল জীবনীশক্তি বা ‘ছি’ ও রক্তের স্থবিরতা, কফ বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং সর্দি ঘনীভূত হওয়া।

মানসিক অস্থিরতা, যেমন রাগ, বিরক্তি, হতাশা ও উদ্বেগের কারণে লিভারের ‘ছি’তে স্থবিরতা দেখা দিতে পারে এবং যেহেতু লিভারই গোটা শরীরে ‘ছি’ সঞ্চালনের কেন্দ্র, তাই লিভারের ‘ছি’র স্থবিরতা দেহের উপরের অংশে ‘ছি’-প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করতে পারে। হার্টের ‘ছি’ যখন বাধাগ্রস্ত হয়, তখন বুকের বাম দিকে ব্যথা হয় আবার অন্যদিকে যখন লিভারে স্থবির ‘ছি’ ফুসফুসে ‘ছি’র সঞ্চালনকে রুদ্ধ করে, তখন বুকে চাপ বোধ হয়। এই অবস্থা দেখা যায় কার্ডিওফ্রেনিয়া, হাইপারভেন্টিলেশন, বিষণ্নতা, টাইটেজ সিন্ড্রোম এবং ইন্টারকোস্টাল নিউরালজিয়াতে।

বাহ্যিক বায়ুজনিত তাপ বা বায়ুজনিত ঠান্ডা সরাসরি ফুসফুসে আক্রমণ করতে পারে, যার ফলে ফুসফুসের ‘ছি’ বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে তাপ সৃষ্টি হয়, কফ জমে, ফুসফুসে আঘাত লাগে এবং বুকে ব্যথা হয়। এই অবস্থা নিউমোনিয়া, পালমোনারি যক্ষ্মা ও প্লুরিসিতে দেখা যায়। দীর্ঘস্থায়ী হার্ট বা ফুসফুসের রোগ যেমন দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস, এমফিসিমা, রিউম্যাটিক হৃদরোগ ও হার্ট ফেইলিউর সরাসরি বুকে ‘ছি’র স্থবিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

বুকে ব্যথার চিকিৎসার ক্ষেত্রে, ব্যথার ক্ষমার মূল কারণের চিকিৎসার নীতি অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। বুকে ব্যথার টিসিএম চিকিৎসা খুব কার্যকর, যার মধ্যে অন্তর্ভূক্তি ভেষজ ওষুধ ও আকুপাংচার। তবে ব্যথা যদি তীব্র হয়, তাহলে টিসিএমের সঙ্গে পাশ্চাত্যের ওষুধও ব্যবহার করা যায়। টিউমার বা সিস্টেমিক রোগের কারণে বুকে ব্যথা হলে, চিকিৎসার লক্ষ্য হওয়া উচিত অন্তর্নিহিত রোগ।

ব্যথা তীব্র হলে দেরি না করে ওষুধ দিতে হবে। বুকে ব্যাথার চিকিৎসায় সবচেয়ে প্রচলিত টিসিএম ওষুধের মধ্যে রয়েছে কুয়থি সিন ‍সু হ্য ট্যবলেট, সু হ্য সিয়াং ওয়ান ট্যাবলেট, শেং মাই সান গুঁড়ো, চি পাও তান বড়ি এবং ছি লি সান বা ইয়ুন নান পাও ইয়াও ওষুধ।

 

#চিকিৎসার_খোঁজ

হংকংয়ের শীর্ষ কমিউনিটি হাসপাতাল প্রেশাস ব্লাড হাসপাতাল

প্রেশাস ব্লাড হাসপাতাল হংকংয়ের একটি শীর্ষস্থানীয় কমিউনিটি হাসপাতাল, যেটি পশ্চিম কাউলুনের শাম শুই পো এলাকায় অবস্থিত। কারিতাস পরিচালিত একটি অলাভজনক রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান হাসপাতাল এটি।

প্রেশাস ব্লাড হাসপাতাল তিনটি শাখা নিয়ে গঠিত। এগুলোর মধ্যে প্রথম দুটি ১৯৩৭ ও ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং জর্জ ওয়াশিংটন নামের তৃতীয় শাখাটি ১৯৭৫ সালে গড়ে তোলা হয়েছিল।

জাপান হংকংয়ে আগ্রাসন চালানোর সময় এবং এ অঞ্চলটিকে নিজেদের দখলে রাখার সময় ১৯১৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। হাসপাতালটি ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত কনগ্রেগেশন অব দ্য সিস্টার্স অব দ্য প্রেশাস ব্লাডের প্রশাসনের অধীনে ছিল এবং ওই বছরই কারিতাস গ্রুপ এটা পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। তখন থেকে এটির নামকরণ করা হয় প্রেশাস ব্লাড হাসপাতাল।

হাসপাতালটি ভর্তি ও বহিরাগত রোগীসহ যে কোনও নাগরকিকে উচ্চ-মানের ওয়ান-স্টপ চিকিৎসাসেবা প্রদান করে। এখানকার সেবা বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে জেনারেল মেডিসিন, কার্ডিওলজি, কার্ডিও-থোরাসিক সার্জারি, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও হেপাটোলজি, জিমেকোলজি, ক্যান্সার, সাধারণ শল্য চিকিৎসা, সংক্রামক রোগ, অভ্যন্তরীণ ওষুধ, নিউরোলজি, নিউরোসার্জারি, চক্ষুরোগবিদ্যা, অর্থোপেডিকস, নাক-কান-গলা রোগ, পেডিয়াট্রিক্স, মনোরোগবিদ্যা, শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ইউরোলজি, রক্তনালীর শল্যচিকিৎসা, শিরোপ্যাকটিক সেবা, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ। পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা, ল্যাবরেটরি পরীক্ষা ও ডায়াগনস্টিক ইমেজিং সুবিধা। এছাড়া এখানে পরিচালিত হয় একটি সাধারণ বহিরাগত রোগীদের ক্লিনিক ও টিকাদান কার্যক্রম।

হংকং প্রাইভেট হসপিটালস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এই হাসপাতালটি যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা অ্যাক্রেডিটেশন সংস্থা ‘কিউএইচএ ট্রেন্ট অ্যাক্রিডিটেশন’ থেকে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। এ স্বীকৃতির অর্থ হলো আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় এখানে।

 

#ভেষজের গুণ

অসীম গুণ তোকমাদানার

চিরাচরিত চীনা ওষুধ বা টিসিএমসহ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ওষুধে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তোকমাদানা বা ব্যাসল সিড ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ওষুধের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পানীয় ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্যেও এটা ব্যবহার করা হয়। তোকমাদানায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন, ফাইফার ও শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালোরি। জানিয়ে দিচ্ছি তোকমাদানার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা সম্পর্কে:

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: তোকমাদানায় রয়েছে উচ্চমাত্রার ফ্ল্যাভনয়েড ও ফেনোলিক উপাদান। একইসাথে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান থাকার ফলে তোকমা গ্রহণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

পরিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে: তোকমাতে থাকা প্রচুর পরিমাণে আঁশ খাদ্যকে দ্রুত পরিপাকে সাহায্য করে। এর ফলে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, ডায়রিয়া ও আমাশয়ের মতো পেটের সমস্যায় সারে।

ওজন কমায়: প্রোটিন, আঁশ, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে তোকমাদানায়। এটা গ্রহণ করলে ক্ষুধাভাব কমে যায় অনেকটা, যার ফলে আহার নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং ওজনে নিয়ন্ত্রণ আসে।

ঠাণ্ডা-কাশি দূর করে: তোকমা বীজে থাকে অ্যান্টি-স্পাজমোডিক (Anti-spasmodic) উপাদান, যা সাধারণ ঠাণ্ডা-কাশি থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্টের মতো গুরুত্বর সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে কার্যকরী। এছাড়া, এতে থাকা অ্যান্টি-ফাইরেটিক (Antipyretic) উপাদান জ্বর কমাতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: তোকমাতে রয়েছে লাইনলিক অ্যাসিড ও ফ্যাটি অ্যাসিডসহ নানা কেমোপ্রিভেন্টিভ উপাদান, যা টিউমার তথা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। ইঁদুরদের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, তোকমা টিউমারের বৃদ্ধির গতি কমে যায় অনেকখানি।

প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে: তোকমা বীজে থাকা প্রদাহ-বিরোধী উপাদানগুলো যেকোন ধরনের প্রদাহ কমাতে কাজ করে। শরীর কোনও অংশ ফুলে গেলে বা ব্যথাভাব দেখা দিলে তা উপশমে এটা ভাল কাজ করে।

হৃদযন্ত্রের সমস্যা কমায়: তোকমাতে থাকা অ্যান্টি-হাইপারলিপিডেমিক উপাদান কোলেস্টেরলের সমস্যা কমায়, যার ফলে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে।

 

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।